Advertisement
E-Paper

‘খুনি বাহিনীর মতো এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল মিছিলটা’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিনিট দশেক তাণ্ডব চালিয়ে, শিক্ষাঙ্গনের লোহার গেটে পদাঘাত, লাঠিপেটা করে, পুলিশের ব্যারিকেড ছুড়ে ফেলার আস্ফালন দেখিয়ে শিরা ফুলিয়ে তারা স্লোগান তুলল, ‘জয় শ্রীরাম’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০১:৫৯
রণাঙ্গন: ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা। মঙ্গলবার, কলেজ স্ট্রিটে। ফাইল চিত্র

রণাঙ্গন: ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা। মঙ্গলবার, কলেজ স্ট্রিটে। ফাইল চিত্র

ডিজে বক্সের প্রবল আওয়াজও তখন ছাপিয়ে যাচ্ছে ‘মার মার’ চিৎকারে। গেরুয়া উত্তরীয় পরা উন্মত্ত যুবকদের থামাতে তখন হাত জোড় করে অনুরোধ করছেন পুলিশকর্মীরা। পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে রোড শোয়ের উঁচু গাড়ি থেকে কড়া ধমকে হিন্দিতে নেতার নির্দেশ এল, ‘‘আগে বাড়ো।’’

ঠিক যেন এই নির্দেশেরই অপেক্ষায় ছিল জনা দেড়শোর ভিড়টা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিনিট দশেক তাণ্ডব চালিয়ে, শিক্ষাঙ্গনের লোহার গেটে পদাঘাত, লাঠিপেটা করে, পুলিশের ব্যারিকেড ছুড়ে ফেলার আস্ফালন দেখিয়ে শিরা ফুলিয়ে তারা স্লোগান তুলল, ‘জয় শ্রীরাম’। বিধান সরণিতে পৌঁছে নেতা অধিষ্ঠিত গাড়ির সামনের অংশের তুলনায় হঠাৎই ভিড়টা যেন বেড়ে গেল গাড়ির পিছনের দিকে। বিদ্যাসাগর কলেজের ভিতর থেকে তখন স্লোগান উঠছে, ‘‘অমিত শাহ গো ব্যাক!’’ হঠাৎ মুড়ি-মুড়কির মতো উড়তে শুরু করল ইট, কাচের বোতল। জনা কুড়ির দল কাঁধে করে এক ফুটপাত থেকে আর এক ফুটপাতে টেনে নামাল সাইকেল। গলা ফুলিয়ে তাদেরই হিন্দিতে চিৎকার, ‘‘দেশলাই দে দেশলাই।’’ সাইকেলে আগুন লাগিয়ে তারা টেনে নামাল একটি মোটরবাইক। মুহূর্তে শহর কলকাতার রাজপথ যেন জ্বলতে থাকা হিংসার চিত্র। মঙ্গলবারের সেই আতঙ্ক, ঘটনার এক দিন পরেও কাটিয়ে উঠতে পারেননি বিদ্যাসাগর কলেজের পড়ুয়ারা। কলেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে আশপাশেও।

বুধবার এলাকার মানুষ জানান, সেই বাহিনীকে পাল্টা দিতে বিদ্যাসাগর কলেজের ভিতর থেকেও ইট পড়তে শুরু করল রাস্তার দিকে। জনা পঞ্চাশের দল এর পরে ভেঙে ফেলে বিদ্যাসাগর কলেজের বিধান সরণি ক্যাম্পাসের বাইরের গেটের তালা। তার পরে কলেজের আরও একটি গেট ভাঙা শুরু হয়। তবে যে গেট ভাঙা হচ্ছিল, তা দিয়ে ভিতরে ঢোকা সম্ভব নয়। সামনেই লোহার আলমারি। এর পরে হামলাকারীদের নজর যায় পাশের একটি দরজায়। লাথি, বাঁশের ঘায়ে সেই গেট ভেঙে পড়লে ভিতরে ঢোকে গেরুয়া উত্তরীয়ধারীরা। তারা নিশানা করে কলেজের দু’টি অফিস কাউন্টার। বাঁশ দিয়ে মেরে কাউন্টারের কাচ ভেঙে ফেলে তাদের চোখ পড়ে কাচে ঢাকা বাক্সে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে। লাঠির বাড়িতে গুঁড়ো হয় সেই কাচ। তখন শুরু হয় মূর্তি ভাঙা। বিদ্যাসাগরের মূর্তির মাথার অংশ হাতে নিয়ে বাইরে এসে, সেটি আছড়ে ভাঙা হয় বিধান সরণির ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তায়। শানু মাকাল নামে বিদ্যাসাগর কলেজের এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘তখন ভয়ে আমরা ভিতরে ঢুকে তালা এঁটে দিয়েছি। অনেক রাতে পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে। ফিরে দেখি, সিসি ক্যামেরাগুলিও ভাঙা। যদিও ওই ক্যামেরা বেশ কিছু দিন ধরেই খারাপ ছিল।’’

এ ভাবেই হামলা চালানো হয় বিদ্যাসাগর কলেজে।

শহরে অমিত শাহের প্রথম রোড শো ঘিরে এমনই শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে বিদ্যাসাগর কলেজেরই ছাত্রী সুরঙ্গনা এর সঙ্গে মিল পাচ্ছেন সুলতান মামুদের। এই আফগান ইতিহাসের পাতায় ‘বীরযোদ্ধা’ হলেও ভারতের ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে অত্যাচারী হিসেবে। সতেরো বার ভারত আক্রমণ করে লুটপাট, মন্দির ধ্বংস, নির্বিচারে হত্যালীলা, নারী নির্যাতন চালান তিনি। সুরঙ্গনা বলেন, ‘‘মামুদের খুনি বাহিনীর মতো এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল মিছিলটা। সামনে যা পাচ্ছে, তা-ই নিশানা করছে। যেন সব ধ্বংস করে দেবে।’’

মঙ্গলবার যাঁর নির্বাচনী প্রচারের জন্য রোড শো হয়েছিল, সেই বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ বুধবার বলেন, ‘‘মূর্তি কারা ভেঙেছে, তার ফুটেজ দেখান কলেজ কর্তৃপক্ষ। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছে।

কলেজের ভিতর থেকেই ঢিল ছোড়া হয়েছে।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো দেখিয়ে বলেছেন, ‘‘গেরুয়া উত্তরীয় পরারাই মূর্তি ভেঙেছে!’’ রাহুলের উত্তর, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী চোখে ভাল দেখছেন না।’’ উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষ সব দেখছেন। খুব দ্রুত জবাব পাবে ওরা।’’

Vidyasagar College Vandalization অমিত শাহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Mamata Banerjee BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy