Advertisement
E-Paper

ঘোষণা নেই, তবে ‘বহিরাগত’ এবং ‘দলতন্ত্র’ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ শুভেন্দুর

তাঁর কথায়, ‘‘সতীশ সামন্ত কখনও জওহরলাল নেহরুকে বহিরাগত ভাবতেন না। আর পণ্ডিত নেহরু-ও সতীশবাবুকে হিন্দি ভাষী ভাবতেন না...।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:১৫
মঙ্গলবার প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচিতে শুভেন্দু। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

মঙ্গলবার প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচিতে শুভেন্দু। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

সরাসরি দলত্যাগ বা বিধায়ক পদ ত্যাগের কোনও ঘোষণা করলেন না। তবে হলদিয়ার সভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী বুঝিয়ে দিলেন, তিনি আগামিদিনে কোন পথে চলেছেন। হলদিয়ার ‘অরাজনৈতিক সভা’ থেকে পরোক্ষে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব এবং ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করলেন তিনি। মঙ্গলবার প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেখানেই তিনি সরাসরি নাম না করে তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ তত্ত্বকে আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘জওহরলাল নেহরু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সতীশ সামন্তকে সব সময় সমীহ করে চলতেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভারত থেকে যে সব প্রতিনিধি দল গিয়েছিল, সে দলে সতীশ বাবু প্রতিনিধিত্ব করতেন। সতীশ বাবু এগিয়ে গেলেই প্রধানমন্ত্রী উঠে দাঁড়াতেন। সতীশবাবু কখনও জওহরলাল নেহরুকে বহিরাগত ভাবতেন না। আর পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু কখনওই সতীশবাবুকে কখনও হিন্দিভাষী ভাবতেন না। এটাই ভারতবর্ষ।”

শুভেন্দু আরও বলেন, “রাজনৈতিক পথ, মত যা-ই ঘটুক না কেন, যা-ই স্থিতাবস্থা থাকুক না কেন, যে পদে আমরা থাকি না কেন, আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়, আমরা প্রথম ভারতীয়, তার পরে আমরা বাঙালি।”

পাশাপাশিই, দলতন্ত্র নিয়েও রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘আমরা দেশমাতৃকাকে বন্দন করব। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করব, কৃষকের অধিকার ফেরাব আর মিলেমিশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই হবে আমাদের একমাত্র পথ। গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইয়ে আপনাদের সেবক শুভেন্দু অধিকারী থাকবে।’’ তার পরেই ‘দলতন্ত্র’-কে কটাক্ষ করে তাঁর আরও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, ‘‘কেন এখানে ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, অব দ্য পার্টি ব্যবস্থা থাকবে! আমরা ভাল কাজের জন্য লড়ব। সংবিধান যে বলে গিয়েছে, গণতন্ত্র ফর দ্য পিপ্‌ল, বাই দ্য পিপ্‌ল, অব দ্য পিপ্‌ল, সেটা পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতে হবে।’’ প্রায় একনিঃশ্বাসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যাঁরা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন, শুনে রাখুন, আমি অনেক লড়াইয়ের সাক্ষী। এই জায়গায় পৌঁছতে আমায় বাধা দেওয়া হয়েছে। এর আগে আমার উপর ১১বার আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু জনশক্তি, যুবশক্তি, মাতৃশক্তির আশীর্বাদ আমায় ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।’’

 

জন্মদিনে রাজনৈতিক জীবনের মতো নিজের ব্যক্তিজীবন নিয়েও মুখ খুলেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘অনেক বলেন, কেন আমি অকৃতদার। বর্তমান যুগের রাজনীতিকদের দেখে আমি অকৃতদার হইনি। সতীশ সামন্ত, সুশীল ধাড়ার মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেখে অকৃতদার হয়েছি। শুভেন্দুর পরিবার বাংলা, বাঙালির পরিবার। চার-পাঁচজনের পরিবার নয়। সতীশ সামন্ত যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথেই শুভেন্দু হাঁটবে। আগামিদিনে গ্রাম জিতবে। জেলা জিতবে।’’

আরও পড়ুন: লম্বা ইনিংসের প্রস্তুতি, বড়দিনের আগেই রাজ্য জুড়ে জাঁকিয়ে শীত

নন্দীগ্রামের আন্দোলন নিয়েও নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে বিঁধেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলন ছিল মানুষের আন্দোলন। মানুষই সেই আন্দোলনে জয়ী হয়েছে।’’ অর্থাৎ, তৃণমূলের নেতানেত্রীরা যে ভাবে মমতাকেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ‘কৃতিত্ব’ দিয়ে থাকেন, সেই দাবিকেই নস্যাৎ করলেন শুভেন্দু।

নাম না করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূলের শীর্ষনেতাকেও রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘অনেকে বলেছিলেন, আমি মন্ত্রী আছি বলে আমার সভায় লোক আসে। শুভেন্দু অধিকা্রী পদের লোভ করে না। ২৭ নভেম্বর আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়েছি। তা-ও মানুষ আমার সভায় এসেছেন। আসছেন। আমার এই সভার লোক বিজেপি আনেনি, সিপিএম আনেনি, কংগ্রেস আনেনি, তৃণমূলও আনেনি।’’

তার পরেই তৃণমূলের এই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি ব্যক্তি আক্রমণ করি না। কিন্তু আমার নামে অনেকে অনেক কিছু বলেছেন। ব্যক্তি আক্রমণ করেছেন। তাঁরা অনেক বড় বড় পদে আছেন। তাঁরা জেনে রাখুন, জনগণ যখন চটঘেরা জায়গাটায় গিয়ে আঙুলটা টিপবে, তখন আপনাদের অবস্থাও অনিল বসু, লক্ষ্ণণ শেঠ আর বিনয় কোঙারদের মতো হবে!’’

মঙ্গলবারের এই ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বক্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতিতে ওয়াকিবহালরা দাবি করছেন, শুভেন্দুর বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাঁদের দাবি, চলতি সপ্তাহেই বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। যদিও শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে সে বিষয়ে পাকাপাকি কিছু জানানো হয়নি।

Suvendu Adhikari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy