E-Paper

বিমার ফাঁদে ১৭টি গাড়ি নিয়ে নাজেহাল ‘মালিক’

ব্যক্তিগত ছবি থেকে নথি, বেহাত হচ্ছে সবই। সে সব ব্যবহার করেই ছড়াচ্ছে অপরাধের জাল। অন্ধকার সেই পথের খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ০৮:০৮
গাড়ির বিমা তো গাড়ির মালিকের নথিছাড়া হওয়ারই কথা নয়।

গাড়ির বিমা তো গাড়ির মালিকের নথিছাড়া হওয়ারই কথা নয়। —প্রতীকী চিত্র।

তাঁর নামে বিমা করানো রয়েছে ১৭টি গাড়ির! অথচ, তিনি সে সবের বিন্দুবিসর্গ জানেন না। বাণিজ্যিক গাড়ির পাশাপাশি ওই তালিকায় রয়েছে টোটোও! কিন্তু গাড়ির বিমা তো গাড়ির মালিকের নথিছাড়া হওয়ারই কথা নয়। তা হলে কি এতগুলি গাড়ির মালিক হিসাবেও তাঁরই নাম রয়েছে?

নিজের পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ির বিমা করাতে গিয়ে আচমকাই এই তথ্য সামনে আসায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার দশা ব্যাঙ্কিং পেশায় যুক্ত আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত (ফিনান্সিয়াল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট) বিশেষজ্ঞ সৌমাভ ভট্টের। পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তিনি বলছেন, ‘‘১৭টা নয় বাদই দিলাম, একটি গাড়িও যদি এ ভাবে অন্যের নামে নথিভুক্ত করানো থাকে, তা হলে তো মারাত্মক। কেউ গাড়ি কিনছেন। অথচ, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অন্যের নামে বিমা করানো হয়ে যাচ্ছে। এই সব গাড়ি কাউকে পিষে মারলে বা জঙ্গি হামলায় ব্যবহার হলে তো ফাঁসতে হবে আমাকে!’’

এই মুহূর্তে নথি কারচুপি করে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশে। কখনও দেখা যাচ্ছে, কারও নামে মোটা টাকা ঋণ রয়েছে, অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানেন না। ব্যাঙ্কের ঋণআদায়কারী লোকজন বাড়িতে আসার পরে থানা-পুলিশ করতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, ঋণ নেওয়া হয়েছে তাঁর নামে এবং তাঁরই নথি ব্যবহার করে। কখনও আবার অপরাধে ব্যবহৃত গাড়ি বা মোবাইল ফোনের মালিক হিসাবে সামনে আসছে এমন কারও নাম, যিনি হয়তো গাড়ি বা মোবাইলটি চোখেই দেখেননি। আর্থিক তছরুপের একাধিক মামলার তদন্তেও পুলিশ পৌঁছচ্ছে এমন কারও কাছে, যাঁর নথি ব্যবহার হয়েছে, অথচ তিনি সম্পূর্ণ অন্ধকারে।

সৌমাভ জানিয়েছেন, এই ঘটনার সূত্রপাত মে মাসের মাঝামাঝি। নিজের গাড়ির বিমা করানোর পরে কাগজের অপেক্ষায় থাকাকালীন তাঁর চোখে পড়ে, এসবিআই জেনারেল ইনশিওরেন্স থেকে তাঁর কাছে বিমার একটি বার্তা এসেছে। যদিও, ওই সংস্থা থেকে বিমা করাননি সৌমাভ। সেই বার্তায় যে গাড়ির বিমা করানো হয়েছে বলে কাগজ পাঠানো হয়েছে, সেটি সৌমাভর গাড়িই নয়। অথচ, কেওয়াইসি হিসাবে তাঁরই নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। নিজের ফোন ঘেঁটে এর পরে সৌমাভ দেখেন, এর আগেও এমন একাধিক বিমার কাগজ পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। সেগুলির একটি গাড়িও তাঁর নয়। কিন্তু, সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়েছে সৌমাভর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, এমনকি ইমেল!

সন্দেহ হওয়ায় এর পরে বিমা সেন্ট্রালের ওয়েবসাইটে (বিমা সংক্রান্ত তথ্যের ভান্ডার) গিয়ে সৌমাভ দেখেন, এমন ১৭টি গাড়ির বিমা রয়েছে তাঁর নামে। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখি, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বিমাগুলি করা হয়েছে। নাম তো আছেই, যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি আমার আধার কার্ডের। এটা কী ভাবে সম্ভব?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘যদি ধরেও নিই অনলাইনে কেওয়াইসি তথ্য জেনে সব করা হয়েছে, তা হলেও তোলগ-ইন করার সময়ে আমার ফোন নম্বর এবং ইমেলে ওটিপি আসার কথা। আমি তো তেমন কিছু পাইনি! তবে কি আমার সিম কার্ড ক্লোন করা হয়েছে? সেই সূত্রেই আমার ইমেল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে?’’

তদন্তে নেমে বিপাকে পড়েছে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশও। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময়ে দেওয়া নম্বর ধরে ফোন করতে গিয়ে পুলিশকর্মীরা দেখছেন, এমন লোকের কাছে ফোন যাচ্ছে, যাঁর হয়তো গাড়িই নেই। আপাতত ট্র্যাফিক পুলিশকে নম্বরগুলি দিয়ে শহরে লাগানো ক্যামেরা ধরে গাড়িগুলির হাল-হকিকত জানার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ জমা পড়েছে এসবিআই জেনারেলইনশিওরেন্সেও। ওই সংস্থা দাবি করেছে, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। এই ধরনের যাবতীয় বিমা বাতিল করা হয়েছে। তৃতীয় পক্ষকয়েক জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হয়েছে।

কিন্তু গাড়ির মালিকের নথি ছাড়া এমন বিমা চালু হয় কী ভাবে? তবে কি গাড়িগুলির মালিক হিসাবে এই ব্যক্তিরই নথি তারা পেয়েছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। লালবাজার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, থানার পাশাপাশি পরিবহণ দফতরের বিভিন্ন অফিস থেকেও এ ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Insurance Cars

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy