গণপিটুনিতে নিহত দীপক মাহাতো।
কখনও ঢালাই মেশিনে বেঁধে বছর সতেরোর ছেলেটিকে রড-লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছিল, কখনও গাছে বেঁধে।
ছেলেধরা গুজবে মাসখানেকের মধ্যে উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। এ বার মোবাইল চোর সন্দেহে হুগলির কামারকুণ্ডু স্টেশনের কাছে গণপিটুনিতে মৃত্যু হল দীপক মাহাতো নামে ওই নাবালকের।
সে নদিয়ার কল্যাণীর চরজাজিরার বাসিন্দা ছিল। সেখান থেকে আরও ১৯ জনের সঙ্গে ঠিকা শ্রমিক হিসেবে এসেছিল কামারকুণ্ডুতে রেলের আবাসন তৈরির কাজে। থাকছিল তাঁবুতে। পাশেই আবার ওই কাজের জন্য মালদহ থেকে আসা আরও ২০ জন ঠিকা শ্রমিকের তাঁবু পড়েছিল। সেই শ্রমিকেরাই দীপককে পিটিয়ে মারে বলে অভিযোগ। ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার গভীর রাতে মারধরের সময়ে চিৎকার শুনে ছেলেটিকে বাঁচাতেও এসেছিলেন কয়েকজন। কিন্তু হামলাকারীরা তাঁদের মারতে উদ্যত হয়। বুধবার সকালে গাছে বাঁধা, অচৈতন্য অবস্থায় ছেলেটিকে নেতিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। তাকে সিঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘ মারধরের ঘটনায় মোট পাঁচ জন ছিল। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক জনের খোঁজ চলছে।’’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ওই সাইট-অফিসের রাতের নিরাপত্তারক্ষী ইফতার আলি বলেন, ‘‘আমি ওদের মারতে বারণ করেছিলাম। ছেলেটাকে জল খাওয়াতে গেলে ওরা আমাকেই উল্টে ঠেলে ফেলে দিয়ে মারতে আসে। আমি ভয়ে পালাই।’’ দীপকের সহকর্মী শেখ গিয়াসুদ্দিন বলেন, ‘‘তখন রাত দেড়টা হবে।
শোকগ্রস্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র
তাঁবুতে ঘুমোচ্ছিলাম। দীপকের চিৎকারে সকলে উঠে পড়ি।
দেখি ওকে মারতে মারতে আমাদের তাঁবুর দিকে ওরা নিয়ে আসছে। মাঝখানে ঢালাই মেশিন ছিল। সেখানে বেঁধে মারতে শুরু করে। ওদের একজনের পায়ে ধরে দীপককে বাঁচাতে যাই। লাথি মেরে আমাকে সরিয়ে দেয়।’’
কামারকুণ্ডুতে রেলের আবাসন তৈরির কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। নিহত দীপক রং মিস্ত্রি ছিল। মঙ্গলবার গভীর রাতে সে পাশের তাঁবুতে যায় বলে সেখানকার শ্রমিকদের অভিযোগ। তারা ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার পরেই শুরু হয়ে যায় মার। স্থানীয় বাসিন্দারা বুধবার সকালে ওই তাঁবুতে গিয়ে সাত জনকে ধরে স্থানীয় একটি ক্লাবঘরে আটকে রাখেন। বাকিরা পালায়। পরে সাত জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা দীপক গরিব পরিবারের সন্তান। সকালে কামারকুণ্ডুতে চলে আসেন তার বাবা মাঙ্গুর মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে কাল রাতে ফোন করে একটা ঝামেলার কথা বলেছিল। পরে আর ওকে ফোনে পাইনি। ওর মোবাইল বন্ধ ছিল। এই ঘটনা ঘটবে স্বপ্নেও ভাবিনি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার ছেলে চোর নয়। আমরা খেটে সংসার চালাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy