প্রতীকী চিত্র।
নদিয়ায় নির্যাতিত নাবালিকার মৃতদেহ দাহের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সন্দেহ করছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, এই চাপ তৈরির ক্ষেত্রে গ্রামের কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্য ও আধিকারিকের নাম উঠে এসেছে এবং গণধর্ষণের জেরে মৃত্যুর তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় এক আইনজীবীও জড়িত। সিবিআই কর্তাদের অভিযোগ, ওই আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী চাপ সৃষ্টি করে নির্যাতিতার চিকিৎসায় বাধা দেওয়া এবং মৃতদেহ পুড়িয়ে দিয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ সিবিআই-কর্তা জানান, থানায় দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী নির্যাতিতার বাবা মৃতদেহ সৎকার করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিকিৎসকের শংসাপত্র ছাড়া মৃতদেহ দাহ করার জন্য নির্যাতিতার বাবা এবং এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে স্থানীয় থানার এফআইআরে। সিবিআইয়ের এক কর্তার অভিযোগ, কোন পরিস্থিতিতে নির্যাতিতার বাবা ও আত্মীয়েরা মৃতদেহ দাহ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, থানার তদন্তকারী অফিসারেরা তা খতিয়ে দেখেননি।
রানাঘাট পুলিশ জেলার এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছিল। কিন্তু খুব দ্রুত সেই দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হয়েছে। ওই অল্প সময়ে সব দিক খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করা হয়েছিল।’’
তদন্তকারীদের দাবি, নির্যাতিত কিশোরীর মৃত্যুর পরেই তার বাবা-মা স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক আধিকারিকের কাছে গিয়েছিলেন। অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুর শংসাপত্র দেয় স্থানীয় পঞ্চায়েত। সিবিআইয়ের অভিযোগ, সে-দিন নাবালিকার মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে অস্বীকার করে ওই পঞ্চায়েত নেতা মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তদন্তকারীদের দাবি, মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য ওই আধিকারিক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ব্রজ গোয়ালির বাবা সমর স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য। তদন্তকারীদের দাবি, নির্যাতিতার মৃত্যুর পরে সমর তাঁর ঘনিষ্ঠ এক পঞ্চায়েত সদস্যকে মেয়েটির বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। সমর-ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে আরও এক জন ছিলেন। ওই দ্বিতীয় ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার পরে প্রভাবশালী সমরের চাপে এলাকার সব পঞ্চায়েত সদস্য এবং গ্রামবাসীদের একাংশ মেয়েটি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে, এমন তত্ত্ব প্রাথমিক ভাবে এলাকায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সাধারণত প্রত্যন্ত গ্রামের খবর সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশকর্মীর মাধ্যমে থানায় পৌঁছয়। তদন্তকারীদের দাবি, এ ক্ষেত্রে স্থানীয় ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে সমরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সেই কারণে হয়তো নির্যাতিতার মৃত্যুর আসল বৃত্তান্ত থানায় পৌঁছয়নি। ঘটনার পাঁচ দিন পরে চাইল্ডলাইন মারফত থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সিবিআই সূত্রের খবর, মৃতদেহ দাহের সময় এবং তার পরেও সমর গ্রামে ছিলেন। সিবিআই তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরেই তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বলে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy