বাড়ি থেকে পালিয়ে অমৃতসর এক্সপ্রেসে উঠে পড়েছিল বছর চোদ্দোর মেয়েটি। সেনা জওয়ানদের জন্য সংরক্ষিত কামরাটি ফাঁকাই ছিল। তিন জওয়ান ছাড়া আর কেউ ছিল না সেখানে। রক্ষক যে কত দ্রুত ভক্ষক হয়ে যায়, তার প্রমাণ মিলল অল্প পরেই।
অভিযোগ, কামরাতেই মেয়েটিকে মাদক খাইয়ে বারংবার ধর্ষণ করে জওয়ানরা। রবিবার রাতে মেয়েটিকে অর্ধ-অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে রেল পুলিশ। ট্রেন তখন ঝাড়খণ্ডের মধুপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে।
কী ভাবে ঘটনাটি রেল পুলিশের নজরে এল? সূত্রের খবর, রবিবার হাওড়া জিআরপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দমদম এলাকায় মেয়েটির বাড়ির লোকের কাছ থেকে তার পালানোর খবর পেয়ে ওই সংস্থা মেয়েটিকে খুঁজছিল। তাদের সঙ্গে ছিল মেয়েটির ছবিও। তারা এও জানতে পেরেছিল, মেয়েটি অমৃতসর এক্সপ্রেসে উঠেছে। কিন্তু ওই বার্তা যত ক্ষণে হাওড়া জিআরপি-র কাছে আসে, ততক্ষণে আসানসোল ছাড়িয়ে গিয়েছে ট্রেন।
হাওড়া রেল পুলিশ তখন ঝাড়খণ্ড পুলিশকে সতর্ক করে। সন্ধে ছ’টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের ডিজি-র কাছ থেকে ফ্যাক্স পায় যশিডি জিআরপি। যৌথ তল্লাশিতে নামে জিআরপি এবং আরপিএফ।
মধুপুরে ট্রেনটিকে সাত মিনিট দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। রেল পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, কামরাগুলি খুঁজতে খুঁজতে তল্লাশির দল এসে পৌঁছয় সংরক্ষিত সেনা কামরার সামনে। দরজা বন্ধ ছিল। খানিকটা ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খুলতেই মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি মেয়েকে। এক জওয়ান তার কাছে ছিল। মেয়েটিকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছিল সে। মেয়েটির জ্ঞান ছিল না পুরো। ছবি মিলিয়ে দেখে জিআরপি এবং আরপিএফ নিশ্চিত হয়, এই কিশোরীকেই খুঁজছে তারা।
সূত্রের খবর, মেয়েটি একটু ধাতস্থ হওয়ার পরে রেল পুলিশকে জানায়, সে লুধিয়ানা যাবে বলে অমৃতসর এক্সপ্রেসে চড়েছিল। জায়গা খুঁজতে খুঁজতে ফাঁকা কামরা দেখে ঢুকে পড়ে। তাকে দেখে সেনা-জওয়ানরা বসার জায়গা করে দেয়। মেয়েটি রেল পুলিশকে জানায়, জওয়ানেরা তাকে ঠান্ডা পানীয় খেতে দিয়েছিল। ওই পানীয়তে অ্যালকোহল মেশানো ছিল বলে পুলিশের ধারণা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দু’জন জওয়ান মিলে তাকে মোট ছ’বার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেছে মেয়েটি। তার দাবি, তৃতীয় জওয়ান ধর্ষণ না করলেও অন্যদের মদত দিচ্ছিল।
মধুপুর স্টেশনে কামরার মধ্যে মেয়েটির সঙ্গে যে জওয়ানকে দেখা গিয়েছিল, পুলিশ তাকে আটক করেছে। তার নাম মঞ্জরীশ ত্রিপাঠী। বয়স বছর চল্লিশ। প্রাথমিক খবর অনুযায়ী, ইস্টার্ন কম্যান্ডের ৭২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান সে। তার অন্য দুই সহযোগী পলাতক। পুলিশ আসছে বুঝতে পেরেই সম্ভবত তারা কামরার অন্যত্র সরে যায়। মধুপুরে কামরাটি আর একেবারে খালি ছিল না। তল্লাশি-দল গোটা কামরার যে ভিডিও করেছিল, মেয়েটি তার মধ্যে দু’জনকে শনাক্ত করেছে বলে রেল সূত্রে খবর। মেয়েটির দাবি, ওই দু’জনই ধর্ষক। ঝাড়খণ্ড পুলিশের তদন্তকারী অফিসার অর্জুন তিওয়ারি পরে বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা-ছবি সবই পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই তাদের ধরে তিন জনকেই হাওড়া জিআরপির হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’ মধুপুর জিআরপি ইতিমধ্যে ধর্ষণের মামলা রুজু করেছে।
কলকাতায় খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা-মা মধুপুর রওনা হয়ে গিয়েছেন। রবিবার রাতেই মেয়েটিকে দেওঘর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। চিকিৎসকরা প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করে ধর্ষণ হয়েছে বলেই মনে করছেন। চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ।
পার্ক স্ট্রিট থেকে কাটোয়া, নির্ভয়া থেকে উবের— চলন্ত বাসে-ট্রেনে-ট্যাক্সিতে ধর্ষণের একাধিক ঘটনায় গত কয়েক বছরে আলোড়ন তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কাশ্মীর থেকে মণিপুর, বারবার উত্তাল হয়েছে এই জাতীয় অভিযোগকে ঘিরে। তার পরেও চলন্ত ট্রেনে জওয়ানদের হাতে নাবালিকা-ধর্ষণের অভিযোগ শুনে স্তম্ভিত সংশ্লিষ্ট সব মহল। জিআরপি পুরো ঘটনাটা ইস্টার্ন কম্যান্ডকে জানাচ্ছে। সেনার এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আমরা সব শুনেছি। ওই জওয়ানরা কারা, খোঁজখবর শুরু হয়েছে।’’ ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে কে গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রকম ঘটে থাকলে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। সব পেশাতেই খারাপ মানুষ থাকে, সেনাবাহিনীও ব্যতিক্রম নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy