ফাইল চিত্র।
‘মিস্টার সবং’ যেন খুনের মামলার চার্জশিটে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’। নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। অথচ, চার্জশিটে নাম বিলকুল বাদ। সবংয়ের তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানা খুনের মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার নাম বাদ পড়ার পরে এমনই আলোচনা চলছে মেদিনীপুরে।
চার্জশিটে নেই মানসবাবুর ভাই বিকাশ ভুঁইয়া ও সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পণ্ডার নামও। দলের কর্মী খুনে যাঁদের নাম জড়িয়েছে, তাঁদের তৃণমূলে অন্তর্ভুক্তিতে বিতর্ক কম হয়নি। এ বার বিরোধীদের প্রশ্ন, তৃণমূলে যোগ দিলেই কি সাত খুন মাফ!
মানসবাবুদের নাম চার্জশিটে রাখা হল না কেন? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের জবাব, “তদন্তে যাঁদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাঁদের নাম চার্জশিটে রাখা হয়নি।” জেলা পুলিশের অন্য এক কর্তার দাবি, “তদন্তে ঘটনাস্থলের আশপাশেই ওঁদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
চার্জশিট থেকে মানসবাবুর নাম বাদ গেলেও স্বামীর খুনের পিছনে তাঁর হাত রয়েছে বলেই মনে করেন মৃতের স্ত্রী মানসী জানা। তাঁর কথায়, ‘‘উনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন। দলকে ভালবাসি বলেই দলের স্বার্থে সব কিছু মেনেছি। কিন্তু স্ত্রী হিসাবে কোনও দিন কি স্বামীর খুনিকে মন থেকে মেনে নিতে পারব?”
১ ডিসেম্বর মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। মৃতের প্রতিবেশী জয়দেব মেট্যার অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা রুজু হয়েছিল। মঙ্গলবার আদালতে জয়দেব জানান, ওই তিন জনের নাম চার্জশিট থেকে বাদ রাখা হলে তাঁর আপত্তি নেই। কেন? জবাব দেওয়ার আগেই তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে ঘিরে নিয়ে বেরিয়ে যান।
তদন্তকারী অফিসার আনন্দ মণ্ডল এ দিন আদালতে ছিলেন না। ছিলেন সবং থানার ওসি। আজ, বুধবার ফের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। তদন্তকারী অফিসারকেও হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক সূত্রে খবর, কেন ওই তিন জনের নাম রাখা হয়নি, তার যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়া নেই চার্জশিটে। বুধবার তদন্তকারী অফিসারের কাছে সেই ব্যাখ্যা চাইতে পারে আদালত।
বিধানসভা ভোটের আগে গত ৮ এপ্রিল সবংয়ের দুবরাজপুরে তৃণমূল কর্মী জয়দেব খুন হন। ঘটনায় মানসবাবু-সহ ২৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযুক্তদের তালিকায় বিকাশবাবু, অমলবাবুদেরও নাম ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে ১১ জনকে ধরা হলেও পরে সকলেই জামিন পান। মানসবাবুরা আগাম জামিনের আর্জিও খারিজ হয়ে যায়। গত জুলাইয়ে মেদিনীপুর আদালতে মানসবাবু-সহ তিন জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানায় পুলিশ। মঞ্জুরও হয় আবেদন। ঘটনাচক্রে ওই দিনই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মানসবাবু। এর পরেই তাঁকে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়।
গেলেই গ্রেফতার হতে হবে এই ‘ভয়ে’ ভোটে জেতার পরে মাসকয়েক সবংয়ের ছায়া মাড়াননি মানস। গত সেপ্টেম্বর মাসে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরে গত ২৬ অক্টোবরে সবংয়ে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে সশরীরে বক্তৃতা করার সময়েও মানসকে ‘দেখতে পাননি’ জেলা পুলিশের কোনও কর্তা। আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই মানস সবং ঘোরেন ঘটা করেই। ২ নভেম্বর ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে আসীন মানস। সে দিনও পুলিশ তাঁকে ‘দেখেনি’। এর পরে মামলার চার্জশিটেও মানসবাবুদের নাম না থাকায় শাসকদলের সমালোচনায় সরব বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy