Advertisement
E-Paper

টেট-তদন্তে লাগবে দু’মাস, জানাল রাজ্য

পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন প্রকাশের অভিযোগে টেট বাতিলের দাবি উঠেছে। এই অবস্থায় ওই অভিযোগের তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত টেটের ফল প্রকাশ করা হবে না বলে রাজ্য সরকারের তরফে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০০

পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন প্রকাশের অভিযোগে টেট বাতিলের দাবি উঠেছে। এই অবস্থায় ওই অভিযোগের তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত টেটের ফল প্রকাশ করা হবে না বলে রাজ্য সরকারের তরফে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাছাইয়ের পরীক্ষা ‘টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট’ বা টেট নিয়ে এ বারেও বিস্তর গোলযোগ হয়েছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্ন প্রকাশের অভিযোগের তদন্তের জন্য সিবিআই-কে ডাকার আবেদন জানিয়ে মামলা হয়েছে উচ্চ আদালতে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ দিন হাইকোর্টে জানানো হয়, ওই অভিযোগের তদন্ত করছে পুলিশই। এবং আগামী দু’মাসের মধ্যে তারা তদন্ত শেষ করবে বলে আদালতে জানিয়ে দেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্র।

গত ১১ অক্টোবর ওই নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছু আগেই একটি প্রশ্নপত্র চলে আসে সংবাদমাধ্যমের হাতে। টেট শেষের পরে পরীক্ষার্থীদের সেই প্রশ্নটি দেখানো হলে তাঁদের অনেকেই জানান, যে-প্রশ্নে তাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তার সঙ্গে এটির প্রচুর মিল। তার পরেই অভিযোগ ওঠে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এমনকী প্রশ্নের উত্তরও পরীক্ষা শুরুর আগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের আদালতে মামলা করেন এক পরীক্ষার্থী। একই সঙ্গে ওই পরীক্ষার্থীর আবেদন, কারা কী ভাবে প্রশ্ন ফাঁস করল, তার নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের জন্য সিবিআই-কে ডাকার নির্দেশ দিক আদালত।

এ দিন সেই মামলার শুনানিতে আবেদনকারীর কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ওই পরীক্ষায় যে-সব প্রশ্ন ছিল, তার ১৫০টির উত্তর ১০ অক্টোবর অর্থাৎ পরীক্ষার আগের দিন রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে একটি মোবাইল নম্বর থেকে হোয়াটস অ্যাপে জানিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, ১১ অক্টোবর পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ২টোয়। দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে টেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে। বিকাশবাবু জানান, এর আগে, অগস্টেও টেটের প্রশ্নপত্র উধাও হয়ে গিয়েছিল। তার জেরে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এ বার নতুন নির্ঘণ্ট অনুযায়ী সেই পরীক্ষার ঠিক আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেল। তাই টেট বাতিল করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

টেট নিয়ে কোনও অভিযোগ ওঠাই উচিত নয় বলে আদালতে মন্তব্য করেন রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী সুবীর সান্যাল। দু’জনেরই দাবি, পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, ৩২ পাতার প্রশ্নপত্রের মধ্যে মাত্র চারটি পাতা পরীক্ষার আগে বাইরে এসে গিয়েছিল। লক্ষ্মীবাবুর দাবি, টেটের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকবেন। বেলা দেড়টায় প্রশ্নপত্র খোলা হবে। পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হবে বেলা পৌনে ২টোয়। পরীক্ষা শুরু হবে বেলা ২টোয়। লক্ষ্মীবাবুর বক্তব্য, বেসরকারি একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি গড়িয়াহাট থানায় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে প্রশ্ন ফাঁসের কথা জানান। সেই সময় যদি প্রশ্নপত্রের কয়েকটি পাতা বাইরে বেরিয়েও গিয়ে থাকে, তার কোনও প্রভাব ওই পরীক্ষায় পড়বে না। কারণ, সব পরীক্ষার্থী তো তত ক্ষণে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে গিয়েছেন।

বিচারপতি বসাক তখন লক্ষ্মীবাবুদের প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে, পরীক্ষার প্রশ্ন বেলা ১টা ৫০ মিনিটেই ফাঁস হয়েছে। তার আগে হয়নি?’’ এজি জয়ন্তবাবু আদালতে জানান, তিনি মনে করেন, টেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি না বা প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষা শুরুর আগে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল কি না, পুলিশই তার তদন্ত করুক। তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হোক। বিচারপতির কাছে এজি-র আর্জি, কয়েক জন দুষ্কৃতীর জন্য ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী যেন দুর্ভোগে না-পড়েন।

এজি-র কাছে বিচারপতি বসাক জানতে চান, পুলিশ কত দিনে তদন্ত শেষ করবে? এজি জানান, আনুমানিক দু’মাস লাগবে। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কি টেটের ফল প্রকাশিত হয়ে যাবে?’’ এজি বলেন, ‘‘তদন্ত শেষের আগে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে না।’’

বিচারপতি বসাক তার পরেই জানান, তদন্ত করে দেখা হোক, ঠিক কী হয়েছিল। তিনি এজি-কে বলেন, ‘‘যদি দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েক জন এই ঘটনায় দায়ী, তা হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করুক।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, ওই ঘটনার পিছনে বহু লোকের হাত থাকলে পরে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা যাবে।

মামলার আবেদনকারীকে আজ, শুক্রবার অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ, আগামী ২৩ নভেম্বর রাজ্য সরকারকে পাল্টা হলফনামা দাখিল করতে হবে। সেই হলফনামার ব্যাপারে আবেদনকারীর কিছু বলার থাকলে তিনি ৩০ নভেম্বর ফের হলফনামা দিয়ে তা জানাবেন। পরবর্তী শুনানি হবে ৭ ডিসেম্বর।

TET election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy