আরও পড়ুন: রাতভর আলোচনার পর শোভন-বৈশাখী নিয়ে ফের তাল কাটল সকালের এক ফোনে
শুভেন্দু কোন কোন অসুবিধার কথা বলেছেন, তা সৌগত বিশদে জানাতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আলোচনা চলছে। এখনই সব বাইরে বলা ঠিক হবে না। আমার যা বলার, দলনেত্রীকে বলেছি। পরেও বলব।’’ তবে তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্রে যা শোনা যাচ্ছে, তার মূল কথা— দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে শুভেন্দুর কোনও অনুযোগ বা ক্ষোভ নেই। তাঁর ক্ষোভ দ্বিতীয় সারির নেতাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে। তাঁরা তাঁর কাজে ‘অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ’ করছেনবলে এই তরুণ নেতা মনে করছেন।
তাঁর দল ছাড়া ইত্যাদি নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে জল্পনার মধ্যেই শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে সফল হতে গেলে ঝুঁকি নিতে হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঝুঁকি নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল গড়েছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। শুভেন্দুর এখন বয়স কম। ও চাইলে এখন ঝুঁকি নিতেই পারে। কিন্তু সেটা সবদিক ভেবেচিন্তে নিতে হবে।’’
আরও পড়ুন: কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনায় মোদী, কোভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু ওড়িশায়
তৃণমূলের একাধিক নেতা দাবি করছেন, আলোচনায় শুভেন্দু একাধিক ‘শর্ত’ দিয়েছেন। যার কোনওটিরই আনুষ্ঠানিক স্তরে সমর্থন কোনও তরফেইমেলেনি। শুভেন্দু যেমন তাঁর অবস্থান এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা জিইয়ে রেখেছেন, তেমনই তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বও এ নিয়ে বিশেষ মুখ খুলছেন না। যদিও বিচ্ছিন্ন ভাবে অখিল গিরি বা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতা তাঁকে রাজনৈতিক আক্রমণ করছেন। যার ফলে ‘সমঝোতা প্রক্রিয়া’ ব্যাহত হতে পারে বলে দলের একাংশের আশঙ্কা। শুভেন্দু আলোচনায় যে সমস্ত ‘শর্ত’ দিয়েছেন বলে তৃণমূলের নেতাদের একাংশ তাঁদের ঘনিষ্ঠমহলে দাবি করছেন, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল, ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর বা তাঁর টিমের তরফে শুভেন্দুকে কোনও নির্দেশ দেওয়া চলবে না। দ্বিতীয়, দলের তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যুব তৃণমূল ছাড়া আর কোনও দায়িত্বে রাখা চলবে না। তৃতীয়, তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরে বিধানসভা ভোটে যেতে হবে। চতুর্থ, রাজ্যের যে সমস্ত জেলায় তিনি ‘পর্যবেক্ষক’ ছিলেন, সেই জেলাগুলির দায়িত্ব তাঁকে দিতে হবে। যদিও এর মধ্যে পর্যবেক্ষক সংক্রান্ত দাবিটি ছাড়া কোনও দাবিরই সত্যতা কোনও তরফেই মেলেনি। তবে এরই পাশাপাশি আরও দু’টি দাবির কথা তৃণমূলের বিভিন্ন স্তর থেকে বলা হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হল, বিধানসভা ভোটে রাজ্যের ৬৫টি আসনের প্রার্থী ঠিক করার দায়িত্ব শুভেন্দুকে দিতে হবে। আর দ্বিতীয়টি আরও চমকপ্রদ— মমতার বদলে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে নির্বাচনে যেতে হবে। শেষোক্ত বিষয়টি তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা দলের বিভিন্ন স্তরে ইতিমধ্যেই বলেছেন এবং বলছেন। যদিও বাকি অধিকাংশ নেতা বলেছেন, শুভেন্দু এমন কোনও দাবি করেছেন, এটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি এমন দাবি করেননি। করতে পারেনই না!
এক তৃণমূল সাংসদের কথায়, ‘‘শুভেন্দু কি উন্মাদ, যে এমন একটা অসম্ভব দাবি করবে! এটা কিন্তু একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। মমতাদির ত্যাগের সঙ্গে কি অন্য কারও ত্যাগের তুলনা হয়? সকলেই নিজের নিজের মতো করে ত্যাগ করেছে। নিজের নিজের ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু মমতাদির সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। সেটি নিশ্চিত ভাবে শুভেন্দুও জানে। এমন একটা অবাস্তব দাবি ও কখনও করতে পারে না!’’
প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহল থেকেও এই বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি যে কাজে ‘স্বাধীনতা’ পাচ্ছেন না, সেটি তাঁর ঘনিষ্ঠরা গোপন করেননি।