এত দিন শুধুই নিচু তলার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, এ বার তার কারণ খুঁজলেন বিজেপি নেতারা। বিধাননগরে মঙ্গলবার দলের নয়া দফতরে রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে নেতারা চিহ্নিত করলেন ‘নিষ্ক্রিয়তা’র কারণ। সূত্রের খবর, একাধিক নেতা নিজেদের পর্যবেক্ষণে জানান, জেলা স্তরে সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তার কারণেই মণ্ডল এবং বুথ স্তরে দল কার্যত বসে গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, বহু জেলাতেই নিয়মিত জেলা বৈঠক হয় না। ফলে, বাকিদের সঙ্গে বোঝাপড়া গড়ে না ওঠায় সংগঠন সভাপতি নির্ভর হয়ে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে সভাপতির পছন্দের লোকেরাই জেলা সংগঠনের প্রাধান্য পাচ্ছেন। যোগ্যেরা ‘বঞ্চিত’ মনে করায় অনেক ক্ষেত্রেই বসে যাচ্ছেন। নিচু তলায় সংগঠন ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়ছে। সূত্রের খবর, এক নেতা বলার সময় ‘ক্যাপাসিটি অ্যাসেসমেন্ট’র কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ, অনেকেই নিজেদের যোগ্যতার থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পাচ্ছেন। আবার অনেকে যোগ্য হয়েও পর্যাপ্ত দায়িত্ব পাচ্ছেন না।
এই আবহে বুধবার মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রীকে সরিয়ে দিয়েছে দল। তনুজা চক্রবর্তীর জায়গায় দায়িত্বে এলেন ফাল্গুনী পাত্র। সূত্রের দাবি, দলের মহিলা মোর্চার আন্দোলনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এমনকি, সভানেত্রী হিসেবে তনুজার ‘পারফরম্যান্স’ও আহামরি ছিল না। ফাল্গুনী বলেন, “শীর্ষ নেতৃত্ব বোধহয় মনে করেছেন, মহিলা মোর্চার আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে হবে।” যদিও তনুজার বক্তব্য, “দলের উচ্চ নেতৃত্ব দল পরিচালনার ক্ষেত্রে যা ভাল মনে করেছেন, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের যুক্তি, “দল এক এক সময় এক এক জনকে দায়িত্ব দেয়। এ ক্ষেত্রেও নতুন এক জনকে দায়িত্ব দিয়েছে। তনুজাদি’কে আমরা অন্য কাজে লাগাব।”
এ দিকে, বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারল না রাজ্য বিজেপি। সূত্রের খবর, বৈঠকে এই কর্মসূচির পর্যালোচনায় উঠে আসে ৫৪% বুথে এই কর্মসূচি পৌঁছেছে। বাকি ৪৬% বুথকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি ভাগে রয়েছে সাংগঠনিক ভাবে ‘দুর্বল’ বুথ ও অন্য ভাগে রয়েছে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত বুথ। এ বার এই ভাগ অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কাজ চলবে। পাশাপাশি, এত দিন হেরে যাওয়া লোকসভা আসনগুলোতে ‘প্রবাস’ কর্মসূচি চলছিল। এ বার থেকে জেতা আসনগুলিতেও সেই কর্মসূচি চলবে। লোকসভাওয়াড়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের খসড়া তালিকাও তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগামী ৩০ মে মোদী সরকারের নবম বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সাফল্য’ প্রচারে এক হাজার পথসভা করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সুকান্ত বলেন, “বৈঠকে এত দিন কী কাজ হয়েছে, তার হিসেব হয়েছে। কতটা কাজ বাকি আছে তার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে। সকলে দায়িত্ব নিয়ে ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রেই আমাদের ‘প্রবাস’ কর্মসূচি করব।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)