Advertisement
E-Paper

তারিখ-রাজনীতি: ক্ষুব্ধ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব

গত কয়েক মাস ধরেই শুভেন্দু দাবি করে আসছিলেন, ডিসেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে ‘বড় চোর ধরা পড়বে’। এমনকি রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হতে পরে, এমন ইঙ্গিতও ছিল তাঁর এই দাবিতে।

অগ্নি রায়, অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:০৯
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।

‘ডিসেম্বর বিপ্লব’ নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর অতি-সক্রিয়তায় প্রবল ক্ষুব্ধ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিশেষ করে তিনি যে ভাবে ‘তারিখ-রাজনীতি’ করছেন, তা কোনও ভাবেই দলের নীতির সঙ্গে খাপ খায় না বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘দল চলবে রাজনৈতিক কর্মসূচির ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কিংবা আদালত কবে কী করবে, সেই তারিখের রাজনীতিতে দল বিশ্বাস করে না।’’ বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, এই গোটা পর্বে দল যেমন হাস্যাস্পদ হচ্ছে, তেমনই কর্মীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও। এ নিয়ে শুভেন্দুর নামে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গত কাল একটি সবিস্তার অভিযোগও জমা পড়েছে।

সূত্রের মতে, তারিখ-রাজনীতি পর্বে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতারাও। শুভেন্দুর এই রাজনীতি কোনও ভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না তাঁরা। বিজেপি সূত্রের আরও দাবি, আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজন করার কথা ছিল শুভেন্দুর। কিন্তু তা বাতিল হয়ে যায়। শীর্ষ নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণেই ওই বৈঠক বাতিল করে শুভেন্দুকে ‘বার্তা’ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজ্য বিজেপির একাংশ।

গত কয়েক মাস ধরেই শুভেন্দু দাবি করে আসছিলেন, ডিসেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে ‘বড় চোর ধরা পড়বে’। এমনকি রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হতে পরে, এমন ইঙ্গিতও ছিল তাঁর এই দাবিতে। ফলে এ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল সর্বস্তরে। পরবর্তী সময়ে শুভেন্দু ১২, ১৪ ও ২১ ডিসেম্বর তারিখগুলির দিকে নজর রাখার কথা বলেন— যে দিনগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার শুনানি ছিল। গত কাল অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু আদালত ওই মামলার শুনানি ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়। তার পরেই নিজের বক্তব্য পাল্টে শুভেন্দু আশা প্রকাশ করেন, ১৩ জানুয়ারি আদালত কিছু একটা রায় দেবে।

সূত্রের খবর, শুভেন্দুর এই ‘ডিগবাজি’র পরে রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ফোন করে বিশদে বিষয়টি জানান। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলা হয়, তারিখের রাজনীতিতে বিশ্বাস করার পরিবর্তে দলের উচিত কর্মসূচি-ভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে নামা। কিন্তু তা না করে সস্তা প্রচারের মাধ্যমে কৌশলে বাজিমাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিপক্ষে যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছেন, সে ক্ষেত্রে এ ভাবে লড়াই করে যে লাভ হবে না, তা বুঝতে হবে। শুভেন্দুর কারণে দলীয় কর্মীদের মনোবল নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে।

রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যেও ‘ডিসেম্বর বিপ্লব’ নিয়ে মতপার্থক্য স্পষ্ট। অতীতে যে ভাবে ‘সংঘর্ষ করে’ বিজেপি রাজ্যে আড়ে-বহরে বেড়েছে, সেই আন্দোলনের পথে হাঁটার উপরেই জোর দিয়েছেন নেতাদের একাংশ। আজ দিল্লিতে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ১২ ডিসেম্বরের তাৎপর্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ১২ ডিসেম্বর কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেছিলাম।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপির অনেক সাংসদ ও রাজ্য নেতারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, তারিখ নিয়ে প্রকাশ্যে এ ভাবে মুখ না খুললেই পারতেন শুভেন্দু। এতে দলেরই মুখ পুড়েছে। জনতার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্য বিজেপি নেতাদের।

তারিখ-রাজনীতি ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় নিজের সভায় যে ভাবে অন্য জেলা থেকে কর্মী এনে শুভেন্দু মাঠ ভরাচ্ছেন, তা নিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই অভিযোগে বলা হয়েছে, এ ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক জেলার কর্মী দিয়ে অন্য জেলার সভায় ভিড় জমানো দলীয় নীতির পরিপন্থী। এর ফলে জেলার কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই প্রকট হচ্ছে।

Suvendu Adhikari BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy