Advertisement
Back to
Narendra Modi Abhishek Banerjee

শুক্র-শনির জোড়া সভায় মোদীর মুখে নেই ‘ভাতিজা’, তবে আরামবাগে ব্যবহার করেছিলেন ‘দিদি’ শব্দবন্ধ

নেতানেত্রীরা যা বলছেন, তা এক রকম। আর যা বলছেন না, তার নেপথ্যেও সুনির্দিষ্ট কারণ বা পরিকল্পনা থাকে। মোদীর আক্রমণের বন্ধনীতে ‘ভাতিজা’ না থাকায় তাই প্রত্যাশিত ভাবেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

Narendra Modi did not attack Abhishek Banerjee in both public meetings on Friday and Saturday

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩৪
Share: Save:

শুক্রবার আরামবাগের কালীপুরের মাঠ কিংবা শনিবার কৃষ্ণনগর— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জোড়া সভায় তৃণমূলের উদ্দেশে শানিত আক্রমণ ছিল। কিন্তু এক দিনও প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গেল না অতীতে তাঁর মুখে বহু ব্যবহৃত ‘ভাতিজা’ শব্দটি। অথচ ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে এই শব্দকেই কার্যত তাঁদের বাঁধা লব্জ করে ফেলেছিলেন মোদী-সহ বিজেপি নেতারা! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে বিজেপির নেতারা ওই শব্দটি ব্যবহার করতেন। তবে দু’টি জনসভাতেই ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে সরব ছিলেন মোদী। অনেকেই মনে করছেন ‘ভাইপো’ শব্দটি উল্লেখ না-করলেও ‘পরিবারবাদ’-এর কথা বলে পরোক্ষে বিষয়টি ছুঁয়ে গিয়েছেন মোদী।

তৃণমূলের সেনাপতি তথা পারিবারিক সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেককে আক্রমণ করতে গিয়ে ‘ভাতিজা’ (ভাইপো) শব্দটি একদা নিয়মিত ব্যবহার করতেন মোদী, অমিত শাহেরা। বস্তুত, ‘বুয়া-ভাতিজা’ (পিসি-ভাইপো) বলে একযোগে এবং একই বন্ধনীতে রেখে মমতা-অভিষেককে আক্রমণ করতেন পদ্মশিবিরের নেতারা। শুক্রবার আরামবাগের সভায় মোদীর মুখে ‘দিদি’ শব্দটি শোনা গিয়েছিল। সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলে মোদী বলেছিলেন, ‘‘দিদি, কিছু ভোটের জন্য আপনি মা-বোনেদের ইজ্জতকে বন্ধক দিতে চাইছেন? ভাবলেও লজ্জা হয়, পশ্চিমবঙ্গে কী জমানা কায়েম হয়েছে!’’

রাজনীতিতে একটি প্রচলিত কথা হল, নেতানেত্রীরা যা বলছেন, তা এক রকম। আর যা বলছেন না, তার নেপথ্যেও সুনির্দিষ্ট কারণ এবং পরিকল্পনা থাকে। মোদীর আক্রমণের বন্ধনীতে ‘ভাতিজা’ না থাকায় তা-ই আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। উল্লেখ্য, আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগরে মোদীর আগে বক্তৃতা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁরাও কেউ অভিষেককে নিশানা করে কিছু বলেননি। বরং সুকান্ত-শুভেন্দু দু’জনেরই আক্রমণের অভিমুখ ছিল মমতার দিকেই। শনিবার তো সরাসরি ‘মমতা চোর’ বলেও মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু। মহুয়া মৈত্রের সমালোচনা করতে গিয়ে সুকান্ত মমতার কথাই উল্লেখ করে সমালোচনা করেন।

বামেরা বরাবরই তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ‘সেটিং’ তত্ত্ব নিয়ে সরব। মোদীর বক্তৃতায় অভিষেকের প্রসঙ্গ না-থাকা নিয়ে ফের সেই মর্মেই অভিমত জানাতে শুরু করেছেন সিপিএম নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী শনিবার বলেন, ‘‘আমি তো কবে থেকেই বলছি, বাংলার একনাথ শিন্ডে হতে পারেন ভাইপো। যিনি শিন্ডে হতে পারেন, তাঁকে খামোখা মোদী আক্রমণ করতে যাবেন কেন?’’ প্রসঙ্গত, বাম-কংগ্রেসের নেতারা কয়েক মাস ধরেই অভিষেক সম্পর্কে ‘বাংলার শিন্ডে’ হওয়ার অনুমান বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিষেককে প্রশ্নও করা হয়েছিল। অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আমি আগেও যা বলেছিলাম, এখনও তাই বলছি। আমি সংগঠনের কাজেই নিজেকে যুক্ত রাখতে চাই। প্রশাসনে যাওয়ার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।’’ বাংলায় শিন্ডে বা পওয়ারের কথা উল্লেখ করে যাঁরা ‘গুঞ্জন’ তৈরি করছেন, তাঁদের সেই সমস্ত বক্তব্যকে ‘বোগাস’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন অভিষেক। পাশাপাশি এ-ও বলেছিলেন, ‘‘এ কথা আমার কানে কখনও আসেনি। তবে যাঁরা এ সব কথা রটাচ্ছেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন! আমার গলা কেটে ফেললেও ‘জয় বাংলা’ আর ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’ বেরোবে!’’

রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, অভিষেককে ‘গুরুত্ব’ না দিতেই মোদী এবং বিজেপি নেতারা তাঁর নাম বা ‘ভাতিজা’ অথবা ভাইপো’ বলছেন না। তবে বলছেন যে না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শুক্র-শনির জোড়া সভায়। ঘটনাচক্রে, ওই দু’টি সভাই ছিল লোকসভা ভোটের প্রচার। এখন দেখার, লোকসভা ভোটের ধারাবাহিক প্রচারেও মোদী-শাহ বা সুকান্ত-শুভেন্দু ‘ভাইপো’ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE