Advertisement
E-Paper

যুবক ‘খুনে’ ধৃত সেই যুবতী

মাঝে কয়েকটা ঘণ্টা। তার মধ্যেই ‘আত্মহত্যা’ হয়ে গেল ‘খুন’! শুধু তাই নয়, মেদিনীপুরের যে বাড়িতে বোলপুরের যুবক চৌধুরী হাসানুজের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেই বাড়ির যুবতীকে খুনের অভিযোগে (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা) গ্রেফতারও করল পুলিশ।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০২
উঠোনে পড়ে হাসানুজের দেহ।ফাইল চিত্র।

উঠোনে পড়ে হাসানুজের দেহ।ফাইল চিত্র।

মাঝে কয়েকটা ঘণ্টা। তার মধ্যেই ‘আত্মহত্যা’ হয়ে গেল ‘খুন’! শুধু তাই নয়, মেদিনীপুরের যে বাড়িতে বোলপুরের যুবক চৌধুরী হাসানুজের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেই বাড়ির যুবতীকে খুনের অভিযোগে (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা) গ্রেফতারও করল পুলিশ।

রবিবার দুপুরে মেদিনীপুর শহরে ওই যুবতীর বাড়ি থেকে হাসানুজের দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশের দাবি ছিল, এটি আত্মহত্যা। যুবতীর সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরায় হাসানুজ পিস্তল থেকে নিজের মাথায় গুলি করেছেন বলে জানিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু রবিবার রাতে বোলপুর থেকে মেদিনীপুরে এসে হাসানুজের বাবা চৌধুরী জাকির হোসেন কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করেন, ওই যুবতী, তাঁর মা এবং আরও অনেকে মিলে তাঁর ছেলেকে খুন করেছেন। এরপর রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই যুবতীকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসা হয়। খুনের মামলা রুজু করে সোমবার সকালে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ধৃতকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করে দু’দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। যুবতীর মা-কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এই গ্রেফতার।” এ দিন আদালতে সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিবও জানান, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া জরুরি। যদিও আইনজীবীদেরই একাংশের প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাও তো রুজু করা যেত? তা ছাড়া, হাসানুজের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। তা সত্ত্বেও অভিযুক্ত যুবতীকে রাতে তড়িঘড়ি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনাতেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ। এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘মহিলাদের রাতে থানায় আনার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিধি-নিষেধ রয়েছে।’’ পুলিশের অবশ্য দাবি, নিয়ম মেনেই মহিলা পুলিশ দিয়ে অভিযুক্তকে রাতে থানায় আনা হয়েছে। আর গ্রেফতার করা হয়েছে সকালে। অনিয়ম হয়নি।

মেদিনীপুরের প্রবীণ আইনজীবী, বার অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য মৃণাল চৌধুরী অবশ্য তড়িঘড়ি এই গ্রেফতারি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই যুবতী সরকারি চাকরি করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সামাজিক সম্মান জড়িয়ে রয়েছে। তাই পুলিশের উচিত ছিল সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘সম্পর্ক ভেঙে বেরোনোর অধিকার সকলের রয়েছে। অন্য জন মরে গেলে, কেউ খুনি হয় না।’’

মৃণাল চৌধুরী, মেদিনীপুর আদালতের আইনজীবী।

এটা আদৌ খুন কি না, হলে ওই যুবতী তাতে জড়িত কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পুলিশের মধ্যেও। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শচীন মক্কর বলেন, “এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে ওই যুবতী পুলিশের কাছে কিছু তথ্য গোপন করেছেন। নিজের মোবাইলের সিমকার্ডও ভেঙে দিয়েছেন।” তদন্তকারীদের আরও ব্যাখ্যা, নিহতের বাবা খুনের অভিযোগ দায়ের করায় ৩০২ ধারাতেই মামলা করতে হত। তা ছাড়া, হাসানুজের মৃত্যুর সময়ে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন শুধু ওই যুবতী। তাঁর মা ব্যস্ত ছিলেন রান্নাঘরে। ফলে, শুধু যুবতীর কথায় বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। তাছাড়া, ঘটনাস্থলে পাওয়া পিস্তলটিও ছিল হাসানুজের বাঁ হাতের নীচে। হাসানুজ বাঁহাতি নন। ফলে, কী করে তিনি বাঁ হাতে গুলি চালালেন, সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

আরও পড়ুন: ভারতের প্রবল চাপেই বন্দি হাফিজ: বিস্ফোরক দাবি জঙ্গি নেতার ভাইয়ের

যদিও পুলিশের এক সূত্রেরই ব্যাখ্যা, পিস্তল বাঁ হাতের নীচে পড়েছিল বলেই যে অন্য কেউ গুলি চালিয়েছে, এটা নাও হতে পারে। হতে পারে হাসানুজু বাঁ হাতে পিস্তল ধরে গুলি চালিয়েছেন। হতে পারে গুলি চালানোর পরে পিস্তল মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। পরে ওই যুবক গিয়ে পিস্তলের উপর পড়েছেন।

হাসানুজের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ থেকে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল আদালতের কর্মী মেদিনীপুরের ওই যুবতীর। তবে মাস খানেক হল যুবতীটি আর হাসানুজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাইছিলেন না। বিএড পড়ুয়া হাসানুজ শিয়ালদহের কাছে এক হস্টেলে থাকতেন। রবিবার সকালে সেখান থেকেই তিনি মেদিনীপুরে চলে আসেন। আর তারপরই হাসানুজের গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে যুবতীর বাড়ির উঠোনে। হাসানুজের বাবা চৌধুরী জাকির হোসেন বলেন, “আমার ছেলেকে চক্রান্ত করে মারা হয়েছে। পুলিশকেও সেটাই জানিয়েছি।” রবিবার রাতে মেদিনীপুরে এসে ছেলের দেহ শনাক্ত করেন তিনি।

ওই যুবতীর পরিজনেরা এ দিনও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে প্রতিবেশীরা বলছিলেন, ‘‘পিতৃহীন মেয়েটাকে এ ভাবে জেলে যেতে হবে ভাবিনি। ওকে নিরীহ বলেই জানি!’’

Suicide Murder Young Lady
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy