Advertisement
E-Paper

লড়বেন না সোহরাব, তবু অস্বস্তি তৃণমূলে

চাপের মুখে তাঁর মনেনায়ন প্রত্যাহার করানো হল ঠিকই। কিন্তু সেই ওয়ার্ডেই নির্দল প্রার্থী তাঁর স্ত্রীকে সমর্থন জানাতে বাধ্য হল তৃণমূল। সরে গিয়েও আসানসোলে পুরভোটের ময়দানে থেকে গেলেন চুরির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি। শাসক দলেরই একাংশ যে ঘটনাকে বলছেন, সোহরাবের কাছে দলের ‘আত্মসমর্পণ’!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:০৬
মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরে সোহরাব আলি। — নিজস্ব চিত্র।

মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরে সোহরাব আলি। — নিজস্ব চিত্র।

চাপের মুখে তাঁর মনেনায়ন প্রত্যাহার করানো হল ঠিকই। কিন্তু সেই ওয়ার্ডেই নির্দল প্রার্থী তাঁর স্ত্রীকে সমর্থন জানাতে বাধ্য হল তৃণমূল। সরে গিয়েও আসানসোলে পুরভোটের ময়দানে থেকে গেলেন চুরির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি। শাসক দলেরই একাংশ যে ঘটনাকে বলছেন, সোহরাবের কাছে দলের ‘আত্মসমর্পণ’!

রেলের লোহাচুরিতে অভিযুক্ত সোহরাবকে আসানসোল পুরভোটে দাঁড় করালে যে আখেরে দলের মুখ পুড়বে, তা দু’দিন আগে থেকেই বলে আসছিলেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। কিন্তু সোহরাবের চাপের মুখে কার্যত নতিস্বীকার করে তাঁকে টিকিট দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়ে দল এবং দলের বাইরে হইচই হওয়ার পরে দফায় দফায় তাঁকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন তোলাতে হল। এই রকম পরিস্থিতি যে আসতে পারে, তা আঁচ করেই আসানসোলের ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে সোহরাবের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী নার্গিস বানোকে ‘নির্দল প্রার্থী’ হিসাবে মনোনয়ন দেওয়ানো হয়েছিল। সোহরাব মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ বার তাঁকেই সমর্থন দেওয়া হবে বলে তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে। মহকুমাশাসকের দফতর থেকে বেরিয়ে সোহরাব এ দিন বলেন, ‘‘দলের কথা ভেবেই আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। এ বারে আমার স্ত্রীর জন্য প্রচারে নামব।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার সোহরাবের মনোনয়ন জমার খবর প্রকাশ পেতেই শীর্ষ নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েন। কলকাতা থেকে ঘনঘন ফোন আসতে থাকে আসানসোলের দুই নেতা, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং প্রাক্তন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। দলের একটি সূত্রের দাবি, মলয়বাবু প্রথম থেকেই সোহরাবকে টিকিট দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তাপসবাবুই সোহরাবকে দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অনুমতি দেন। সেই মনোনয়ন যে করেই হোক প্রত্যাহার করাতে হবে বলে বারবার নির্দেশ আসতে থাকে। কিন্তু তখনও বেঁকে বসেছিলেন সোহরাব। দলের একটি সূত্রের দাবি, মলয়বাবুর পরামর্শে তাপসবাবু এবং দলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত সোহরাবকে বাগ মানাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সোহরাব প্রশ্ন করতে থাকেন, দল যে তাঁকে দাঁড় করাতে চায় না, তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে আগাম আলোচনা করা হয়নি কেন? শেষমেশ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের বারবার চেষ্টা করে দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ ওই দুই নেতাই সোহরাবকে মহকুমাশাসকের কাছে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করান।

তৃণমূলকে যে এই অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, তা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। বিশ বছর আগে রেলের যন্ত্রাংশ চুরির মামলায় ইতিমধ্যেই সোহরাবকে দু’বছর কারাদণ্ড দিয়েছে নিম্ন আদালত। উচ্চ আদালতে গিয়ে তিনি সাজার উপরে স্থগিতাদেশ নিয়ে এলেও দোষ মকুব হয়নি। এই অবস্থায় তাঁকে দাঁড় করানো যে যথেষ্ট ঝুঁকির, তা দলের একাংশ গোড়া থেকেই বলছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়। তাপসবাবু অবশ্য এ নিয়ে একটি কথাও বলতে চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, সোহরাবকে যে প্রতীক দেওয়া যাবে না, সে কথা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের তরফে তাঁকে এক বারও জানানো হয়নি। শিবদাসন বলেন, ‘‘দল সোহরাবকে নাম প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশই তিনি পালন করেছেন।’’ মলয়বাবু বলেন, ‘‘সোহরাব নাম তুলে নিয়ে নিয়েছে। আর বিতর্ক নেই।’’ এত কাণ্ড ঘটল কেন? মন্ত্রীর জবাব, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’’

সোহরাব-কাণ্ডে স্বভাবতই প্রচারের হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বলেছেন, ‘‘সোহরাবের তো বিধায়ক-পদই খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা! তার পরেও তাঁকে নিয়ে এমন ঘটনা তৃণমূলেই সম্ভব! উনি প্রার্থী থাকলে আমাদের দলের তরফে আপত্তি জানানো হতো।’’ কলকাতায় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য সোহরাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দাবি করেছেন, ‘‘বাম জমানার ৩৪ বছরে আমাদের সবাইকেই কিছু না কিছু মামলায় জড়ানো হয়েছিল। তার মানেই আমরা সবাই অপরাধী হয়ে গেলাম, তা নয়!’’ মামলায় জড়ানো আর দোষী সাব্যস্ত হওয়া যে এক নয়, তা নিয়ে ফিরহাদ মুখ খোলেননি। আর সোহরাব যদি অপরাধী না-ই হবেন, তা হলে কি সরানোই বা হল কেন? এ বারও নিরুত্তর ফিরহাদ। যে নীরবতা অস্বস্তিই জানান দিচ্ছে!

sohrab ali nomination withdrawl asansol municipality election relief tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy