Advertisement
E-Paper

আড়াই বছরের পুত্রের দেহ নিজের সঙ্গে বেঁধে গলায় দড়ি কসবার সোমনাথের, সম্পত্তি-বিবাদ? আটক ৩

সুমিত্রার আত্মীয়দের দাবি, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণেই শিশুসন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা-মা। ঘরের দেওয়ালে লেখা সুইসাইড নোটও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:৩০
শিশুপুত্রের সঙ্গে সোমনাথ রায় (ডান দিকে)।

শিশুপুত্রের সঙ্গে সোমনাথ রায় (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

আড়াই বছরের পুত্রের দেহ নিজের সঙ্গে বেঁধেছেন। তার পরে নিজেও গলায় দড়ি দিয়েছেন ৪০ বছরের সোমনাথ রায়। গলায় দড়ি দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, ৩৫ বছরের সুমিত্রা রায়ও। কেন এই চরম পদক্ষেপ করলেন কসবার হালতুর দম্পতি? সুমিত্রার আত্মীয়দের দাবি, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণেই শিশুসন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা-মা। ঘরের দেওয়ালে লেখা সুইসাইড নোটও সেই ইঙ্গিতই করছে। সেখানেও সম্পত্তি নিয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ করা রয়েছে। যাঁদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, সোমনাথের সেই মামা, মামি এবং মাসিকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। তাদের বৈজ্ঞানিক দলের সদস্যেরা (সায়েন্টিফিক উইং) এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কসবায় সোমনাথের বাড়িতে এসেছেন স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খানও।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়িতে পরিবারের তিন মহিলাকে ‘খুন’ করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে অভিষিক্তার মোড়ে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিলেন প্রণয় দে, প্রসূন দে। প্রণয় সঙ্গে নিয়েছিলেন নিজের কিশোর-পুত্র প্রতীপ দে-কে। তাঁরা দাবি করেছিলেন, আর্থিক সঙ্কটের কারণেই আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। কসবাকাণ্ডে সেই ট্যাংরার ঘটনার ছায়া থাকলেও কারণ এক নয় বলে দাবি করেছেন সুমিত্রার বাপের বাড়ির লোকজন। তাঁদের দাবি, সম্পত্তির কারণেই আত্মহত্যা করেছেন স্বামী-স্ত্রী। সঙ্গে নিয়েছেন সন্তানকেও। সুমিত্রার বাবা হাউহাউ করে কেঁদে বলেন, ‘‘অনেক বার বলেছিলাম জায়গা বিক্রি করে দিয়ে চলে আয়। কোনও বাড়িতে গিয়ে ভাড়া থাক। শোনেনি।’’ কেন এই পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি? বৃদ্ধের কথায়, ‘‘সোমনাথের বাবা-মা থাকার জন্য জমি দিয়ে গিয়েছিলেন। মামা-মামি এসে দাবি করেন, ওই জমি ভাগ করতে হবে। তিন-চার বছর ধরে মেয়ে-জামাইয়ের উপর অত্যাচার করত মামা-মামি।’’ বৃদ্ধ জানালেন, তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। জামাই অটো চালাতেন। সে সবই লোকে সহ্য করতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের ভালবাসা দেখে লোকে সহ্য করতে পারেনি।’’ তিনি জানিয়েছেন, গত রবিবার, মেয়ে-জামাই নৈহাটির বড়মার মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে তাঁর বাড়িতে প্রসাদও দিয়ে আসেন। সুমিত্রার দিদি দাবি করে বলেন, ‘‘জমির জন্য আমার বোন, বোনের ছেলেকে মেরেছে। অনেক দিন ধরে ঝামেলা।’’

সুমিত্রার পরিবার সোমনাথের মামা-মামির দিকে আঙুল তুললেও স্থানীয়দের একাংশ আবার দাবি করেছেন, তাঁর বাড়িতে পাওনাদারও আসত। তাঁরা শুনেছেন, তবে দেখেননি। এক প্রতিবেশী শ্যামলী দাস বলেন, ‘‘আমি শুনেছি পাওনাদারেরা আসত। এই কথা ওঁর মামাই বলেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, পাওনাদার এসে টাকা চাইতেন।’’ শ্যামলীর আরও দাবি, সোমনাথ মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বললেও সুমিত্রা কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। শিশুটিকেও পাড়ার কারও সঙ্গে মিশতে দিতেন না। তিনি জানিয়েছেন, সোমনাথের মামা-মামি কলকাতা পুলিশে চাকরি করেন। তাঁর মাসি পেনশনভোগী। তিনি সোমনাথের কাছেই থাকতেন। সোমনাথ মাসির পেনশন নিতেন এবং তাঁকে দেখাশোনা করতেন। তাঁর নিজের অটো ছিল। তবে নিজে তিনি সেই অটো চালাতেন না। চালানোর জন্য লোক নিয়োগ করেছিলেন। সারা দিন সোমনাথ ঘরেই থাকতেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দে পরিবারের সদস্যেরাও পাড়ায় কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না। বন্ধুবান্ধবও তেমন ছিল না বলে দাবি পরিচিতদের। সোমনাথ এবং তাঁর স্ত্রী-ও মেলামেশা করতেন না বলেই দাবি স্থানীয়দের। সারা দিন সোমনাথ বাড়ি বসে কী করতেন, তা-ও জানেন না বলেই দাবি করেছেন প্রতিবেশী শ্যামলী। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সম্প্রতি মেলামেশা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাঁরা। ঘরের জানলাও খুলতেন না। পাওনাদারের চাপে না কি সম্পত্তি নিয়ে অশান্তির ভয়ে? গত কয়েক দিন ধরে কি ঘরের জানলা বন্ধ করে আত্মহত্যারই ছক কষছিলেন রায় দম্পতি? সবই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Property Dispute kasba Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy