প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গিকে ‘নোটিফায়েবল ডিজিজ’ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার কোনও প্রয়োজন আছে বলেই মনে করে না রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ডেঙ্গি নিয়ে একগুচ্ছ জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে গত কালই হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জানিয়েছিলেন, ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্য কোনও গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি, তার দরকারও নেই। স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, ২০১৪ সালে ডেঙ্গিকে এ রাজ্যে ‘নোটিফায়েবল ডিজিজ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর বক্তব্য, বিধানসভায় বিল পাশ করে যে নির্দেশগুলি দেওয়া হয়, তার জন্য গেজেট নোটিফিকেশন বাধ্যতামূলক। তাঁর কথায়, ‘‘এটা একটা প্রশাসনিক নির্দেশ। এর জন্য গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে তো সমস্ত সরকারি বদলির ক্ষেত্রেও গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়!’’
স্বাস্থ্য অধিকর্তার এই যুক্তিতে স্তম্ভিত রাজ্যের চিকিৎসক মহল। তাঁদের বক্তব্য, গোটা রাজ্য যেখানে ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কিত, সেখানে প্রশাসনিক স্তরে এমন নির্লিপ্ত মনোভাব যথেষ্টই উদ্বেগের। কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সরকারি ডাক্তারদের লেখা প্রেসক্রিপশনকেও এখন অগ্রাহ্য করার প্রবণতা শুরু হয়েছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইদানীং বহু সময়েই রায় দিচ্ছেন আমলারা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে খুবই খারাপ সময় চলছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকার ডেঙ্গিকে ‘নোটিফায়েবল ডিজিজ’ বলে ঘোষণা করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কিন্তু যে হেতু স্বাস্থ্য বিষয়টি কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ তালিকায় রয়েছে, তাই ডেঙ্গি প্রভাবিত বিভিন্ন রাজ্যকে কেন্দ্রের পরামর্শ ছিল, রোগটিকে নোটিফায়েবেল ডিজিজ বলে ঘোষণা করে গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হোক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সেই পরামর্শ মানেনি। কেন্দ্রের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্যই দিল্লিতে পাঠাচ্ছে না। গোটা দেশে ডেঙ্গি চিত্র তাই পরিষ্কার হচ্ছে না দিল্লির কাছে। কোথায়, কোন শ্রেণির মানুষের মধ্যে ওই রোগ ছড়াচ্ছে, তা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার কেউই সঠিক ভাবে জানতে পারছে না। অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র অন্য পথে হাঁটায় ওই সব রাজ্যে কোথাও ডেঙ্গি হলে বা ডেঙ্গির উপসর্গ মিললে সেই তথ্য সোজা চলে আসছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে। কেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ডেঙ্গিকে ‘নোটিফায়েবল ডিজিজ’ ঘোষণা করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, কোথাও কোনও রোগের ব্যাপক সংক্রমণ হলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই দেশগুলিকে অর্থ সাহায্য দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই টাকা বিভিন্ন রাজ্যকে ভাগ করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কোন রাজ্য কী কী তথ্য পাঠাচ্ছে, তার উপরে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বরাদ্দ ঠিক হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, কোনও রাজ্য থেকে কোনও সংক্রামক রোগ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পেতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ভুক্তভোগী রাজ্যগুলিকে সংশ্লিষ্ট রোগকে ‘নোটিফায়েবেল ডিজিজ’ ঘোষণা করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পরামর্শ দেয়। ‘‘সংশ্লিষ্ট রাজ্য ওই অনুরোধ মানতে বাধ্য নয় ঠিকই, তবে ওই গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি ডেঙ্গি রোগীদের প্রত্যেকের হিসেব দিতে বাধ্য থাকত। তথ্য গোপন করে ডেঙ্গি আক্রান্তের সঠিক তথ্য কেন্দ্রকে না দিলে এ রাজ্যই টাকা কম পাবে,’’ মন্তব্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওই কর্তার। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার নিজের ভাল বুঝতে পারছে না। সঠিক তথ্য না পৌঁছনোয় ভবিষ্যতে রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনাই তৈরি করা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy