Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal SSC Scam

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বসুর চাকরি বাতিলের নির্দেশ নিয়ে রায় স্থগিত রাখল ডিভিশন বেঞ্চ

নবম দশম শ্রেণির চাকরি বাতিলের মামলায় ৮০৫ জনের স্কুলের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতি। তারই বিরুদ্ধে চাকরি যাওয়া কর্মীরা মামলা করেন হাই কোর্টে।

নবম-দশমের চাকরি বাতিলের মামলা প্রথমে ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। পরে সেই মামলাই হস্তান্তর হয়ে যায় বিচারপতি বসুর একক বেঞ্চে।

নবম-দশমের চাকরি বাতিলের মামলা প্রথমে ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। পরে সেই মামলাই হস্তান্তর হয়ে যায় বিচারপতি বসুর একক বেঞ্চে। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩৪
Share: Save:

স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকদের চাকরি বাতিল মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন চাকরি হারানো প্রার্থীরা। সোমবার সেই স্থগিতাদেশ দিল না কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তারা জানিয়েছে, আপাতত এই মামলায় রায়দান স্থগিত রাখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপাতত একক বেঞ্চের প্রক্রিয়ার উপর কোনও নির্দেশও থাকছে না। বেঞ্চ বলে, ‘‘আমরা এই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বসুর নির্দেশের প্রেক্ষিতে আলাদা আলাদা রায় জানাব।’’

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এসএসসি নিযুক্ত ৯৫২ জন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র বিকৃত করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এই মামলা প্রথমে ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। পরে সেই মামলাই হস্তান্তর হয়ে যায় বিচারপতি বসুর একক বেঞ্চে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে মামলাটি চলাকালীন সিবিআই তদন্ত-সহ একাধিক নির্দেশ দিলেও অভিযুক্ত ৯৫২ জন প্রার্থীকে মামলায় যুক্ত করেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে বিচারপতি বসুর বেঞ্চে মামলাটি উঠলে তিনি ওই ৯৫২ জনের মধ্যে ৮০৫ জনের চাকরির সুপারিশ পত্র বাতিল করে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। কারণ কমিশনই বলেছিল, এই ৮০৫ জন উত্তরপত্র ওএমআর শিট খতিয়ে দেখে তারা বুঝেছে, তা বিকৃত করা হয়েছে। এই দু’টি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চাকরি হারানো শিক্ষকেরা। আদালত তাদের বক্তব্য শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছে। তবে চাকরি খোয়ানো প্রার্থীদের দাবি অনুযায়ী, একক বেঞ্চের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি।

বিচারপতি বসুর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চাকরি হারানো প্রার্থীদর যুক্তি ছিল, আদালত শুধু সিবিআইয়ের উদ্ধার করা উত্তরপত্রের ভিত্তিতেই সমস্ত রায় দিচ্ছে। যদিও ওই উত্তরপত্র আসল কি না তারই কোনও নিশ্চয়তা নেই। আবেদনকারীদের আইনজীবী জয়দীপ কর, অনিন্দ্য লাহিড়ী এবং সৌম্য মজুমদারেরা বলেন, কমিশন নিজেই বলছে আসল ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে। তা হলে বুঝতে হবে সিবিআই যে ওএমআর শিট উদ্ধার করেছে তা 'মিরর ইমেজ'। অর্থাৎ, এটা মূল নথি নয়। তার পরও সেই নথির ভিত্তিতেই সব কিছু করা হচ্ছে।

আবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে অভিযুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের মামলায় যুক্ত করেননি, তার বিরুদ্ধেও পাল্টা যুক্তি দেন আবেদনকারীরা। তাঁদের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘আবেদনকারীদের চাকরি চলে যাচ্ছে। ফৌজদারি অপরাধের মুখোমুখি হতে হবে। অথচ তাঁদের বক্তব্যই শোনা হল না কোর্টে। একটা পিং পং বল ছুড়ে দেওয়া হল। এসএসসি সেটা ধরেও নিল। আবেদনকারীরা এই প্রক্রিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেন।’’

আবেদনকারীর আইনজীবীরা এ-ও বলেন, যদি ভুল তথ্য দিয়েই অভিযুক্ত চাকরি প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে থাকেন, তবে সেই ভুল কাদের দোষে হয়েছে? সেটাও জানা দরকরা। এই মর্মেই চাকরিপ্রার্থীদের মামলায় যুক্ত না করা এবং তাঁদের সুপারিশপত্র বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছিলেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। মামলাটি ওঠে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। সোমবার বেঞ্চ জানিয়েছে, তারা বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায়ের নির্দেশ এবং বিচারপতি বসুর নির্দেশের উপর আলাদা আলাদা রায় দেবে। তবে আপাতত দু’জনেরই নির্দেশে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না।

তবে এই মামলায় চাকরি হারানো প্রার্থীদের বিরোধিতা করেছেন নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলাকারীরা। তাঁদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য, ‘‘এই ৯৫২ জনের কেউ কি জোর দিয়ে বলতে পারবেন, যে সব ওএমআর শিট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে তা তাঁদের নয়? এত দিন হয়ে গেল ওএমআর শিট আপলোড হয়েছে কিন্তু কেউ কিছু বললেন না। চাকরি যাওয়ার মুখে এসে ওএমআর শিট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?’’ এই আইনজীবীদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ওই ওএমআর শিটের কাগজগুলো নেই। কিন্তু তথ্যগুলো তো সব ডিজিটাল মাধ্যমে রয়েছে। কেউ কেন এসে বলছে না এটা আমার ওএমআর শিট নয়? সব তো প্রকাশ করা হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে ৯৫২ জনের ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে। তদন্ত আরও এগোলে সংখ্যা ১৯৫২ ছাড়িয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE