Advertisement
E-Paper

ইয়াস-ধাক্কা, আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিনমজুরি অমিল

এ লড়াই অবশ্য শৈশবের একার নয়। তাঁর গ্রামের রাজকুমার মণ্ডল এবং সূর্যকান্ত মণ্ডলও লড়ছেন এই লড়াই।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২১ ০৬:৩৪
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

করোনার অভিঘাতে ওঁরা শিক্ষক থেকে দিনমজুর হয়েছিলেন।ঘূর্ণিঝড় আর প্লাবন কেড়েছে চাষের খেতে কাজের সুযোগটুকুও। ঘরের দেওয়ালের মতোই নড়বড়ে ওঁদের ভবিষ্যৎ।

ইয়াসের ধাক্কায় ক্ষয়ে যাওয়া মাটির দেওয়ালের উপরে কোনও রকমে দাঁড়িয়ে টালির চালটা। তারই নীচে বৃদ্ধ বাবা-মা ও এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে বাস বছর ত্রিশের শৈশব রায়ের। পকেটে
এম এ আর বি এড ডিগ্রি। পাথরপ্রতিমার হেড়ম্বগোপালপুর পঞ্চায়েতের কুয়েমুড়ি হেড়ম্বগোপালপুর সনাতন মিলন বিদ্যাপীঠের আংশিক সময়ের শিক্ষক শৈশব এখন অন্যের বাড়িতে কাজ খোঁজেন। স্কুল বন্ধ। বন্ধ টিউশন-ও। কুয়েমুড়ি গ্রামের শৈশবের কথায়, ‘‘ইয়াসের পরে নোনা জল ঢুকে জমি শেষ হয়ে গিয়েছে। আগে চাষের কাজ মিলত। এখন সেটাও মিলছে না। হাত পেতে ত্রাণ নিতে ইচ্ছা করে না।’’

এ লড়াই অবশ্য শৈশবের একার নয়। তাঁর গ্রামের রাজকুমার মণ্ডল এবং সূর্যকান্ত মণ্ডলও লড়ছেন এই লড়াই। রাজকুমার ইংরেজিতে এম এ। সূর্যকান্ত এম এ পাশ করেছেন ইতিহাস নিয়ে। হেড়ম্বগোপালপুর সনাতন মিলন বিদ্যাপীঠে আংশিক সময়ের শিক্ষকতার কাজে রাখা হয়েছিল তাঁদের। সাম্মানিক মাসে এক হাজার থেকে ৩,২০০ টাকা। সাম্মানিক কম হলেও গৃহ-শিক্ষকতা করে মোটামুটি উপার্জন করতেন তাঁরা। কিন্তু সে সব আজ অতীত। এখন দিনমজুরি করেন এই তিন শিক্ষক। তা-ও রোজ কাজ জোটে না। জুটলে রোজগার হয় দিনে ৩০০ টাকা। তাঁদের কথায়,‘‘ স্কুল বন্ধ। মাসের পর মাস বেতন নেই। বন্ধ টিউশন। অথৈ জলে পড়েছি। বাধ্য হয়েই দিনমজুরি করছি।’’

শৈশব বলেন, ‘‘বাবা পুরোহিতের কাজ করে পড়াশোনা করিয়েছেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় কাজ করতে পারেন না।’’ প্লাবিত এলাকায় অনেকেই ত্রাণ দিতে আসছেন। শৈশবের কথায়, ‘‘পড়াশোনা করেছি। লোকে শিক্ষক বলে চেনেন আমাদের। তাই হাত পেতে ত্রাণ নিতে সম্মানে লাগে।’’

ইয়াসের দিন নাগচরা নদী-ঘেঁষা কুয়েমুড়ি গ্রামে প্রায় দুই কিলোমিটার নদী-বাঁধ ভেঙেছিল। প্লাবিত হয়েছিল গোটা গ্রাম। ক্ষতি হয়েছিল ঘরবাড়ির। ভেসে গিয়েছে চাষের খেত। ফলে, কাজের সুযোগ নেই।

হেড়ম্বগোপালপুরের ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১,১০০। স্থায়ী শিক্ষক পাঁচ জন। প্যারাটিচার ন’জন। আছেন ১৩ জন আংশিক সময়ের শিক্ষকও। দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করলেও সরকারি বেতন পান না আংশিক সময়ের শিক্ষকরা। স্কুলের উন্নয়ন তহবিল থেকে তাঁদের সাম্মানিক দেওয়া হয়। পড়ানোর পাশাপাশি মিড-ডে মিলের কাজও সামলাতে হয় তাঁদের।

রাজকুমার ও সূর্যকান্তর আক্ষেপ, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহুবার বেতন বাড়ানোর জন্য বলেছি। কিন্ত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।'’

স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শশাঙ্কশেখর রায় বলেন, ‘‘স্কুলের নিজস্ব কোনও তহবিল নেই। বিভিন্ন ফান্ডে অভিভাবকদের দেওয়া টাকায় ওঁদের বেতন হয়। স্কুল বন্ধ থাকায় ছ’মাস বেতন দেওয়া যায়নি।’’

শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ, সম্মানজনক বেতন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছে আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘পার্টটাইম স্কুল টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ় ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’।

সংগঠনের জেলা সভাপতি শৈশব জানান, শুধু পাথরপ্রতিমা ব্লকেই প্রায় ৩৭৮ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক রয়েছেন। অন্য ব্লকের তুলনায় এই ব্লকে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। কারণ, নদী-ঘেরা ব্লকের স্কুলগুলিতে আসতে চান না অনেক শিক্ষক।

Teacher Daily wage worker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy