প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও ‘মিডলম্যান’দের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন ও বৈঠকের আগেই বেহালার বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। কোর্টে নথি পেশ করে তেমনই দাবি করেছে সিবিআই। সম্প্রতি বিচারভবনের বিশেষ আদালতে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুজয়, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরুণ হাজরার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। একাধিক সাক্ষীর বয়ানও নথি হিসেবে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে খবর, এক সাক্ষী তার বয়ানে জানিয়েছেন, সম্পর্কে তিনি কুন্তল ঘোষের আত্মীয়। ২০১৬ সাল থেকে তিনি কুন্তলের সঙ্গে কাজ করেন। সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে একাধিক বৈঠকে কুন্তলের সঙ্গে তিনিও ছিলেন। ওই সাক্ষীর বয়ানে দাবি, প্রথম দিকে মূলত শান্তনু বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুজয়ের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু চাকরি বিক্রির টাকার ভাগ নিয়ে দু’জনের ঝামেলা হওয়ায় কুন্তল সরাসরি সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চাকরি বিক্রির খেলা শুরু করেছিলেন। কুন্তলের নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে টেলিভিশন সেটের পিচবোর্ডের বাক্সে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া নগদ টাকা ভরে রাখা হত।
ওই সাক্ষী তার বয়ানে জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের টেট অনুত্তীর্ণ অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা ও নগদ টাকা সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হত। আর সুজয় বৈঠকে জানাতেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই নামের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর 'সাহেব' নিয়োগ দুর্নীতির টাকার ভাগ চাইছেন বলে একাধিকবার উল্লেখ করেছিলেন। ওই সাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী, প্রথম দিকে সুজয়কৃষ্ণ 'সাহেব' বলতেন। কিন্তু পরের বৈঠকগুলিতে সরাসরি জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করতে থাকেন তিনি।
ওই সাক্ষীর দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা এবং মাথা পিছু ৫-৬ লক্ষ টাকা নিয়ে আসার জন্য বৈঠকে কুন্তল ও অন্যদের নির্দেশ দিতে থাকেন সুজয়কৃষ্ণ। ৩০০-৩৫০ অযোগ্য প্রার্থীর নামের তালিকা নিয়ে টাকা জমা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন তিনি। ওই টাকার একটি অংশ এবং নামের তালিকা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও বৈঠকে উল্লেখ করেছিলেন সুজয়।
সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী সোমনাথ সান্যাল অবশ্য এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “মামলা বিচারাধীন। আদালতে নানা নথি জমা পড়েছে। ওই বিষয়ে কোন মন্তব্য করা যাবে না।”
আর তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু আগেই লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, সিবিআই স্পষ্ট কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করতে না পারলেও তাঁর মক্কেলের নাম কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)