Advertisement
E-Paper

সুদীপ জামিন পেলেন, তাপস এখনও আঁধারেই

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চার দিন আগে একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। আর এক তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। দলীয় বা সংসদীয় পদমর্যাদায় সুদীপের ধারে কাছে না হলেও, বহু কাল ধরে ধারাবাহিক ভাবে জনপ্রতিনিধির আসনে থেকে গেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৭ ১৬:২৪
ফাইল চি্ত্র।

ফাইল চি্ত্র।

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চার দিন আগে একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। আর এক তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। দলীয় বা সংসদীয় পদমর্যাদায় সুদীপের ধারে কাছে না হলেও, বহু কাল ধরে ধারাবাহিক ভাবে জনপ্রতিনিধির আসনে থেকে গেছেন। কিন্তু আজ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ওড়িশা হাইকোর্টে জামিন পেয়ে মুক্তির অপেক্ষায় হাসপাতালে বসে, তখন সেই হাসপাতালেরই আর এক কেবিনে তাপস পাল কি নতুন করে হতাশায় পড়লেন? এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।

হতাশ হওয়ার মতো কারণ তাপসের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ঘটেছে। তাঁর দলের দিক থেকেই।

গত বছর ৩০ ডিসেম্বর, রোজভ্যালি মামলায় তাপস পালকে গ্রেফতার করে পর দিনই তাঁকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যায় সিবিআই। তাঁর গ্রেফতারির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশও করেন দলনেত্রী মমতা। কিন্তু পরবর্তীতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে যে ভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দল, তাপসের ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। সুদীপের মতো তাপসও অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি। তৃণমূলের অন্দরের খবর, তাপসের অসুস্থতা সুদীপের তুলনায় বেশি বই কম নয়। অথচ সুদীপের অসুস্থতা নিয়ে দল বা দলনেত্রী যে ভাবে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যে ভাবে নিয়ে এসেছেন প্রচারে, তাপসের কপালে তা জোটেনি। এমনকী গত মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওড়িশা যাত্রাও ছিল ‘সুদীপদা’কে দেখে আসতেই। ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে সুদীপের কেবিনে আধঘণ্টার মতো ছিলেন তিনি। একই হাসপাতালে অন্য কেবিনে শুয়ে থাকা তাপস পাল সে দিন নেত্রীকে কাছে পেয়েছিলেন মিনিট চারেকের জন্য।

আরও পড়ুন...
প্রভাবশালী তত্ত্ব খারিজ, শর্তাধীন জামিন সুদীপের

সংগঠনিক গুরুত্বের দিক থেকে সুদীপ আর তাপসের কোনও তুলনা হয় না ঠিকই। কিন্তু দলীয় সহানুভূতি প্রকাশে কেন এত ফারাক একই মামলায়, প্রায় একই সময়ে, গ্রেফতার হওয়া দুই সাংসদের ক্ষেত্রে? রোজভ্যালি কাণ্ডে দুই নেতার বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর মধ্যেকার গুরুত্বের ফারাকই এর কারণ হতে পারে। এমনিতে রোজভ্যালি বা তার মালিক গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে, সুদীপের তুলনায় তাপসের ঘনিষ্ঠতা অনেক অনেক বেশি ছিল। অভিযোগ বা গুরুতর অভিযোগের সংখ্যাও তাপসের বিরুদ্ধে অনেক বেশি। তার মধ্যে আছে, কোনও কাজ না করে সংস্থার ডিরেক্টর হিসেবে টাকা নিয়ে যাওয়া; স্ত্রী এবং মেয়েকে অন্যায্য সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার মতো সব অভিযোগ। সিবিআই সূত্রে খবর, তাপস পাল এমন অনেক ‘কাঁচা কাজ’ করে রেখেছেন যে, এর থেকে সহজে মুক্তি মেলা মুশকিল। সংস্থার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি বেতন নিতে শুরু করে দেন, এমন নথিও নাকি সিবিআই-এর হাতে আছে। এমনকী রোজভ্যালি বোর্ডের রেজোলিউশন ছাড়াই কীভাবে তিনি সংস্থার ডিরেক্টর পদে বসে গিয়েছিলেন সে প্রশ্নও উঠেছে। সমভবত এই সব কারণেই, তৃণমূল কংগ্রেস দল বা দলনেত্রী যে ভাবে প্রকাশ্যে সুদীপের পাশে থেকে মুখ খুলছেন, তাপসের ক্ষেত্রে তা করছেন না! সতর্ক থাকছেন তাপসকে নিয়ে কিছু বলতে।


সিবিআই দফতরে তাপস পাল। —ফাইল চিত্র।

তবে সুদীপ বন্ধ্যোপাধ্যায়ের জামিন পেয়ে যাওয়াটা কি তাপস পালের জামিনের যুক্তিকে শক্তিশালী করবে? তাপসের আইনজীবী নিশ্চয় সুদীপের জামিনকে, তাঁর মক্কেলের জামিনের পক্ষে সওয়ালে বড় হাতিয়ার করবেন। তবে কত দিন সে সুযোগ থাকবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিগ্ধ। কেননা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়াকে একেবারেই হজম করতে পারছে না সিবিআই। তাদের বক্তব্য, তদন্ত এবং মামলার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে ‘প্রভাবশালী’ সুদীপের জামিনে মুক্তি পাওয়াটা খুবই ক্ষতিকর। যত দ্রুত সম্ভব সুপ্রিম কোর্টে এই জামিন খারিজের আবেদন করার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। সিবিআই-এর আশা, সুপ্রিম কোর্টে সুদীপের জামিন খারিজের সম্ভাবনা যথেষ্ট। তাই যদি হয়, তবে তাপসের এই সামান্য আশার আলোটুকুও হারিয়ে যাবে আবার।

আইন মহলের একটা অংশ অবশ্য সুদীপ-তাপসদের দীর্ঘ দিন জামিন না পাওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখেন না। তাঁদের মতে, যদি না অভিযুক্তের বাইরে থাকাটা অন্য কারও পক্ষে বিপজ্জনক হয়, তা হলে যে কোনও মামলাতেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হওয়ার পর জামিন দেওয়াটা অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত। ভবিষ্যতে অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলেও, অভিযুক্তের জেল খেটে ফেলা সময়কে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাই অভিযোগ প্রমাণের আগে দীর্ঘ দিন জেল হেফাজতে ফেলে না রাখা বন্দির মানবাধিকার রক্ষার জন্যই প্রয়োজন।

Tapas Pal Sudip Bandyopadhyay Rose Valley TMC Odisha High Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy