Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কথা শুরুর ইঙ্গিত, জল গড়াচ্ছে তিস্তায়

ফের জল গড়ানো শুরু হল।বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রায় এক বছর পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরজায় ফের কড়া নাড়তে যাচ্ছে কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৯:২২
Share: Save:

ফের জল গড়ানো শুরু হল।

বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রায় এক বছর পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরজায় ফের কড়া নাড়তে যাচ্ছে কেন্দ্র। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আজ জানিয়েছেন, নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে প্রায় এক বছর মমতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বহু প্রতীক্ষিত এই চুক্তিটি শীঘ্রই সেরে ফেলা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।

গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে দু’দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরে সাক্ষী হয়েছিলেন মমতা। সেই সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার বাংলাদেশের বিরোধী নয়। তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে দু’দেশের চুক্তির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, রাজ্যের স্বার্থ বিবেচনা করে তবেই এ ব্যাপারে এগোনো হবে। আজ তিস্তা চুক্তি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ খুলেছেন সুষমা স্বরাজ। বিদেশমন্ত্রীর কথায়, ‘‘তিস্তা নিয়ে তিন পক্ষের মতামত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হওয়াটা জরুরি। তিনটি পক্ষ হল— বাংলাদেশ, ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন থাকায় দীর্ঘদিন মমতার সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলা যায়নি।’’ সেই ব্যস্ততা মিটে যাওয়ার পরে ফের কথা শুরু করা হচ্ছে বলে জানান সুষমা। বলেন, ‘‘ভোটে জয়লাভ করে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। তিনি নিজেও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। তা ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার সম্পর্কও খুব ভাল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও উনি হাসিনাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।’’ সেই জন্যই তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী। সুষমা জানিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে তিস্তা নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করার জন্য এটাই সব চেয়ে ভাল সময়।

সংসদের বাদল অধিবেশন চলাকালীন বা তার আগেই দিল্লি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর এই প্রথম বার তিনি বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই উঠবে। তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির তিনি যে বিরোধী নন, সে কথা আগেই চিঠি দিয়ে মোদীকে জানিয়েছিলেন মমতা। সেই সঙ্গে কিছু সমাধান সূত্রের কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। আলোচনা হবে সেগুলির বাস্তব দিকগুলি নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষবাস তিস্তার জলের উপর নির্ভরশীল। অথচ তিস্তার জলের একটা বড় অংশ আগেই টেনে নেয় সিকিম। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গে পৃথক জলাধার তৈরি করার প্রস্তাবও মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন।

মনমোহন সিংহের জমানায় তিস্তা নিয়ে যে সমাধান সূত্রটি তৈরি হয়, তাতে বলা হয়েছিল— শুখা মরসুমে নদীতে যতটা জল থাকবে, তা সমান ভাগে ভাগাভাগি হবে দুই দেশে। যার মধ্যে আবার প্রত্যেক দেশের প্রাপ্য অংশ থেকে চার ভাগের এক ভাগ জল বরাদ্দ করা হবে নদীখাতে নাব্যতা বজায় রাখতে চার্জিং-এর জন্য। তখন মমতা এই প্রস্তাবে রাজি হননি। তাঁর যুক্তি ছিল শুখা মরসুমে তিস্তায় কার্যত জল থাকেই না। আর বর্ষার সময় বাংলাদেশ জল পায় প্রকৃতির নিয়মেই। তাই সমস্যাটা মূলত শুখা মরসুমেই। কেন্দ্রের তরফ থেকে মমতাকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, তিস্তা চুক্তি করা গেলে ওই নদী সংস্কার এবং জল সরবরাহের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে বিপুল ঋণ পাওয়া যাবে। তার ফলে এখন তিস্তা প্রকল্পে উত্তরবঙ্গের যে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে জল যায়, ভবিষ্যতে তার পরিমাণ ৯ লাখ হেক্টরে দাঁড়াবে।

মমতা নিজে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন— ইউপিএ জমানায় রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই যে ভাবে চুক্তিটি করার চেষ্টা হচ্ছিল, তাতে এ পার বাংলার কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। তাঁর বক্তব্য, তিস্তার জলের ভাগ কী হবে, আলোচনার মাধ্যমেই সেটা ঠিক হওয়া উচিত।

প্রায় এক বছর পর কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সেই আলোচনাই ফের শুরু হতে চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE