Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

হীরক বন্দরের নোঙর তুলে দলের মূলস্রোতে অভিষেক, কোন ঘটনায় ‘প্রত্যাবর্তন’ দেখছেন অনুগামীরা?

গত ৮ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালিতে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল। তার পরের দিন রাতে ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে উত্তর ২৪ পরগনার নেতা-মন্ত্রীদের সন্দেশখালি নিয়ে বৈঠকে ডেকেছিলেন অভিষেক।

The Sandeshkhali incident reactivated Abhishek Banerjee in the TMC organization

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১৭:২৩
Share: Save:

গত কয়েক মাস ধরে তাঁর ‘গুটিয়ে থাকা’ নিয়ে শাসকদল তৃণমূলে বিবিধ আলোচনা ছিল। দলের মূলস্রোত থেকে তাঁর সরে সরে থাকা, নতুন করে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক, দলের কর্মসূচিতে ছবি না থাকা নিয়েও কম কথা হয়নি। তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, দল চাইলে তিনি ডায়মন্ড হারবারের গণ্ডি ছেড়ে বেরোবেন। অর্থাৎ, তিনি ডায়মন্ড হারবারে নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। তবে গত তিন সপ্তাহের ঘটনাক্রম বলছে, অভিষেক সরে থাকা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ডায়মন্ডের হারবারের গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন। তাঁকে সেই গণ্ডি ছাড়িয়ে বার করে এনেছে সন্দেশখালি। যার সবচেয়ে বড় ‘সূচক’ ব্রিগেডের ‘জনগর্জন’ সমাবেশের ডাক।

ব্রিগেড যদি ভূমিকা হয়, তা হলে ‘সূচিপত্র’ও এসে গিয়েছে। ১০ মার্চ ব্রিগেডে সভার পরেই জেলা ধরে ধরে লোকসভা কেন্দ্রওয়াড়ি প্রচার শুরু করতে চলেছেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রের খবর, ১৪ মার্চ জেলায় প্রথম সভা করবেন তৃণমূলের সেনাপতি। ওই দিন জলপাইগুড়িতে তাঁর সভা করার কথা। ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম দিবস। ২০০৭ সালের ওই দিনেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নন্দীগ্রামে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ফলে বঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তারিখটির পৃথক মাহাত্ম্য রয়েছে। ১৬ মার্চ পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে সভা করতে পারেন অভিষেক। ১৮ মার্চ আবার অভিষেকের সভার সূচি রয়েছে উত্তর দিনাজপুরে। ২০ মার্চ অভিষেকের সভা হতে পারে বসিরহাটে। প্রসঙ্গত, বসিরহাট লোকসভার মধ্যেই পড়ে সন্দেশখালি। তার পরে সূচি ক্রমশ প্রকাশ্য।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

গত ৮ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালিতে ধারাবাহিক অশান্তির সূত্রপাত। শেখ শাহজাহানের বাহিনী গ্রামে মিছিল করতে গিয়ে গণরোষের মধ্যে পড়ে। এমনই সেই জনরোষের মেজাজ ছিল যে, গ্রাম ছেড়ে পালাতে হয় শাহজাহানের বাহিনীকে। কাউকে কাউকে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পালাতেও দেখা যায়। তার পরের দিন রাতেই ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে সন্দেশখালি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন অভিষেক। দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু এবং অশোকনগরের বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীকে নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তখনই তৃণমূলের অন্দরে চাউর হয়ে গিয়েছিল যে, অভিষেক আবার ময়দানে নেমে পড়েছেন। তৃমমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রীর নির্দেশেই তিনি সন্দেশখালি নিয়ে ‘সক্রিয়’ হয়েছিলেন। সেই সূত্রেই দলের অনেকের অভিমত, সন্দেশখালিতে গোলমাল শুরুর প্রাকপর্বেই অভিষেকের দূরে সরে থাকার উপর যবনিকা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঘটনাক্রম বলছে, সন্দেশখালির ঘটনা অভিষেকের ‘ফিরে আসা’কে ত্বরান্বিত এবং উল্লেখযোগ্য করে দিয়েছে। সেই পর্বে অভিষেকের নির্দেশেই পার্থ ভৌমিকেরা বারংবার সন্দেশখালি গিয়েছেন। মানুষের অভিযোগ শুনে জমি লিজ়ের টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে শাসক তৃণমূল। পাশাপাশি শাহজাহানের গ্রেফতারির বিষয়ে আদালতকে কাঠগড়ায় তুলে অভিষেক যে ভাবে উপর্যুপরি আক্রমণ শুরু করেন, তাতে শামিল হয় গোটা তৃণমূল। স্পষ্ট হয়ে যায়, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে যখন বিরোধীরা ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছে, তখন অভিষেকের বেঁধে দেওয়া লাইনেই পাল্টা প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল।

পার্থ-সুজিতদের সন্দেশখালি পাঠানের নেপথ্যেও অভিষেকের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল বলেই অভিমত দলের অন্দরে অনেকের। উত্তর ২৪ পরগনায় একটি অভিন্ন কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মাথায় বসানো হয়েছিল বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষকে। কিন্তু গোটা সন্দেশখালি পর্বে নির্মল ওরফে নান্টুকে কোথাও দেখা যায়নি। দেখা গিয়েছে ঠান্ডা মাথার পার্থ এবং সংগঠন সম্পর্কে বুঝদার সুজিতকে। ঘটনাচক্রে, ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে সুজিত বসিরহাটে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

বস্তুত, শাহজাহানকে গ্রেফতারের আগে তৃণমূল যে ‘প্রেক্ষাপট’ রচনা করেছিল, তাতেও দলের অনেকে অভিষেকের ‘রাজনৈতিক নকশা’ দেখতে পেয়েছিলেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার অনলাইনকেই অভিষেক প্রথম বলেছিলেন, ‘‘আদালত পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে বলেই রাজ্য পুলিশ শাহজাহানকে ধরতে পারছে না।’’ তৃণমূলের সেনাপতির এ-ও বক্তব্য ছিল যে, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ যদি কাশ্মীরের বাটালিক থেকে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করতে পারে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, তা হলে শাহজাহান শেখ কে?’’ তার পর গত রবিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র মহেশতলা থেকেও অভিষেক একই কথা বলেছিলেন। তার পর দেখা যায়, গত সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলে, শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করতেই পারে। আদালতের কোনও বাধা নেই। যাকে তৃণমূল এই বলে ব্যাখা করে যে, ‘‘অভিষেকের কথা শুনেই ওই নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছে আদালত।’’ পাশাপাশিই আদালতের ওই বক্তব্যের পর গত ৭ ফেব্রুয়ারির রায়ের প্রতিলিপি সমাজমাধ্যমে দিয়ে সমগ্র তৃণমূল দাবি করতে থাকে, ওই রায়েই রাজ্য পুলিশের হাতে শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

শেষমেশ গত বৃহস্পতিবার কাকভোরে মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার আগে থেকেই লোকসভা ভোটের প্রচার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেন অভিষেক। ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়ার রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই কর্মসূচিতে প্রশাসনের পাশাপাশি দলকেও শামিল করে দেন। তখনই দলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, কেন্দ্র-বিরোধী আখ্যান তৈরি করেই লোকসভা ভোটের প্রচারে নামবে তৃণমূল। সেই প্রচারেরই সূচনা হবে ব্রিগেডে।

দলের অন্দরে অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত নেতারা আপাতত ‘আশ্বস্ত’ যে, যুদ্ধের ময়দানে পুরোদস্তুর নেমে পড়েছেন দলের সেনাপতি। তেমনই এক নেতার কথায়, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে আমাদের পুরোটাই নেতিবাচকতার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ইতিবাচক দিক এই একটাই— অভিষেক আবার স্বমহিমায় লড়াইয়ের ময়দানে।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE