Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মানুষের ঢল সিঙ্গুর উৎসবে

যতদূর চোখ যায় শুধু কালো মাথা! তখন বেলা সাড়ে ১২টা। ভাদ্রের ঠা ঠা রোদ মাথায় নিয়ে তখন থেকেই ভিড় জমছিল। ৮০ ফুট লম্বা ৬০ ফুট চওড়া উৎসব-মঞ্চের বাঁ দিক, ডান দিক— ছবিটা একই রকম। তৃণমূল নেতারা ভিড় মাপার চেষ্টা করছিলেন।

উৎসব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে মহিলাদের শাঁখ-কাঁসর ঘণ্টা-উলুধ্বনি।

উৎসব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে মহিলাদের শাঁখ-কাঁসর ঘণ্টা-উলুধ্বনি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

যতদূর চোখ যায় শুধু কালো মাথা!

তখন বেলা সাড়ে ১২টা। ভাদ্রের ঠা ঠা রোদ মাথায় নিয়ে তখন থেকেই ভিড় জমছিল। ৮০ ফুট লম্বা ৬০ ফুট চওড়া উৎসব-মঞ্চের বাঁ দিক, ডান দিক— ছবিটা একই রকম। তৃণমূল নেতারা ভিড় মাপার চেষ্টা করছিলেন। এক জন বললেন, ‘‘মঞ্চের বাঁ দিকের ভিড় জয়মোল্লায় হিমাদ্রি কেমিক্যালস ছাড়িয়ে গিয়েছে!’’ আর এক তৃণমূল নেতা ডান দিকে আঙুল তুলে, ‘‘ও দিকের ভিড়টা আরও বেশি। বড়া এলাকা পেরিয়ে গিয়েছে!’’

‘সিঙ্গুর উৎসবে’ যে এমন ভিড় হবে, তার আগাম আশঙ্কা পুলিশ প্রশাসনের ছিলই। তাই বুধবার সকাল থেকেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধনেখালির মহেশ্বরপুর মোড় থেকে ডানকুনি পর্যন্ত দু’টি ‘লেন’ই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দু’জায়গা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় দিল্লি রোড দিয়ে। দিল্লি রোড আবার চার ‘লেন’ হচ্ছে। ফলে, ওই রাস্তায় যানজট হয়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। রাত পৌনে ৯টা নাগাদ অবশ্য দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কলকাতামুখী ‘লেন’ দিয়ে দু’দিকের গাড়ি চলাচল শুরু হয়।

উপচে পড়া ভিড় সভাস্থলে। বাইরের জায়ান্ট স্ক্রিনে নজর দর্শকদের।

তবে, সভামুখী গাড়িগুলিকে এ দিন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সভামঞ্চের দিকে কিছুটা আসতে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় ঢোকে পৌনে চারটে নাগাদ। তুমুল হইহই। তাতে চাপা পড়ে যায় জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলের মাইক-ঘোষণা। এর পরে মুখ্যমন্ত্রীকে মঞ্চে দেখামাত্র ফের হইহই। সকলেই চাইছিলেন শুরুতেই মমতা কিছু বলুন। জেলাশাসকও তেমন ঘোষণা করে বসেন। কিন্তু তা শোনামাত্র নাকচ করে দেন মমতা।

‘সিঙ্গুর উৎসবে’র শুরুতেই মমতা কিছু চাষির ক্ষতিপূরণের চেক এবং জমির পরচা বিলি করেন। তার পরে তাঁর নির্দেশ, ‘‘এ বার মঞ্চের নীচের ক্যাম্প থেকে পার্থদা (চট্টোপাধ্যায়), বক্সীদা (সুব্রত), অরূপ (বিশ্বাস), ববি (ফিরহাদ হাকিম), শোভন (চট্টোপাধ্যায়), তপন (দাশগুপ্ত) চেক-পরচা বিলি করবেন। প্রয়োজনে রাত পর্যন্ত ফ্লাড-লাইট জ্বেলে এ দিনই বিলি শেষ হবে।’’ মমতার নির্দেশমতো পার্থবাবু, সুব্রতবাবুরা নীচে নেমে যান। তার পরে আরও চমক!

লোকে এতদিন টেলি বা ভিডিও কনফারেন্স দেখেছেন। কিন্তু মঞ্চ থেকে মাইক হাতে নিয়েও যে কনফারেন্স করা যায়, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সিঙ্গুরে তা দেখালেন। টেট নিয়ে হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মমতা মাইকে ‘পার্থদা’কে খুঁজতে থাকেন। মঞ্চে হুটোপাটি শুরু হয়ে যায়। মমতা বলতে থাকেন, ‘‘পার্থদাকে একটা মাইক দেওয়া হোক।’’

সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে মায়ের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিল ছোট্ট পায়েল বাগ। এ দিন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পায়েল। বুধবার।

পার্থবাবু তখন মঞ্চের নীচে। মমতার প্রশ্ন, ‘‘পার্থদা আপনি কোথায়?’’

নীচ থেকে মাইকে পার্থবাবু, ‘‘আমি এখানে।’’ চলতে থাকে কথোপকথন। বিলকুল কনফারেন্সের ধাঁচে।

মমতার প্রশ্ন, ‘‘টেটের রেজাল্ট বেরিয়েছে?’’

পার্থবাবুর উত্তর, ‘‘হ্যাঁ। ইন্টারনেটে দেওয়া হয়েছে।’’

উত্তর শুনে মমতা সে কথা মাইকে ঘোষণা করে দেন। এর পরে মমতার অনুরোধে প্রতুল মুখোপাধ্যায় গান শুরু করেন। কবীর সুমনও গান শোনান। তাঁর সঙ্গে গলা মেলান বেচারাম মান্নাও। কবির সুমন মনে করিয়ে দেন, আন্দোলনের দিনগুলিতে তিনি বহু সময়ই বেচারামবাবুকে সঙ্গে নিয়ে গান গেয়েছেন। এর পরেই মেধা পটেকর সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের কথা তোলেন। অধীর আগ্রহে উপস্থিত জনতা অপেক্ষা করেছিলেন, মমতা কখন বলবেন। তাঁদের অপেক্ষা আর দীর্ঘায়িত করেননি মুখ্যমন্ত্রী।

পুজোর মুখে সিঙ্গুর যেন নতুন পার্বণ দেখল। মমতাও উৎসবের কথা মনে করিয়ে দেন। তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিন্তু রোদ যেমন ভিড়কে নড়াতে পারেনি, বৃষ্টিও পারল না। তার মধ্যেই কলকাতামুখী ‘লেন’ আচমকা একটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে পড়ে। মমতা মঞ্চ থেকেই তা ঠিকমতো পার করিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশকে।

মমতা ফিরে যান সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। তখনও ভিড় নড়েনি একচুল। যা দেখে হুগলির এক তৃণমূল নেতার দাবি, জেলার কোনও অনুষ্ঠানে এত ভিড় এই প্রথম।

ছবি: সুমন বল্লভ, দীপঙ্কর দে এবং সুদীপ্ত ভৌমিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Singur Utsav mamata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE