তিন বছর ধরে ফেরার পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণের মূল অভিযুক্ত কাদের খান। আবার শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত যে, বেসরকারি রক্ষী সরবরাহ সংস্থার মালিক সেই অরূপ দেবনাথেরও পাত্তা নেই দেড় বছর হয়ে গেল। কলকাতা পুলিশের দীর্ঘ দিনের ফেরার-তালিকায় এ বার জুড়তে চলেছে গোপাল তিওয়ারির নামও।
গত ১৮ এপ্রিল কলকাতা পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে সাব ইন্সপেক্টর জগন্নাথ মণ্ডলের উপরে গুলিচালনার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গোপালের হদিস এক মাসেও লালবাজার পেল না। গা ঢাকা দেওয়ার প্রথম ক’দিন গোপালের মোবাইল নম্বর ‘ট্র্যাক’ করে তার গতিবিধি কিছুটা হলেও গোয়েন্দারা বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু গত দিন পঁচিশ হল, ফোনও বন্ধ! ‘‘বৌ-ছেলের সঙ্গেও ও কোনও যোগাযোগ রাখছে না! আমরা বেশ ধন্দে পড়ে গিয়েছি।’’— কবুল করছেন এক তদন্তকারী।
গিরিশ পার্ক কাণ্ডে এ পর্যন্ত দশজন ধরা পড়েছে। সকলেই গোপালের শাগরেদ। অথচ তাদের জেরা করেও পান্ডার খোঁজ মেলেনি। যদিও পুলিশের নিচু তলার একাংশ এর মধ্যে ‘অন্য গন্ধ’ পাচ্ছেন। কী রকম?
ওঁদের দাবি: পার্ক স্ট্রিটের মূল অভিযুক্ত কাদেরকে পুলিশ ইচ্ছে করে পালাতে দিয়েছিল। শর্ট স্ট্রিটে অরূপ দেবনাথ ঘটনার পর দিন অনেক বেলা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে থাকলেও পুলিশ তার সন্ধান পায়নি! এবং একই ভাবে গোপালকেও যে পুলিশেরই একাংশ পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে, জগন্নাথবাবুর সহকর্মীদের অনেকেই গোড়া থেকে এমন অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের একটি মহল এখন গোপালকে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে সে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। যে প্রসঙ্গে আলিপুর কাণ্ডে পুলিশ নিগ্রহে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার সাম্প্রতিক জামিন লাভের কথাও শোনা যাচ্ছে ওঁদের মুখে।
গিরিশ পার্ক থানার এসআই জগন্নাথবাবুর সঙ্গে ১৮ এপ্রিল যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁদের অনেকের আক্ষেপ, লালবাজারের গোয়েন্দাদের একাংশ সে দিন ওখানে না-গেলে স্থানীয় থানাই গোপালকে পাকড়াও করে ফেলত। ‘‘কিছু গোয়েন্দাই থানার পুলিশকে বিভ্রান্ত করে গোপালকে পালানোর সুযোগ করে দিল।’’— অনুযোগ নিচু তলার এক পুলিশকর্মীর। ওঁরা বলছেন, গোয়েন্দা বিভাগের সংশ্লিষ্ট অংশটির সঙ্গে গোপালের ‘দহরম-মহরম’ নিয়ে তদন্তের দাবি উঠলেও লালবাজারের কর্তারা তাতে আমল দেননি।
নিচু তলার সূত্রে জানা য়াচ্ছে, গোপাল ফেরার হওয়ার কিছু দিন বাদে তার পাথুরিয়াঘাটার বাড়িতে হানা দিয়ে তদন্তকারীরা কিছু ব্যবসায়িক কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। এ রাজ্য ও ভিন রাজ্যে থাকা গোপালের আত্মীয়-বন্ধুদের সম্পর্কে কিছু তথ্যও তাঁদের হাতে আসে। আখেরে কাজের কাজ কিছু হয়নি। উপরন্তু তদন্তকারীরা তখন বুঝতেই পারেননি যে, ওই বাড়িতে রয়েছে অস্ত্রাগার, পরে যেখান থেকে বিস্তর বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
লালবাজারের কর্তারা অবশ্য এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ওঁদের বক্তব্য: ইতিমধ্যে আদালত থেকে গোপালের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এ বার ফেরার অভিযুক্তেরা ধরা না-দিলে কিংবা গ্রেফতার না-হলে গোয়েন্দারা কোর্টে আবেদন করবেন হুলিয়া জারির জন্য। তার পরেও অভিযুক্তেরা অধরা থাকলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আর্জি জানানো হবে।
‘‘ওদের ধরাট পড়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’— প্রত্যয়ী মন্তব্য এক কর্তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy