Advertisement
E-Paper

খালের ধারে ঠান্ডায় শুয়ে ঘুমোচ্ছিল দু’জন

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা বাজে। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৪-এ বেডে অকাতরে ঘুমোচ্ছিল তিনটি শিশু। শিশুবিভাগে ভর্তি অন্য বাচ্চাদের পাশে মা-বাবা থাকলেও ওদের পাশে কেউ নেই। তবে নার্সরাই এখন অভিভাবকের ভূমিকায়।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৬
এখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে তিন শিশু। নিজস্ব চিত্র।

এখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে তিন শিশু। নিজস্ব চিত্র।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা বাজে। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৪-এ বেডে অকাতরে ঘুমোচ্ছিল তিনটি শিশু। শিশুবিভাগে ভর্তি অন্য বাচ্চাদের পাশে মা-বাবা থাকলেও ওদের পাশে কেউ নেই। তবে নার্সরাই এখন অভিভাবকের ভূমিকায়।

মঙ্গলবার রাতে ফলতার খাল পাড় থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের ঠাঁই হয়েছে জেলা হাসপাতালেই। রয়েছে দু’টি পুত্রসন্তান ও একটি কন্যাসন্তান। তাদের বয়স মেরেকেটে সাড়ে তিন মাস। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পিনাকীরঞ্জন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘ওদের শরীরে কোনও সমস্যা নেই। তিন জনের পর্যবেক্ষণে রাখার পাশাপাশি বেবিফুড খাওয়ানো হচ্ছে।’’

কোথায় ও কী ভাবে তিনটি শিশু মিলল?

ফলতার হরিণডাঙা মোড় থেকে ডায়মন্ড হারবারের সাধুরহাট মোড় পর্যন্ত বড় খাল রয়েছে। ওই খাল পাড়ের রাস্তা কিছুটা ইটপাতা ও কিছুটা মাটির রাস্তা। আলোহীন ওই নির্জন গাছগাছালি ঘেরা বেহাল রাস্তায় দিনে দুপুরে চলাফেরা করতে অনেক সময়ে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়তে হয়েছে অনেকের। প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওই রাস্তায় দিনের বেলায় ওখানে মদ-গাঁজার আসর বসে। তাই বিশেষত ছাত্রছাত্রী, মহিলারা এড়িয়ে চলেন ওই পথ।

ওই খাল পাড়ের পাশের তেঁতুলিয়া হালদার পাড়ার তিন তরুণ মাছ ধরতে মঙ্গলবার সন্ধে ৭টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন। যাওয়ার পথে তাঁরা শিশু পড়ে থাকতে দেখেননি। তাঁদের দাবি, ঘণ্টাখানেক পরে বাড়ি ফেরার সময়ে তারা দেখেন লাল রঙের ওড়না জড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে দু’টি শিশু। দিব্যি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে তারা। অন্য একটি শিশু খালের ঢাল দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে গড়িয়ে পড়ছিল নীচের দিকে। চিৎকার জোড়েন সকলে। প্রায় ৬০ ফুট চওড়া খালের উল্টো দিকে চাঁদপালা গ্রামের খাল পাড়ে কয়েকটি পরিবার চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসেন। ওই তিন তরুণ শিশুদের কোলে তুলে নিয়ে কোমর সমান জল খাল পার হয়ে যান চাঁদপালার বাসিন্দা হাজিরুন বিবির বাড়িতে। সেখানে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের হাত-পা মুছিয়ে গরম কাপড়ে জড়ানো হয়। দোকান থেকে দুধ এনে গরম করে খাওয়ানো হয়।

ওই তিন তরুণ বাপন হালদার, রাকেশ হালদার, উজ্জ্বল কয়ালরা জানান, ‘‘একটি বাচ্চা জেগে ছিল। সে কাঁদছিল বলেই টের পাই।’’

শিশুদের ওই বাড়িতে রেখে এলাকার প্রায় ৩-৪টি গ্রামের মানুষ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কারও কোনও হদিস পাননি। পরে পুলিশকে জানালে শিশুদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সন্ধে ৭টা নাগাদ দু’টি বাইকে চেপে ৪ অপরিচিত যুবককে তাঁরা দ্রুত গতিতে যেতে দেখেছেন ওই এলাকা দিয়ে। তাঁদের অনুমান, এলাকার কোনও নার্সিংহোমে শিশু তিনটি পাচারের জন্য মজুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু দোস্তপুরের একটি হোমের আবাসিকদের সরিয়ে ফেলার পর পুলিশের নজরদারি চলছে। পুলিশের জালে পড়ার ভয়ে শিশুদের এখানে এনে ফেলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিনটি শিশু চাইল্ডলাইনের হাতে তুলে্ দেওয়া হয়েছে। তারা কোথা থেকে এল বা কোনও হোমে ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Investigation inborn trafficking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy