Advertisement
E-Paper

মেজাজ পাল্টে, মাঠ আগলে ওঁরাই কারিগর

আঁধার-কালো স্করপিও’র গায়ে কোনও আঁচড় নেই। সামনের দরজাটা খুলে মাটিতে পা রেখেই দু’হাত এমন ভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি যেন, এই বার শুরু হবে তাঁর উড়ান। সেই প্রসারিত হাত গলে গায়ে উঠে আসছে কালো জহর কোট।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০৪:১৪
জয়: মিরিকে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীরা। ডুয়ার্সের রিসর্টে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

জয়: মিরিকে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীরা। ডুয়ার্সের রিসর্টে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

আঁধার-কালো স্করপিও’র গায়ে কোনও আঁচড় নেই। সামনের দরজাটা খুলে মাটিতে পা রেখেই দু’হাত এমন ভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি যেন, এই বার শুরু হবে তাঁর উড়ান। সেই প্রসারিত হাত গলে গায়ে উঠে আসছে কালো জহর কোট। তার পর, যেন নিজের জগতে উড়ে যাচ্ছেন তিনি।

ছবিটা বছরখানেক আগের। বিধানসভা ভোটের আগে, ডোমকলের বিডিও মোড়ে গাড়ি থামিয়ে, জনা কুড়ি সাগরেদ নিয়ে এ ভাবেই জহর কোট গলিয়ে হেঁটে যেতেন, মনে পড়ছে?

প্রায় সাতানব্বই শতাংশ ভোট কুড়িয়েও কিঞ্চিৎ নির্লিপ্ত তাঁর গলা, ‘‘ও সব আর মনে রাখতে চাই না। তখন বড্ড অপিরণত ছিলাম তো। চার পাশে যাঁরা ছিল তাঁদেরও চিনতে ভুল হয়েছিল।’’ বুধবার বিকেলে অকপট সৌমিক হোসেন।

ডোমকল ‘দখলের’ কারিগর, তৃণমূলের যুব নেতার মনে হচ্ছে, গত বারের ‘ভুল’গুলো আমূল শুধরে নেওয়াতেই এমন সাফল্য এসেছে। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা ধরিয়ে দিচ্ছেন, হাঁটাচলা-কথাবার্তা, তাঁবেদার পরিবেষ্ঠিত সেই ঔদ্ধত্যের ‘ভুল’ মুছে এ বার, নিতান্ত আটপৌরে পাজামা-পাঞ্জাবিতে ডোমকলের দরজায় দরজায় কড়া নেড়ে প্রায়শ্চিত্তটা সেরে ফেলেছেন সৌমিক। সঙ্গে ঘরের লোক হতে বদলে ফেলেছেন, বহরমপুরের পেল্লাই বাড়ির ঠিকানা এমনকী ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্রও, তিনি এখন আদ্যন্ত ডোমকলের।

যা শুনে মৃদু হাসছেন, ডোমকলের দায়িত্বে থাকা সিপিএম নেতা নারায়ণ দাস, ‘‘বদলটা কারও স্বভাব চরিত্রের ঘটেনি, ঘটেছে পেশি শক্তির। আর তার জোরেই মানুষকে ঘরে আটকে ভোট করল তৃণমূল।’’

আরও পড়ুন: স্বামীকে মারছে প্রেমিক, ‘লাইভ’ শুনল

পাহাড় থেকে পূজালি— এই কারিগরদের হাত ধরেই ভোটটা যে পেরিয়ে এসেছেন তাঁরা মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের এক তাবড় মন্ত্রী। তবে, বিজেপি-র এক রাজ্য নেতা বলছেন, ‘‘জেনে রাখুন, এই কারিগরদের দাপাদাপি ছাড়া পুর ভোট উতরোতে পারত না তৃণমূল।’’

কলকাতার কোল ঘেঁষা পূজালির পুরবোর্ডে ঢালাও সাফল্যে এলেও, আড়ালে যে বাহুবলীর ছায়া পড়েছে, তা শুধু বিজেপি কেন, অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদেরই এক জনের অনুযোগ, ‘‘প্রচারে আসা অভিষোক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা পই পই করে বললাম, নিতান্ত ঠান্ডা জায়গা, কোনও গোলমাল হবে না আপনারা অনায়াসে জিতবেন।’’ সে কথা শুনল কে? তৃণমূলের অন্দরের খবর, পূজালির স্থানীয় দুই নেতার বিরোধ সামাল দিতে ভোটের দায়িত্ব বেঁটে দেওয়া হয়েছিল দু’জনকেই। তাতে বিপত্তি বেড়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রভাবশালী নেতা বলছেন, ‘‘বাধ্য হয়ে তলব হয়েছিল ক্যানিংয়ের ভোট-কারিগর শওকত মোল্লার। শওকতের দলবল ওই দাপাদাপিটা না দেখালে বোর্ডটা নিশ্চিত ছিল না আমাদের।’’ যুযুধান দুই বিরোধী গোষ্ঠীকে ধমকে, বিজেপি’কে ‘বকাঝকা’ করে, শওকতই যে পূজালি তুলে দিয়েছেন শাসক দলের হাতে, মানছেন দলের তাবড় নেতারাও।

তবে, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির গড়, রায়গঞ্জ থেকে কংগ্রেসের শেষ ইটটুকুও খুলে নেওয়ার কারিগর পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে তেমন কোনও বাহুবলীর আশ্রয় নিতে হয়নি। দলের এক শীর্য নেতা বলছেন, ‘‘আরে বাবা, কারিগর মানেই যে, হাতে বোমা-বন্দুক তুলে নিতে হবে এমন কোনও কথা আছে?’’

পাহাড়ে পড়ে থেকে, যে কাজটা সেরে রীতিমতো পাড়ার ‘দাজু’ হয়ে গিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাহাড়ে তাঁর যাতায়াত নতুন নয়। গত চার মাসে পাহাড়ের ৮৪ টা ওয়ার্ডের প্রায় সব ক’টি ঘুরে নেপালি ভাষাও খানিক রপ্ত করে ফেলেছেন তিনি। উত্তরবঙ্গের এক দাপুটে নেতা মেনে নিচ্ছেন, ‘‘জিততে পারিনি। কিন্তু মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে যে পায়ের
তলায় জমি ফিরে আসে, অরূপ সেটা দেখিয়ে গেল।’’

TMC Municipality election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy