E-Paper

বাইক-ট্যাক্সির বাণিজ্যিক নম্বর প্লেট করাবেন ক’জন? শঙ্কা ভোগান্তির

পয়লা এপ্রিল থেকে এই পরিষেবা পেতেই কি এ বার ভাল রকম ভোগান্তির মুখে পড়তে হতে পারে সাধারণ মানুষকে? কারণ, সে দিন থেকেই হলুদ নম্বর প্লেট ছাড়া বাইক-ট্যাক্সি চালানো যাবে না।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ১০:০৯
চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আকাশছোঁয়া ভাড়া হাঁকা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আকাশছোঁয়া ভাড়া হাঁকা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

একা গন্তব্যে পৌঁছনোই হোক বা জরুরি কোনও সামগ্রী কোথাও পাঠানো, এই মুহূর্তে অন্যতম বড় ভরসা মোটরবাইক-ট্যাক্সি। কিন্তু পয়লা এপ্রিল থেকে এই পরিষেবা পেতেই কি এ বার ভাল রকম ভোগান্তির মুখে পড়তে হতে পারে সাধারণ মানুষকে? কারণ, সে দিন থেকেই বাণিজ্যিক ছাড়পত্র এবং হলুদ নম্বর প্লেট ছাড়া বাইক-ট্যাক্সি চালানো যাবে না বলে আগেই ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু ঘোষণা মতো কাজ হবে কিনা, তা নিয়ে চর্চার মধ্যেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে যে, তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাওয়ায় এক ধাক্কায় এই কাজে যুক্ত মোটরবাইক বা স্কুটারের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে না তো? সে ক্ষেত্রে পরিষেবা পেতে ভুগতে হতে পারে সেই সাধারণ মানুষকেই। চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আকাশছোঁয়া ভাড়া হাঁকা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, আজ, শনিবার এবং আগামী ২৫ মার্চ কসবার ‘রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস’ (আরটিও)-এ ব্যক্তিগত মোটরবাইক বা স্কুটারের বাণিজ্যিক লাইসেন্স করানোর শিবির হতে চলেছে। সেখানে ১৪০ টাকা আবেদন করার খরচ, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও বাণিজ্যিক লাইসেন্স করার জন্য ৭৯০ টাকা এবং পাঁচটি জেলার পারমিট বাবদ ১০৫০ টাকা জমা করতে হতে পারে। এর সঙ্গেই দিতে হতে পারে হলুদ নম্বর প্লেটের জন্য ৫০০ টাকা।

কিন্তু নিয়মিত বাইক-ট্যাক্সি চালানোর কাজে যুক্ত এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘বাণিজ্যিক নম্বর প্লেট করানো মানে নির্দিষ্ট জেলার পারমিট নিতে হবে। যার অর্থ, সংশ্লিষ্ট জেলার বাইরে মোটরবাইক বা স্কুটার নিয়ে গেলেই পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হতে পারে। ক’জন এই ঝক্কি সামলে বাণিজ্যিক লাইসেন্স করাবেন!’’ তাঁর আরও দাবি, অনেকেই সীমিত সময়ের জন্য অ্যাপ-নির্ভর সংস্থায় বাইক-ট্যাক্সি চালানোর কাজ করেন। বাণিজ্যিক নম্বর প্লেট করানোর জন্য ফি-বছর যে বাড়তি খরচ চাপবে, সীমিত সময়ের চালকেরা সেই খরচ করতে চাইবেন কি? অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাগুলিও এ বিষয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। তাদের দাবি, স্কুলপড়ুয়া থেকে অফিসের চাকুরে, বহু মানুষই হাতখরচ বা বাড়তি উপার্জনের জন্য অ্যাপ-বাইক চালান। সে ক্ষেত্রে রাতারাতি এই চালকেরা সরে যাবেন। যে হারে এই মুহূর্তে মানুষ এই পরিষেবা ব্যবহার করেন, তাতে পরিষেবা দেওয়া কঠিন হতে পারে বলে তাদের মত।

মোটরবাইক নিয়ে এমনই কাজে যুক্ত আর এক জনের আবার প্রশ্ন, একটি মোটরবাইক বা স্কুটার কমপক্ষে ১০ বছর চলে। পাঁচ-ছ’বছরের পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রেই আরটিও অফিস থেকে বাণিজ্যিক নম্বর প্লেট করানো যাবে না বলে দেওয়া হচ্ছে। এমন গাড়ির মালিকেরাই বা যাবেন কোথায়? তাঁর দাবি, ‘‘এই সুযোগে যাঁরা থেকে যাবেন, প্রচুর চাহিদার কথা ভেবে বাড়তি ভাড়া হাঁকবেন। ভুগবেন সেই সাধারণ মানুষই।’’ একই ভাবে বাইক-ট্যাক্সি সংগঠনগুলি কিলোমিটার-প্রতি ভাড়া বেঁধে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। যা এখনকার হারের থেকে কিলোমিটার-পিছু অন্তত পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি, এমনিতেই এমন পরিবহণ ব্যবস্থায় বাড়তি ভাড়া হাঁকা হয়। ভাড়া বেঁধে দেওয়ার পরে এমনিতেই বেশি টাকা খসাতে হবে সাধারণ মানুষকে। তার পরেও বাড়তি টাকা যে হাঁকা হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?

‘কলকাতা সাবার্বান বাইক-ট্যাক্সি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি শান্তি ঘোষ বললেন, ‘‘যাঁরা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করেন, তাঁদের থেকে নিয়মিত কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের স্বার্থ সুরক্ষিত হওয়া এই মুহূর্তে বেশি জরুরি। সরকার যে ভাবে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে অ্যাপ-নির্ভর সংস্থার হাতে সমস্তটা ছেড়ে দিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভাড়া বেঁধে দিয়ে বৈধ উপায়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।’’ কিন্তু দাবি পূরণে বড় অন্তরায় ঋণে কেনা মোটরবাইক বা স্কুটার। ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত সেগুলির নম্বর বদল করা হবে কী করে? প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই জটিলতা কাটাতে নম্বর একই রেখে প্লেটে হলুদ রং করে দেওয়া হবে। কিন্তু এই কাজে ঋণ দানকারী সংস্থার সম্মতি আছে তো? বাইক-ট্যাক্সি পরিষেবা ঘিরে নানা প্রশ্নের মতোই এরও উত্তর মেলে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Commercial Pupose Bike

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy