কেউ ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ নন বলে দাবি করলে এবং তার সপক্ষে প্রমাণ দেখাতে পারলে, তা বিবেচনা করতে হবে কলকাতা হাই কোর্টকে। সোমবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নিয়োগ সংক্রান্ত এক মামলা খারিজ করে এমনটাই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, হাই কোর্টই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে।
২০১৬ সালের নিয়োগের প্রক্রিয়ায় সোনালি দাস নামে এক চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ৯৫২ জনের ওএমআর শিট উদ্ধার করে। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ওএমআর শিটগুলি থেকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এসএসসি সেই তালিকা প্রকাশও করে। ওই তালিকায় নাম রয়েছে মামলাকারীর। তাঁর দাবি, পরীক্ষার সময়ে তাঁকে ‘অ্যানসার কি’ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, তিনি সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরে তাঁকে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়। আরও পরে চাকরি পান তিনি। কিন্তু এখন এসএসসি প্রকাশিত ৯৫২ জনের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। এটি কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সোনালি।
২০২৩ সালে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে মামলা করেন তিনি। মামলাকারীর দাবি, তিনি ‘যোগ্য’ প্রার্থী। সেই মামলাটি কলকাতা হাই কোর্টে এখনও বিচারাধীন। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়ে যায়। যাঁরা ‘দাগি অযোগ্য’ তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরীক্ষাতেও বসতে পারবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকায় পড়ে গিয়েছেন সোনালিও। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চে সোনালির দাবি, তিনি ‘যোগ্য’। এসএসসির ভুলের জন্যই বর্তমানে তিনি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসতে পারছেন না বলে আদালতে জানান তিনি। তাই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশের আর্জি জানান মামলাকারী। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাতে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্যও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান সোনালি। তবে তাঁর মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সঙ্গে শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হাই কোর্টই।
সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, কোনও চাকরিপ্রার্থী যদি মনে করেন তিনি ‘দাগি অযোগ্য’ নন এবং এর সপক্ষে তিনি উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেন, তবে তা হাই কোর্টকে বিবেচনা করতে হবে। আদালতের আরও মন্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলে দেয়নি যে হাই কোর্ট এ বিষয়ে মামলা শুনতে পারবে না। তা হলে এত দিন ধরে কেন বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন শীর্ষ আদালতের। হাই কোর্টে মামলাটি দ্রুত শুনানির জন্যও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। বস্তুত, এই মামলাটি প্রথমে হাই কোর্টের বিচারপতি বসুর বেঞ্চে বিচারাধীন ছিল। পরে মামলাটি যায় বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের এজলাসে। তবে এই মামলাটি আগে বিচারপতি বসুর বেঞ্চে শুনানি হয়েছিল বলে সেটি আবার বিচারপতি বসুর বেঞ্চেই পাঠিয়ে দেন বিচারপতি ভট্টাচার্য।