তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত তারকা না হলেও বাংলার অন্যতম সেরা নাট্য ব্যক্তিত্ব। নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়েও আড়াল নেই খুব একটা। বামপন্থাকে সমর্থন করলেও নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর পর পথে নামতে দ্বিধা করেননি। পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নাট্য স্বজন’ মঞ্চে সামিল ছিলেন, দায়িত্ব নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমিরও। আবার কাজের স্বাধীনতা নেই, এই অভিযোগে সেই পদ ছাড়তেও পিছপা হননি।
স্বভাবতই এই রকম প্রখর রাজনৈতিক ভাল লাগা-খারাপ লাগা বোধ সম্পন্ন নাট্যকার মনোজ মিত্রের সঙ্গে জনসম্পর্ক অভিযান করার সময় মেপেই পা ফেলতে হল মুকুল রায়কে। রবিবার সল্টলেকের বৈশাখীতে মনোজ মিত্রর সঙ্গে দেখা করার সময় যথেষ্ট সাবধানী ছিলেন মুকুল। সম্ভবত মাথায় রেখেছিলেন, কয়েকদিন আগেই তাঁর দলীয় সতীর্থ রাহুল সিংহের সঙ্গে চিত্রতারকা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জনসম্পর্ক যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা। সেই অভিজ্ঞতা যে রাহুল সিংহের খুব একটা সুখকর হয়নি তা বলাই বাহুল্য।
রবিবার দুপুর সওয়া বারোটা নাগাদ মনোজ মিত্রের বাড়িতে পৌঁছন তিনি। প্রায় কুড়ি মিনিট তাঁর সঙ্গে সময় কাটিয়ে বেরোনর পর খুব সন্তর্পণে রাজনীতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। মুকুল বলেন, “নাট্য জগতে মনোজ মিত্র একটা বড় নাম। আমি মনোজদাকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাই জনসম্পর্ক যাত্রার অংশ হিসেবে তাঁর সঙ্গে কথা বললাম। তাঁকে বলেছি যাতে তাঁর নাটক ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়। মানুষ দেখতে পাবে।”
আরও পড়ুন: ‘কত লোকই তো রোজ আসেন’, রাহুল বেরোতেই বিরক্তি সৌমিত্রের গলায়
উল্টোদিকে বর্ষীয়ান এই নাট্যকার, যিনি এই রাজ্যের অনেক রাজনৈতিক উত্থান পতন দেখেছেন, তিনিও যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে। তাই মুকুল রায়ের দেখা করা প্রসঙ্গে তাঁর সোজা সাপ্টা বক্তব্য, “যখন থেকেই শুনেছি উনি আসবেন, তখন থেকেই স্টিফ হয়ে আছি। গোটা বিষয়টি সম্পর্কে আমি নীরব। এটা তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ। নিশ্চয়ই এর সঙ্গে ভোটের যোগাযোগ আছে। এটা হয়তো ভোটার প্রচার, এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।”
দেখুন ভিডিয়ো
এই রকম বাউন্সার যে আসতে পারে তা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন অভিজ্ঞ মুকুল। তাই নাটকের সঙ্গে রাজনীতির প্রসঙ্গ যে মুকুল অবতারনা করেননি, তা স্বীকার করেন মনোজবাবুও, “নাটকের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। জানলেন থিয়েটার কী করছি। উনি চারটে নাটক বেছে দিতে বলেছেন। সেগুলি ওনারা ভিডিয়ো রেকর্ড করবেন।”
মোদী সরকারের সাফল্যের খতিয়ান মুকুল তুলে দিয়েছেন মনোজ বাবুর হাতে। কিন্তু সেটাকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়াতেই বেশি জোর দিতে দেখা গেল তাঁকে। তাই হয়তো সতীর্থর সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার রেশ টেনেই মুকুলের আত্মবিশ্বাসী স্বর, “উনি উত্তর কিছু দেননি। তবে তিনি অখুশি নন।”
দেখুন ভিডিয়ো