সুপাই টুডুর স্ত্রী সোনালি। পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
মাওবাদী স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার সময়ে সে ছিল বছর ১৬-র কিশোরী। স্কোয়াডেই বিয়ে কিষেণজির বিশ্বস্ত দেহরক্ষী সুপাই টুডুর সঙ্গে। বিয়ের আয়োজন করেছিলেন কিষেণজি স্বয়ং। সেই বিবাহ সূত্রেই লালগড় এলাকার ঝাটিয়াড়া গ্রামের সুনি হেমব্রম হয়ে গিয়েছিল সোনালি টুডু। মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডের গুরাবান্ধা এলাকায় রামাতন্ডি জঙ্গলের কাছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘জাগুয়ার’-এর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে সুপাই নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে সোনালি।
মাওবাদীরা অবশ্য একটি বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, সুপাই টুডু আদৌ লড়াইয়ে মারা যায়নি। আগের দিন ধরার পরে ভুয়ো সংঘর্ষে তাকে খুন করেছে পুলিশ। এক পাতার প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি মাওবাদী পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির লেটারহেডে দেওয়া। বাংলায় লেখা ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে আকাশের নামে। তবে এর প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের কোথাও নয়, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলা জুড়ে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি, বিভিন্ন রাজ্যে অন্তত ৩০টি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত লালগ়ড়ের মেয়ে সুনি ওরফে সোনালি। বছর পাঁচেক আগে কিষেণজি নিহত হওয়ার পর সোনালি-সুপাই ঝাড়খণ্ডে চলে যায়। যোগ দেয় সেখানকার স্কোয়াডে।
শুক্রবার লালগড় থানার পুলিশ ঝাটিয়াড়া গ্রামে জমাদার হেমব্রমের বাড়িতে যায়। পেশায় খেতমজুর জমাদারেরই মেয়ে সুনি। পুলিশ সূত্রের খবর— জমাদার জানিয়েছেন, ২০০৯-এর গোড়ায় তাঁর মেয়ে ‘বনপার্টি’-র সঙ্গে চলে যায়। সেই থেকে তিনি আর মেয়ের খবর জানেন না। জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রামের মানুষ মাওবাদীদের ‘বনপার্টি’ বলে ডাকেন।
রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘সোনালি যে ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের স্কোয়াডে আছে, তা জানা ছিল না।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘জঙ্গলমহলের অনেকেই বিভিন্ন রাজ্যের মাওবাদী স্কোয়াডে রয়েছে। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে তেমন মামলা নেই এই রাজ্যে। সোনালির থেকে ওদের কয়েক জনের হদিস অবশ্যই মিলতে পারে।’’ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ডে অন্তত ১০টি নাশকতার মামলায় সোনালি টুডুর নাম আছে। সম্ভবত ছত্তীসগঢ় ও ওড়িশার কিছু নাশকতাতেও সে জড়িত।
গোয়েন্দা সূত্রের বয়ান অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি রাতে রামাতন্ডি জঙ্গল লাগোয়া লেপোপুতুর টোলা গ্রামের একটি ঘরে রাত কাটানোই কাল হল মাওবাদী দম্পতির। মাওবাদী নেতা কানুরা মুণ্ডার নেতৃত্বাধীন গুরাবান্ধা স্কোয়াডের সদস্য সুপাই ও সোনালি টুডু যে বাড়িতে রাতের খাবার খায়, তার মালিক সেখানে ছিলেন না। রাতটা কাটিয়ে ভোরে বেরিয়ে যাবে ঠিক করে দু’জনে ওই ঘরে থেকে যায়। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, সোনালির শিশুসন্তানও ছিল সঙ্গে।
গোয়েন্দাদের দাবি, পর দিন প্রাতঃকৃত্য করতে বেরিয়ে সুপাই দেখে, গোটা এলাকা পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। সে দ্রুত ফিরে তার স্ত্রীকে জানায়, এখনই পালাতে হবে। কিন্তু সোনালি জানায়, বাচ্চা নিয়ে এ ভাবে পালানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে তার স্বামীকে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দেয়। তবে সুপাই তা না-শুনে লড়াইয়ের পথ নেয়। নিজের নাইন এমএম পিস্তল থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় সুপাই। শেষমেশ এক ‘জাগুয়ার’-এর এসএলআর থেকে ছোড়া গুলিতে সুপাই মারা যায়। শিশুসন্তান-সহ সোনালিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy