Advertisement
০৫ মে ২০২৪
মহারণ আজ

প্রচারে দহন-জ্বালা জুড়োতে চা, টক দই

এক দিকে ভোটযুদ্ধের গরমাগরম, অন্য দিকে, আকাশে গনগনে রোদ। দুইয়ের চাপে নাজেহাল ডান থেকে বাম সব দলের প্রার্থীরা। আজ শনিবার মহারণ। মঙ্গলবার ফলাফল। তার পরে বিশ্রাম। তত দিন শরীর ঠিক রাখতে হবে। তাই প্রচারের দিনগুলিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন সবাই।

ক্যারামেই বিশ্রাম। কামারহাটি পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অরিন্দম দাস।

ক্যারামেই বিশ্রাম। কামারহাটি পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অরিন্দম দাস।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

এক দিকে ভোটযুদ্ধের গরমাগরম, অন্য দিকে, আকাশে গনগনে রোদ। দুইয়ের চাপে নাজেহাল ডান থেকে বাম সব দলের প্রার্থীরা। আজ শনিবার মহারণ। মঙ্গলবার ফলাফল। তার পরে বিশ্রাম। তত দিন শরীর ঠিক রাখতে হবে। তাই প্রচারের দিনগুলিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন সবাই।

কেউ রোদ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন লোশন মেখেছেন, কেউ গলায়, কাঁধে চাপিয়েছেন ভিজে তোয়ালে। ঘনঘন লেবু জল, ওআরএস, টক দই খেয়েছেন কোনও কোনও প্রার্থী। কেউ আবার বাড়ি গিয়ে পছন্দের খাবার খেয়ে এসেছেন। কেউ পোষ্যদের নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন বেশ কিছু ক্ষণ। মূলত এই ভাবেই বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সময় কাটালেন বরাহনগর-কামারহাটি ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রার্থীরা।

যিনি রাঁধেন। বরাহনগর পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শুভ্রা ভট্টাচার্য।

প্রচারের শেষ দিন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চড়া রোদ্দুর মাথায় নিয়ে এলাকায় ঘুরছিলেন বরাহনগরের বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান রামকৃষ্ণ পাল। ক্লান্ত হয়ে গাছের ছাওয়ায় বসে কর্মীদের প্রশ্ন করলেন, ‘‘কাছাকাছি একটা মিষ্টির দোকান আছে না?’’ উত্তর এল ‘‘কেন দাদা?’’ ঘাম মুছতে মুছতে বরাহনগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মুচকি হেসে বললেন, ‘‘সবার জন্য এক ভাঁড় করে নিয়ে এস।’’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই এসে গেল বেশ কয়েকটি টক দইয়ের ভাঁড়। দই খেয়ে ফের প্রচার শুরুর আগে রামকৃষ্ণবাবু বললেন, ‘‘এই টক দই খেয়েই প্রচার পর্ব কাটিয়ে দিলাম।’’ পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে মাত করতে দাবাও খেলছেন রামকৃষ্ণবাবু।

কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিমল সাহার হাই সুগার থাকলেও চুমুক দিয়েছেন আখের রসে। তবে প্রচারের ফাঁকে বাড়ি গিয়ে খেয়ে এসেছেন পছন্দের ভাত, ডাল, মৌরলা মাছের ঝাল ও টক আমের চাটনি। বিমলবাবুর কথায়, ‘‘খেতে খুব ভালবাসি। তবে বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া করেছি। কিন্তু আখের রস, ঠান্ডা পানীয়র পাশাপাশি প্রতি দিনই করলা সেদ্ধ না হলে মেথির জল খেতে হয়েছে।’’

রেওয়াজ চলছেই। দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সঞ্চিতা দত্ত।

প্রচারের সময়ই বাড়ি থেকে নুন-চিনি-লেবুর জল নিয়ে বেরতেন কামারহাটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অরিন্দম দাস। ক্লান্তি কাটাতে পাশাপাশি মেতেছেন ক্যারামেও। ওই পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মধুজা চক্রবর্তী প্রচুর জল খেয়েই শরীর ঠিক রেখেছেন। প্রচার শেষে বাড়ি ফিরে শুনেছেন পুরনো দিনের গান।

বিরাশি বছরের সিপিএম প্রার্থী গোবিন্দ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচারে লিকার চা’ই একমাত্র ভরসা। কামারহাটির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওই প্রার্থীর কথায়, ‘‘এ বয়সে বেশি কিছু নয়, লিকার চা’ই আমার সতেজ থাকার ওষুধ।’’ রোদ থেকে বাঁচতে মূলত বিকেল-রাতেই বেশি প্রচার সেরেছেন বরাহনগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী দীপঙ্কর মৃধা। তবে তিন-চার তলা আবাসনের সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে গিয়েই বেশি ক্লান্ত হয়েছেন বলে দাবি এই পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী কাজল বসুর। স্রেফ ঠান্ডা জলে গলা ভিজিয়েই প্রচার পর্বে সেরেছেন। খানিক অবসরে মোবাইলে রবীন্দ্রসঙ্গীত।

সুরের মাঝে। বরাহনগর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী কাজল বসু।

কামারহাটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সিরিয়াল অভিনেত্রী দেবপর্ণা চক্রবর্তী অবশ্য নিজের গ্ল্যামারের বিষয়ে একটু যত্নবানই ছিলেন। সকালে ছাতুর সরবত খেয়ে সানস্ক্রিন লোশন মেখেই প্রচারে বেরিয়েছেন। ছোট থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কামারহাটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী পার্থপ্রতিম ঘোষ অবশ্য রোদকে তেমন ভাবে আমল দেননি। তবে মাঝেমধ্যে গলা ভেজাতে শুধু জল পান করেছেন।

বৃহস্পতিবার ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে সাংসদ-অভিনেতা দেবকে নিয়ে প্রচারের জন্য তৈরি হয়েছিলেন বরাহনগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অঞ্জন পাল। জানালেন, প্রচারে বেরিয়ে তেমন ভাবে কিছু না খেলেও মাঝেমধ্যে দুপুরে বাড়ি ফিরে খেয়েছেন হালকা মাছের ঝোল, ভাত। তবে কড়া রোদের তাপ থেকে বাঁচতে সঙ্গী ছিল ভিজে তোয়ালে। বাড়ি ফিরে শুনেছেন ভক্তিমূলক গান। মানুষের সঙ্গে চুটিয়ে গল্প করতে, কথা বলতে ভাল বাসেন কামারহাটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অপরাজিতা দাস। আর তাই বোধ হয় তাঁর দাবি, ‘‘প্রচারে বেরিয়ে রুটিন মাফিক কিছুই খাওয়া হয়নি। যে যা দিয়েছেন তাই খেয়েছি। বেশি খেয়েছি দুধ চা।’’

ভোটের আগে টহলদারি রাজ্য পুলিশের কম্যান্ডো বাহিনীর। শুক্রবার টিটাগড়ে।

প্রচারের ব্যস্ততার মাঝেই কিছু সময় বের করে নিয়েছিলেন কামারহাটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুবীর বসু। আর সেই সময়ে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখতেই তিনি মশগুল থেকেছেন। বলছেন, ‘‘টিভিতে গোল দেখেছি, আর মনে মনে ভেবেছি প্রতিপক্ষকে আমি কটা গোল দেব।’’ প্রচারের ব্যস্ততা যতই থাকুক, বাড়ির লোকেদের রকমারি রান্না করে খাওয়াতে প্রতি দিনই রান্নাঘরে কিছুটা সময় কাটিয়েছেন বরাহনগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শুভ্রা ভট্টচার্য। দক্ষিণ দমদমের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সঞ্চিতা দত্ত অবশ্য প্রচারের মাঝে কিছুটা সময় বের করে নিয়েছিলেন সেতারে রেওয়াজ করার জন্য।

প্রচারের শেষে কিংবা ফাঁকে অন্যরকমের সময় কেটেছে কামারহাটির বিদায়ী চেয়ারম্যান এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তৃণমূলের গোপাল সাহার। বাড়ির কলিং বেল বাজানোর আগেই ভিতর থেকে কুকুরের চিৎকার ভেসে আসত। ঘরে ঢুকতেই গোপালবাবুর উপর ঝাঁপাত ছোট দুই পোষ্য। মুচকি হেসে অবিবাহিত ওই নেতা বললেন, ‘‘এই আমার দুই মেয়ে। জলি আর লিলি। প্রচার সেরে বাড়ি ফিরে আমাকেই ওদের খাওয়াতে হয়। ওদের সঙ্গে খেলতে হয়।’’

ছবিগুলি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায় ও শৌভিক দে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE