Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিশানা ২০১৬, আবার ব্রিগেডে আসছেন মোদী

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেডে জনসভা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ১৫ মাস আগেই ‘মিশন ১৫১’-র (বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা ছাপিয়ে আরও কয়েকটি বেশি আসন) লক্ষ্যে বিজেপি-র বিউগল সে দিনই বাজানো হতে পারে। দিল্লিতে শনিবার রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন দলের জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাজনাথ সিংহ ও বেঙ্কাইয়া নায়ডু। রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে। ছবি: পিটিআই

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাজনাথ সিংহ ও বেঙ্কাইয়া নায়ডু। রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেডে জনসভা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ১৫ মাস আগেই ‘মিশন ১৫১’-র (বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা ছাপিয়ে আরও কয়েকটি বেশি আসন) লক্ষ্যে বিজেপি-র বিউগল সে দিনই বাজানো হতে পারে। দিল্লিতে শনিবার রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন দলের জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

শুধু তা-ই নয়, অমিত দলীয় নেতাদের জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ড, কাশ্মীরের নির্বাচন মিটলে ডিসেম্বর থেকে প্রতি মাসে অন্তত এক বার কলকাতায় আসতে চান তিনি। পুর নির্বাচনে দল পূর্ণ শক্তিতে লড়াই করলেও বিজেপি-র মূল রণকৌশল যে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকারকে হঠানোর লক্ষ্যেই, রাজ্য নেতাদের কাছে সেটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি। রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি তাঁর পরামর্শ, জেতার সঙ্কল্প নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে তাঁদের। তার জন্য রসদের কোনও অভাব হবে না।

পশ্চিমবঙ্গে এক কোটি সদস্য সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি। সদস্য সংগ্রহ অভিযান কেমন চলছে, তার পর্যালোচনা করতেই সব রাজ্যের নেতাদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। দিনভর সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রধান মহেশ শর্মা দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। রাতে ৭টি রাজ্যের নেতাদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন অমিত। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অসম, ওড়িশা, তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গনা, কেরলের নেতাদের ডেকে নেন তিনি। এ রাজ্য থেকে সেই বৈঠকে ছিলেন সভাপতি রাহুল সিংহ, সংগঠন সম্পাদক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং সহ-সংগঠন সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়।

রাজ্যের পরিস্থিতি সর্ম্পকে খোঁজখবর নিয়ে বিজেপি সভাপতি জানান, বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি অন্তত ১৫ মাস আগেই শুরু করা হবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সেই প্রচার অভিযান শুরু করতে চান। চলতি বছরে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-র ব্রিগেড সভা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন। এ বারও শীতের আমেজ থাকতেই ব্রিগেড সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন অমিত। অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষ হাজির করা যাবে কি না, জানতে চান বিজেপি সভাপতি। রাহুলবাবু তাঁকে জানান, ৩০ নভেম্বরের ‘উত্থান দিবসে’ই অন্তত তিন লক্ষ মানুষ আসবেন। বিজেপি-র ডাকে এখন পাঁচ লক্ষ লোক ব্রিগেডে জড়ো করা খুব মুশকিলের কাজ হবে না বলেই তাঁদের আশা।

বস্তুত, বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে এবং পুরভোটের আগে রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ সংক্রান্ত বার্তা দিতে এবং সগঠনকে আরও চাঙ্গা করতে মোদীই সেরা বাজি বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন। সেই জন্যই মোদীকে রেখে ব্রিগেডের পরিকল্পনা এসেছে অমিতদের। ওই সময়েই ব্রিগেড সমাবেশ করার প্রাথমিক ভাবনা আছে তৃণমূলেরও। আবার রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশ হবে সম্ভবত ৮ মার্চ। ফলে, ফেব্রুয়ারি-মার্চে এ বারও ব্রিগেডে প্রতিযোগিতা চলবে! তবে প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেড নিঃসন্দেহে বাড়তি উৎসাহ তৈরি করবে। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “তৃণমূলকে এখন কোনও ভাবেই স্বস্তির শ্বাস নিতে না দেওয়াই আমাদের দলের নীতি।”

তবে ব্রিগেডের আগেই ৩০ নভেম্বর অমিতের সভা এবং তার পরে ২০ ডিসেম্বর শহিদ মিনার ময়দানে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সমাবেশ দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আরও জাঁকিয়ে বসতে চাইছে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার। রাজ্য নেতৃত্বকে অমিত জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাস থেকে তিনি নিজেই নিয়মিত কলকাতা যেতে শুরু করবেন। প্রতি মাসে অন্তত এক বার রাজ্য বিজেপি-র কর্মসমিতিকে নিয়ে বৈঠকের চেষ্টা করবেন। জেলায় গিয়েও প্রয়োজনে জনসভা করবেন, বিশিষ্ট জনেদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে কলকাতায় এসে সংবাদমাধ্যমের সামনেও মমতার সরকারের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করবেন। সে ক্ষেত্রে সারদা কেলেঙ্কারি, বর্ধমান বিস্ফোরণ এবং তৃণমূলের জামাত-যোগের অভিযোগ, অনুপ্রবেশ, তোষণের রাজনীতি এবং রাজ্যের ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়েই যে বিজেপি রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমণ করবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। শাসক দলের ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে বহু তৃণমূল নেতাই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। যাঁরা আসতে চান, তাঁদের দলে যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে বলেও রাজ্য নেতাদের জানিয়ে দেন অমিত।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ যেমন নিয়মিত কলকাতা গিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, তেমন চলবে। পাশাপাশি বুথ স্তরের সংগঠন গড়ে তোলার জন্য এক জন জাতীয় স্তরের সংগঠন সম্পাদকও এখন থেকে নিয়মিত কলকাতা যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত। সম্প্রতি আরএসএস থেকে বিজেপি-তে আসা শিবপ্রকাশেরই কলকাতায় ঘাঁটি গাড়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিন কেন্দ্রীয় স্তরের নেতারা পশ্চিমবঙ্গে পড়ে থাকবেন। একই ভাবে রাজ্য স্তরের নেতাদের মাসে অন্তত ৭ দিন জেলায় যাওয়ার দাওয়াই দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি।

ভোটের প্রস্তুতি নিতে এখন থেকে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এক জন করে সর্বক্ষণের নেতা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত। ওই নেতাদের যাবতীয় ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় স্তর থেকেই সামলানো হবে। প্রয়োজনে পড়শি রাজ্য থেকেও সর্বক্ষণের বিধানসভা ইন-চার্জদের নিয়োগ করা হতে পারে। প্রতি বুথে ২০ জন যুবক নিয়ে বুথরক্ষা কমিটি গঠন করেই শাসক দলের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হবে বলে বিজেপি ঠিক করেছে। আর সে জন্য আক্রমণাত্মক হয়েই যে তাঁরা মাঠে নামবেন, তার ইঙ্গিত মিলবে ধর্মতলার সভা থেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE