স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের উপরে তৃণমূলের দাদাগিরির অভিযোগ নতুন নয়। এ বার এলাকার সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পার্টি অফিসে তলব করে সভা করার অভিযোগ উঠল ব্লক তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ২ জুলাই পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর-১ ব্লকের সমস্ত স্কুলে ব্লক তৃণমূলের তরফে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়েছিল, স্কুলের পঠন-পাঠন, পরিকাঠানো উন্নয়ন, মিড-ডে মিল, সংগঠন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার জন্য শনিবার দুপুর ২টোয় সরিদাসপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
কাদের সেখানে ডাকা হচ্ছে? চিঠি বলছে, ‘পটাশপুর-১ নম্বর ব্লক এলাকায় অবস্থিত সমস্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা মহাশয়/মহাশয়াদের নিয়ে একটি বিশেষ সভা আহ্বান করা হইয়াছে।’ ডাকা হয়েছিল তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কর্মকর্তাদেরও। চিঠির নীচে ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাপস মাজির নাম।
শাসক দলের নির্দেশ মেনে এ দিন দুপুরে সরিদাসপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে হাজির হন এলাকার বহু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। ওই এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিনলিয়ে স্কুল ২৬টি। এর মধ্যে ১৫টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সভায় হাজির ছিলেন। বাকি স্কুলের তরফে পাঠানো হয় শিক্ষক প্রতিনিধিদের। মূলত সাংগঠনিক উন্নয়ন নিয়েই কথা হয়। সভায় হাজির শিক্ষকদের বেশির ভাগের বক্তব্য, তাঁরা তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সদস্য। তাই এই সভায় এসেছিলেন।
কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের চিঠি দিয়ে কি স্কুলের শিক্ষকদের তলব করা যায়?
তাপস মাজির দাবি, ‘‘আমি তো ব্লক প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতা। সেই অধিকারেই এই সভা ডেকেছিলাম।’’ শিক্ষক সংগঠনের কোনও নেতা কি স্কুলে চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের ডেকে পাঠাতে পারেন? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে তাপসবাবু বলেন, ‘‘ব্লকের অধিকাংশ শিক্ষকই আমাদের সমর্থক। যাতে স্কুলগুলি ভাল ভাবে পরিচালিত হয়, তার জন্যই এ দিন সভা ডেকেছিলাম।’’
স্বাভাবিক ভাবেই, এই নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত পণ্ডা বলেন, ‘‘কোনও দলের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের পার্টি অফিসে ডাকা অন্যায় তো বটেই। কিন্তু নিয়ম বহির্ভূত কাজ করাটাই তৃণমূল নিয়মে পরিণত করে ফেলেছে।’’ যদিও তাপসবাবুর মতে, ‘‘বিষয়টা নিয়ে বিরোধীরা অযথা বাড়াবাড়ি করছে।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী আবার বলেন, ‘‘ওই চিঠিতে আমাদের দলের ব্লক সভাপতির সই নেই। বিরোধীরা অপপ্রচার করতেই এটা করেছে।’’ তবে ঘটনার কথা স্বীকার করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, ‘‘এমন একটা বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। এমন ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। আমরা দলের তরফ থেকে খোঁজ নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy