কলিমুল হক ও মিশা ঘোষাল
ওঁরা যখন দায়িত্ব নেন তখন স্কুলগুলোতে ‘নেই’-এর তালিকা বেশ লম্বা। পরিকাঠামো, পড়াশোনার মান— একটু একটু করে বদলেছেন সব। তারই স্বীকৃতি হিসেবে এ বার জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পাচ্ছেন রাজ্যের দু’জন। দুর্গাপুরের নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কলিমুল হক এবং আলিপুরদুয়ারের টোটোপাড়া ধনপতি মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিশা ঘোষাল।
বিহারের আদি বাসিন্দা কলিমুল ভূগোলে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করেছেন। ২০১০-এ দুর্গাপুরের স্কুলটির প্রধান শিক্ষক হন। এক সময় স্কুলে পর্যাপ্ত ঘর ছিল না। শিক্ষকদের নিয়ে কলিমুল বিভিন্ন সংস্থার কাছে স্কুলের উন্নয়নের জন্য আর্জি জানান। সংস্থাগুলির সামাজিক উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ভোল বদলায় স্কুলের। ২০১৩, ২০১৭, ২০১৯-এ যথাক্রমে এই স্কুল ‘নির্মল বিদ্যালয়’, ‘শিশুমিত্র’ এবং ‘যামিনী রায় পুরস্কার’ পায়। ২০১৯-এ কলিমুল হন ‘শিক্ষারত্ন’। প্রধান শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলে পরিকাঠামো, পড়াশোনার মানোন্নয়ন, পরিবেশ সচেতনতা, নিয়মানুবর্তিতার দিকে নজর দিয়েছি। হয়তো তারই স্বীকৃতি এই পুরস্কার।’’
মিশা জানাচ্ছেন, ২০০৮ সালে যখন আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলের দায়িত্ব পান, সে বছর সেখান থেকে মাধ্যমিকে বসে ৩৫ জন। পাশ করে দু’জন। এমনও বছর গিয়েছে, যখন কেউ পাশ করতে পারত না। কারণ, স্কুলে সে ভাবে ক্লাস হত না। গণিতে স্নাতকোত্তর এই প্রধান শিক্ষিকার পর্যবেক্ষণ, ‘‘তখন মাদারিহাট থেকে একটাই গাড়ি চলত। ওই গাড়ি ধরার জন্য শিক্ষকেরা দ্রুত স্কুল ছুটি দিয়ে দিতেন।’’ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করেন মিশা। ফলও মেলে হাতেনাতে। পড়ুয়াদের রেজাল্ট ভাল হতে শুরু করে এই স্কুল থেকে। টোটোপাড়ার এই স্কুলে পৌঁছতে গেলে মাদারিহাট থেকে বাইশ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরোতে হয়। মিশা বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির কাছে টোটোপাড়ার যোগাযোগের কঠিন সমস্যার কথা জানাব। স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং টোটোদের আর্থ-সামাজিক সমস্যার কথা তুলে ধরব।’’
জাতীয় পুরস্কারের জন্য বীরভূম, কলকাতা, নদিয়া, দার্জিলিঙের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত তালিকায় মিশা ও কলিমুলই মনোনীত হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy