Advertisement
E-Paper

মমতার রাজ্যে বর্ষপূর্তি, রাজভবনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে কি নবান্নকে সমঝোতার বার্তা বোসের?

ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই রাজ্যপালের সঙ্গে কোনও না কোনও বিষয়ে বিরোধ চলছে রাজ্যের। কখনও উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মতপার্থক্য, তো কখনও পঞ্চায়েত ভোট চলাকালীন হিংসার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন বোস।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:১১
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

বাংলায় এক বছর পূর্ণ হল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। আর এক বছর পূর্তিতে তাঁর মূল্যায়ন— রাজভবন আর নবান্নের সম্পর্ক বাইরে থেকে দেখে যেমন মনে হয়, আসলে তেমন নয়। রাজ্য সরকার আর রাজ্যপালের মধ্যে আসলে ততটাও সংঘাত নেই, যতটা বলা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে মঙ্গলবারই এক বছর পূর্ণ করলেন রাজ্যপাল বোস। সেই উপলক্ষে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ডেকেছিলেন রাজভবনে। সেখানেই বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বোসের কথায় উঠে আসে রাজ্য সরকার, শাসকদল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। আর উপস্থিত সবাইকে কিছুটা অবাক করে দিয়েই রাজ্যপাল বলেন, ‘‘রাজভবনের সঙ্গে সরকারের যে ধরনের সংঘাতের কথা বলা হয়, তেমন সংঘাত আদতে নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, গত এক বছরে তিনি একটি শব্দও বলেননি বা লেখেননি তাঁর সাংবিধানিক সতীর্থ তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই রাজ্যপালের সঙ্গে কোনও না কোনও বিষয়ে বিরোধ চলছে রাজ্য সরকারের। কখনও উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মতপার্থক্য হয়েছে, কখনও আবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট চলাকালীন নানা রকম হিংসার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। এমনকি, এ নিয়ে শাসকদলকে পরোক্ষে বিঁধেছেনও তিনি। কখনও আবার কিছুই না বলে, আগাম আলোচনা না করে চুপচাপ নোটিস ধরিয়েছেন নীতি বদলের। ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছে রাজ্য সরকার। ক্রুদ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-বিধায়কেরা। প্রকাশ্যে আক্রমণও করেছেন রাজ্যপালকে। কিন্তু তার পরও মঙ্গলবার রাজ্যপাল যা বললেন, তার অর্থ, এ সবের কোনও প্রভাব পড়েনি রাজভবন-নবান্নের সম্পর্কে।

মঙ্গলবার রাজ্যপাল বোস বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের মধ্যে সম্পর্কের কয়েকটি স্তর থাকে। মানুষের চাহিদা মেটাবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল সেই বিষয়টা দেখবেন সাংবিধানিক ভাবে। উভয়কেই আইন মেনে চলতে হবে। তবে পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকলে কাজ ভাল হবে।’’

রাজ্যপালের এই বক্তব্য শোনার পর প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এক বছর পরে রাজ্য সরকারকে সমঝোতার বার্তা দিচ্ছেন রাজ্যপাল বোস? কারণ তিনি এক দিকে যেমন নিজের বক্তব্যের সমর্থন করেছেন, তেমনই বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের বিরোধী নন তিনি।

গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।

ঠিক কী কী বলেছেন রাজ্যপাল বোস? মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সমস্ত পদস্থ সতীর্থদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন রাজ্যপাল। আলাদা ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নাম বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। তবে বাংলার এবং বাংলার মানুষের প্রশংসা করেছেন।

রাজ্যপাল জানিয়েছেন, বাংলায় এসে বাংলার মানুষকে ভালবেসে ফেলেছেন তিনি। বোস বলেছেন, ‘‘বাংলা আমার কর্মভূমি। রাজ্যপাল হিসাবে যে দায়িত্ব আমার কাঁধে আছে, গত এক বছরে তা পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করছি।’’ কী সেই দায়িত্ব? তার ব্যাখ্যা দিয়ে বোস বলেছেন, ‘‘মূলত দু’টি দায়িত্ব— সংবিধান রক্ষা করা এবং মানুষের উপকার করা। দু’টি কাজই আমি হৃদয় দিয়ে করেছি।’’ কিন্তু তাতে কি কোনও বাধা এসেছে? রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করা কি সহজ ছিল? স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে প্রশ্ন। কিন্তু রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। বরং বলেছেন, ‘‘হিংসা বা দুর্নীতি সরকার করেছে, তা বলছি না। রাজনৈতিক দলগুলি হিংসায় যুক্ত থাকতে পারে। তবে আমি মনে করি হিংসা বা দুর্নীতি হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।’’

এখানেই থামেননি বোস। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নবান্নের অভিযোগ ছিল, রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচিত করার যে বিল বিধানসভায় পাশ হয়েছিল, তাতে অনুমোদন দেননি রাজ্যপাল। মঙ্গলবার সেই বিতর্কেরও জবাব দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। বুঝিয়ে বলেছেন, সরকারের কোনও বিল আটকে রাখা হয়নি। কিছু বিল বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে, কিছু বিলের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে কিন্তু কোনও বিল পড়ে নেই রাজভবনে।

উপাচার্য নিয়োগ-সহ একাধিক বিষয়ে রাজ্যপাল আইন মানছেন না বলে দাবি করেছিল রাজ্য। এই প্রসঙ্গেও সমঝোতার বার্তা স্পষ্ট রাজ্যপাল বোসের বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের মতপার্থক্য হতে পারে, কিন্তু দু’জনকেই মানুষের কথা ভাবতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল দু’জনকেই আইন মেনে চলতে হবে।’’ কারণ রাজ্যপালের ব্যাখ্যা, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত এবং রাজ্যপাল মনোনীত। তাই দু’পক্ষকেই পরস্পরের জায়গা বুঝে কাজ করতে হবে।’’

Governor CV Ananda Bose Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy