সিঙ্গুর মামলায় অনিচ্ছুক কৃষকদের জন্য কোনও বাড়তি ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করতে রাজি হল না সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, যাঁরা আগে ক্ষতিপূরণ নেননি তাঁদের আগামী দু’মাসের মধ্যে নিয়ে নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রর মন্তব্য, ‘‘আগে ক্ষতিপূরণ নেননি, সেটা তাঁদের দোষ।’’
৩১ অগস্ট সিঙ্গুরে টাটার ছোট গাড়ি কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি কৃষকদের ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, যাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন তাঁরা জমি ফেরত পাবেন। ক্ষতিপূরণ ফেরাতে হবে না। যে সব অনিচ্ছুক কৃষক ক্ষতিপূরণ নেননি তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন, জমিও পাবেন। এর ফলে ইচ্ছুক ও অনিচ্ছুক কৃষকদের মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা পড়ে। সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে অনিচ্ছুক চাষিদের হয়ে মূল জনস্বার্থ মামলাটি করেন কেদারনাথ যাদব। তাঁর তরফে আইনজীবী শান্তিরঞ্জন দাস যুক্তি দেন, যাঁরা দশ বছর আগে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাঁরা এত দিন সেই অর্থ ভোগ করেছেন। দশ বছর পরে অনিচ্ছুকরা একই অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেলেও টাকার মূল্য এত দিনে কমেছে। অনিচ্ছুক চাষিরা এত দিন জমিতে চাষ করতে পারেননি। তা ছাড়া অনিচ্ছুকদের আইনি লড়াইও লড়তে হয়েছে।
সিঙ্গুর মামলার রায় দিয়েছিল বিচারপতি ভি গোপাল গৌড়া ও বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ। বিচারপতি গোপাল গৌড়া অবসর নিয়েছেন। আজ তাই বিচারপতি জে এস খেহর, বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি এ এন খানউইলকরকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে এই শুনানি হয়েছে। বিচারপতি মিশ্র সাফ জানান, ‘‘মূল রায়ে কোনও বদল হবে না। কখনও এই রায় সংশোধন করা হবে না।’’ অনিচ্ছুক কৃষকরা কম ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন বলে যুক্তি দেওয়ায় বিচারপতি মিশ্র জানিয়ে দেন, আগে ক্ষতিপূরণ নিয়ে না থাকলে, সেটা তাঁদের দোষ।
আইনজীবী যুক্তি দেন সিঙ্গুরের প্রকল্পের জমির মধ্যে প্রায় ১০০ একর এলাকায় কংক্রিটের নির্মাণ রয়েছে, কারখানার শেড হয়েছে, রাস্তা হয়েছে। সেখানে আর চাষ করা অসম্ভব। ওই সব জমির আসল মালিকদের বিকল্প জমি দেওয়া হোক। আদালত তাতেও কান দিতে চায়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার জমি ফেরত ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার জন্য বিচারপতিদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। এই আর্জি শুনে বিচারপতি জে এস খেহর নির্দেশ দেন, আগামী দু’মাসের মধ্যে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
৩১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ১২ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের জমি ফেরাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে গিয়ে কৃষকদের জমির পরচা দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়াও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক সব কৃষককেই ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা চাষের সরঞ্জাম কিনে চাষ শুরু করতে পারেন। যত দিন না জমি চাষযোগ্য যাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত ২ টাকা কিলো দরে চাল এবং মাসিক ভাতা দেওয়া চলবে। আদালতের নির্দেশ পালনের রিপোর্টও সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য। আজ শুনানির সময় রাজ্যের আইনজীবীরা থাকলেও তাঁদের মুখ খুলতে হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy