Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোরে যৌনপল্লি থেকে পালাল তরুণী

তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি। ছোট ঘরটির ভিতর তো পুরোই অন্ধকার। বিছানায় পাশে নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছেন এক প্রবীণা। কিন্তু সামান্য নড়াচড়াতেও তাঁর ঘুম ভেঙে যেতে পারে। তাই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের এক তরুণী শুক্রবার কাক ডাকা ভোরে দিনহাটার যৌনপল্লিতে বিছানা ছাড়েন অতি সন্তর্পণে।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি। ছোট ঘরটির ভিতর তো পুরোই অন্ধকার। বিছানায় পাশে নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছেন এক প্রবীণা। কিন্তু সামান্য নড়াচড়াতেও তাঁর ঘুম ভেঙে যেতে পারে। তাই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের এক তরুণী শুক্রবার কাক ডাকা ভোরে দিনহাটার যৌনপল্লিতে বিছানা ছাড়েন অতি সন্তর্পণে।

আগে তিন বার ধরা পড়েছেন। বেদম মারও জুটেছে। এ বার তাই দরজা খোলার আগে ভাল করে দেখে নেন ওই প্রবীণাকে। এই মহিলাকে রাখাই হয়েছে তাঁকে চোখে চোখে রাখার জন্য। কিন্তু তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন দেখে আর পালানোর সুযোগ ছাড়েননি ওই তরুণী। সামান্য যেটুকু টাকাপয়সা ঘরে রয়েছে, তা নেওয়ার চেষ্টাও করেননি। সাবধানে কাঠের দরজার ছিটকিনি খুলে একরকম নিঃশব্দে পাল্লা দু’টো সামান্য ফাঁক করে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। চটি জোড়া ছিল হাতে। পাশে সার সার এমনই ছোট ছোট ঘর। সামনে একটি তালা লাগানো লোহার গেট। সাড়ে চার ফুট মতো উঁচু। পা টিপে টিপে রোয়াক পেরিয়ে সেই গেটের কাছে গিয়ে দেখলেন, সরু গলির উল্টো দিকের বাড়ির দরজা জানলাগুলোও বন্ধ। আর দেরি করেননি। গেটটি শক্ত করে ধরে তা বেয়ে উঠে যান। গেট পেরিয়েই গলির রাস্তা। পা টিপে টিপেই সেই গলি পার হয়ে বড় রাস্তায় পৌঁছে হাঁফ ছাড়েন তিনি। কিন্তু কোন দিকে যাবেন জানতেন না। এ বার চটি পরে বাঁ দিকে দৌড়তে শুরু করেন। তারপরে হনহন করে হাঁটা। প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে একটু লোকালয় পেয়ে আর পারেননি। তখন বেশ আলোও ফুটে গিয়েছে। সেখানেই বসে পড়েছিলেন। জানতেন না, সেটাই দিনহাটার কলেজ হল্ট। লোকজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করতেই ভেঙে পড়েন কান্নায়।

তখন জানা যায়, বসিরহাটের ওই তরুণী খুবই গরিব ঘরের মেয়ে। বাবা দিনমজুর। তাই নিজেই কিছু রোজগারের চেষ্টা করছিলেন ওই তরুণী। তাতেই তাঁর সঙ্গে অগস্টের শেষের দিকে কালু শেখ নামে এক ব্যক্তির যোগাযোগ হয়। কালু তাঁকে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। ১ সেপ্টেম্বর কালুর সঙ্গেই ওই তরুণী শিয়ালদহে পৌঁছন। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে চলে যাওয়া হয় সোজা কোচবিহার। ঠাঁই হয় দিনহাটার যৌনকর্মীদের পল্লিতে। স্থানীয় বাসিন্দারাই নারী পাচার রুখতে সক্রিয় একটি সংগঠনের কর্মী এলাকার বাসিন্দা জ্যোৎস্না বর্মনকে খবর দেন। জ্যোৎস্নাদেবী তাঁদের সংগঠনের আর এক সদস্য নবনীতা চক্রবর্তীকে খবর দেন। এরপরে তাঁরাই ওই তরুণীকে পুলিশের কাছে নিয়ে যান। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তরুণীর হাতে, পিঠে লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভয়ে তিনি এতটাই সিঁটিয়ে রয়েছেন যে, ভাল করে কিছু বলে উঠতে পারছে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই শিউরে উঠে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করছেন। পুলিশের সন্দেহ, বিক্রি করে দিতেই

দুষ্কৃতীরা ওই তরুণীকে ওই পল্লিতে নিয়ে যায়। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

ওই তরুণী বলেন, “ভেবেছিলাম জীবনটা শেষ হয়ে গেল। কোনও রকমে পালিয়েছি। এখন বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চাই।” তাঁর বাবা-মা’কে পুলিশ খবরও দিয়েছে। নবনীতাদেবী বলেন, “দিন-রাত ওই কিশোরীর সঙ্গে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে। একাধিক দুষ্কৃতী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মনে হচ্ছে।” যৌনকর্মীদের ওই পল্লিতে কে কে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তা খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teen dinhata basirhat abpnewsletters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE