Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অনুপাত ছেড়ে শিক্ষক দাবি সব শ্রেণিতেই

শিক্ষার অধিকার আইন মেনে ৩০:১ অনুপাতে পড়ুয়া-শিক্ষক থাকার কথা। শিক্ষক নিয়োগের আগে এই অনুপাতের ভিত্তিতেই শূন্য শিক্ষক-পদের তালিকা তৈরি করেন ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে শিক্ষক ও পড়ুয়ার যে-অনুপাতের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চলছে, তার যৌক্তিকতা নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলল শিক্ষা শিবির। এ ভাবে শিক্ষক নিয়োগ করলে স্কুলে শিক্ষক-ঘাটতি থেকেই যাবে বলে তাদের অভিমত। তাই অনুপাতের বদলে প্রতিটি শ্রেণির জন্য অন্তত এক জন করে শিক্ষক বা শিক্ষিকা নিয়োগের দাবি উঠছে। অর্থাৎ সব ক’টি শ্রেণিই যেন প্রতিটি পিরিয়ডে শিক্ষক বা শিক্ষিকা পায়।

শিক্ষার অধিকার আইন মেনে ৩০:১ অনুপাতে পড়ুয়া-শিক্ষক থাকার কথা। শিক্ষক নিয়োগের আগে এই অনুপাতের ভিত্তিতেই শূন্য শিক্ষক-পদের তালিকা তৈরি করেন ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা। কোনও প্রাথমিক স্কুলে ১০০ জন পড়ুয়া থাকলে সেখানে তিন জন শিক্ষক থাকেন। নির্ধারিত অনুপাতের নিরিখে তাতে কোনও ত্রুটি থাকছে না, কিন্তু সমস্যা থাকছেই। অনেক স্কুলে দেখা যাচ্ছে, প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ জন পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু পাঁচটি শ্রেণি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক-শিক্ষিকা তিন জন। ফলে প্রতিটি পিরিয়ডেই দু’টি শ্রেণিতে কোনও শিক্ষক মেলে না। সেই জন্য একই ঘরে দু’টি শ্রেণিকে বসিয়ে ক্লাস করাতে হয়। সম্প্রতি ডিআই-দের কাছ থেকে যে-সব রিপোর্ট বিকাশ ভবনে পৌঁছেছে, তাতে এই সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমস্যার মধ্যেই পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেটা হয়ে যাওয়ার পরে শুধু অনুপাতের নিরিখে শিক্ষক নিয়োগ করলে বিপর্যয় হবে বলে শিক্ষক সংগঠনের আশঙ্কা।

দাবি অমূলক নয় বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরের অন্দরে। ২০১৭ সালে প্রাথমিক স্তরে অন্তত ৪২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, সেই নিয়োগের পরেও যে শিক্ষক-ঘাটতির অভিযোগ উঠছে, তার মূলে আছে এই অনুপাত-ভিত্তিক নিয়োগ আর বাস্তব পরিস্থিতির অসামঞ্জস্য।

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার। পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন এক লক্ষ ৮০ হাজার। পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, বর্তমানে শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাত ধরেই শুধু প্রাথমিকে শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। প্রাক্‌-প্রাথমিক ও পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত হলে শূন্য পদের সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে। এই সমস্যা শুধু প্রাথমিকেই নয়, উচ্চ প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও তা কমবেশি রয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘প্রতিটি শ্রেণি এবং তার বিভিন্ন বিভাগের কথা ভেবে ন্যূনতম এক জন শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার।’’ সমস্যা মেটাতে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু যে-দিন পার্শ্বশিক্ষক থাকেন না, সে-দিন অসুবিধায় পড়েন শিক্ষকেরা।

নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকর সমর চক্রবর্তীর বক্তব্য, শ্রেণি-পিছু ন্যূনতম এক জন ক্লাস টিচার বা শ্রেণি-শিক্ষক তো অবশ্যই প্রয়োজন। পাশাপাশি এক জন অতিরিক্ত শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকা জরুরি। কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার শরীর খারাপ হলে শিশুদের পড়াশোনা যেন ব্যাহত না-হয়। ‘‘বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় টিকতে গেলে এই ধরনের ন্যূনতম পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন,’’ বলেন সমরবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Teachers DI Ratio
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE