Advertisement
E-Paper

নিজেরা বেপাত্তা ক্লাসে, পয়সা দিয়ে লোক রাখলেন শিক্ষিকারা

খবর পেয়ে ছুটে যায় নাকাশিপাড়ার জয়েন্ট বিডিও। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে তিনি রিপোর্টও জমা দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, দু’জন শিক্ষিকা হাজিরা খাতায় আগামী মাসেরও সই করে রেখেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ১৯:৩৯
স্কুলের ছাদ থেকে অভিভাবকদের জটলা দেখছে ছাত্ররা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের ছাদ থেকে অভিভাবকদের জটলা দেখছে ছাত্ররা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। কিন্তু, দেখা নেই কোনও শিক্ষিকার। তাদের পরিবর্তে ‘গার্ড’ দিচ্ছেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি আবার ডেকে নিয়েছেন দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে।

বিষয়টি জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে ছুটে যায় নাকাশিপাড়ার জয়েন্ট বিডিও। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে তিনি রিপোর্টও জমা দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, দু’জন শিক্ষিকা হাজিরা খাতায় আগামী মাসেরও সই করে রেখেছেন।

নদিয়ার নাকাশিপাড়ার প্রত্যন্ত এলাকায় গিরিধারপুর হাইস্কুল। দীর্ঘ দিন ধরেই স্কুলটি জুনিয়র হাইস্কুল ছিল। ২০১৫ সালে মাধ্যমিক স্কুলে উন্নিত হয়। এই মুহুর্তে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ৪০৪ জন। কিন্তু, শিক্ষিকা সংখ্যা মাত্র চার জন। এই চার জনকেই প্রতি দিন ছ’টি শ্রেণির ক্লাস নিতে হয়। ফলে প্রতি দিন এক ঘরে একসঙ্গে একাধিক শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। তার উপরে এক জন শিক্ষক না এলেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: দেগঙ্গায় ডেঙ্গিতে মৃত্যু দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বার

এই অবস্থায় দিন কয়েক আগে এক শিক্ষিকা বিএড পড়তে যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়েছেন। এক জন শিক্ষিকা আবার মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছেন। আর এক শিক্ষিকার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে নিয়ে কলকাতায় গিয়েছেন ডাক্তার দেখাতে। আর এ দিন নাকাশিপাড়া ব্লক থেকে মিড ডে মিলের থালা ও গেলাস দেওয়া হয়েছে। স্কুলে না এসে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্লক অফিয়ে গিয়েছিলেন সেটা আনতে। এ দিন নবম ও ষষ্ট শ্রেণির পরাক্ষা ছিল। তার দাবি, “বাধ্য হয়েই আমি তাই স্থানীয় ওই যুবককে পরীক্ষা নিতে বলে গিয়েছিলাম।”

যদিও সফিকুল শেখ নামে স্থানীয় ওই যুবকের পাল্টা জিজ্ঞাসা, “কেন পরীক্ষার গার্ড নিতে পারব না? আমি তো স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক!” তার পাল্টা দাবি, “আজ তো প্রথম নয়। গত কয়েক মাস ধরেই আমি প্রতি দিন ক্লাস নিচ্ছি।” যদিও নাকাশিপাড়ার সার্কেল ইনস্পেক্টর জন্মেজয় দত্ত বলেন, “না। এই স্কুলে এমন কোন অস্থায়ী শিক্ষিক নিয়োগ করা হয়নি। ওঁরা কী ভাবে এটা করলেন তা চানতে চাওয়া হবে।”

আরও পড়ুন: ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিলেন মমতা

স্কুলের শিক্ষিকাদের দাবি, চার জনে একই সময়ে ছ’টা শ্রেণির ক্লাস নেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব হয় না। সে কারণেই তারা নিজেরা টাকা দিয়ে ওই যুবককে নিয়োগ করেছেন। তাঁকে প্রতি মাসে চার জন শিক্ষিকা মিলে দেড় হাজার টাকা করে দেন। কিন্তু, তাঁরা কি সেটা করতে পারেন? রিঙ্কুদেবীর সাফাই, “এ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিল না। আর কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানিয়েছি। কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি। পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকলে এমনটা করতে হত না।”

কিন্তু হাজিরা খাতায় অগ্রিম সই কেন? প্রধান শিক্ষিকার সাফাই, “স্কুলে প্রচণ্ড চাপ থাকায় কারণেই হয়তও আগে থেকে সই করে রাখেন।”

যদিও অভিভাকদের অভিযোগ, সম্পুর্ণ নিজেদের স্বার্থেই এমনটা করা হয়েছে। অভিভাবক আশাকুল শেখ বলেন, “শিক্ষিকারা নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই এখন এ সব যুক্তি দেখাচ্ছেন। কারণ তারা কেউই নিয়মিত স্কুলে আসেন না। এলেও কোনও রকমে সময় কাটিয়ে চলে যান।” তিনি বলেন, “সেই কারণেই ওঁরা টাকা দিয়ে ছেলেটাকে রেখে দিয়েছেন। যাতে দিদিমণিদের হয়ে সব দিক সামলে দিতে পারে।” জেলার মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক মিতালি দত্ত বলেন, “ভাল করে খোঁজ না নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।”

School Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy