Advertisement
E-Paper

এসএসসি: প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগ জালিয়াতি, বলল সুপ্রিম কোর্ট! ‘অযোগ্য এবং যোগ্য’ বাছাই নিয়েও প্রশ্ন

প্যানেল-বহির্ভূত চাকরিকে ‘সম্পূর্ণ জালিয়াতি’ বলে মন্তব্য করে রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের কড়া প্রশ্ন, যোগ্য-অযোগ্যদের বাছাই করা হবে কী উপায়ে? তা আদৌ সম্ভব?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৩৯
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়-সহ তিন বিচারপতির বেঞ্চে এসএসসি মামলা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়-সহ তিন বিচারপতির বেঞ্চে এসএসসি মামলা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সাময়িক স্বস্তি পেলেও এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্যানেল বহির্ভূত চাকরিকে সম্পূর্ণ জালিয়াতি বলে মন্তব্য করে রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, যোগ্য-অযোগ্যদের বাছাই করা হবে কী উপায়ে? তা আদৌ সম্ভব? আর যোগ্য-অযোগ্যদের বাছাই করতে গিয়ে কোনও ভুল হবে না, তারই বা কী নিশ্চয়তা?

গত সোমবার এসএসসি মামলায় ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের ওই রায়ের ফলে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যায়। হাই কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিলের পাশাপাশি যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয়েছে ওই চাকরিপ্রাপকদের। হাই কোর্ট জানায়, এসএসসি দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগগুলি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাবে সিবিআই। প্রয়োজনে তারা সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। অভিযোগ ছিল, অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার জন্য বাড়তি পদ তৈরি করা হয়েছিল এসএসসিতে। সেই পদ তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রিসভা। উচ্চ আদালত তাদের রায়ে জানায়, সিবিআই চাইলে মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।

উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা করে রাজ্য। সেই মামলা উঠেছে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। সোমবার ওই মামলার শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতে বলেন, হাই কোর্ট এমন নির্দেশ দিয়েছে, যা কার্যকর করা সম্ভব নয়। মানবিকতার কারণে ক্যানসার আক্রান্ত এক জনকে চাকরি দিয়ে বাকি সকলের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। পুরো মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ভোটের সময় পুরো মন্ত্রিসভার সদস্যদের তো জেলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্যানেলে নাম নেই, এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়েছে। এটা তো সম্পূর্ণ জালিয়াতি। তাঁর প্রশ্ন, মন্ত্রিসভা যখন জেনেছিল যে, বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, তার পরেও কেন তারা ‘সুপারনিউমেরারি পোস্ট’ (বাড়তি) তৈরি করতে গেল?

ওএমআর শিট নষ্ট হয়ে যাওয়া, মিরর ইমেজ না থাকা, প্যানেলের বাইরে নিয়োগ— এ সব কী করে ঘটল, তা রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ওএমআর শিটই যেখানে নেই, সেখানে কী ভাবে যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই করা হবে? রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য, ‘‘আপনারা চাকরি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন? অথচ কোনও আসল ওএমআর শিটই নেই। কোন তথ্যের ভিত্তিতে যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই করছেন? ২৫ হাজার কিন্তু বিশাল সংখ্যা।’’

প্রধান বিচারপতি জানান, পুরো বিষয়টিই তাঁরা শুনবেন। তবে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের যে নির্দেশ উচ্চ আদালত দিয়েছিল, তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে চাকরিহারাদের আইনজীবী মুকুল রোহতগি চাকরি বাতিলের নির্দেশেও স্থগিতাদেশের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘‘চাকরি বাতিল নিয়েও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। ইতিমধ্যে ভোটের কাজে অনেকে চলে গিয়েছেন। এই অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব নয়।’’ কিন্তু প্রধান বিচারপতি তাতে স্থগিতাদেশ দেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধু মন্ত্রিসভা নিয়ে নির্দেশ দিচ্ছি। মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে এখনই কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না সিবিআই।’’ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy