Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক তালে-ছন্দে মিলে গেল মাটি ও আকাশ

নীলিমায় পৃথিবী আর আকাশের মিলন ধরা পড়েছিল কবির চোখে। রবিবার মাটি আর আকাশকে এক ছন্দে, একই তালে মিলিয়ে দিল যোগ। শুরু হল ঘড়ির কাঁটা সকাল ৭টার ঘর ছুঁতেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সাংসদ থেকে সেনাবাহিনীর জওয়ান কিংবা আম-আদমি, বাদ গেলেন না কেউই। পা তুললেন একই তালে। ঘাড় বাঁকালেন এক ছন্দে। বসে বা শুয়েও যোগাভ্যাস করলেন অনেকে।

যোগচর্চা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের। রবিবার সল্টলেকে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

যোগচর্চা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের। রবিবার সল্টলেকে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

নীলিমায় পৃথিবী আর আকাশের মিলন ধরা পড়েছিল কবির চোখে। রবিবার মাটি আর আকাশকে এক ছন্দে, একই তালে মিলিয়ে দিল যোগ।

শুরু হল ঘড়ির কাঁটা সকাল ৭টার ঘর ছুঁতেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সাংসদ থেকে সেনাবাহিনীর জওয়ান কিংবা আম-আদমি, বাদ গেলেন না কেউই। পা তুললেন একই তালে। ঘাড় বাঁকালেন এক ছন্দে। বসে বা শুয়েও যোগাভ্যাস করলেন অনেকে। বাদ গেলেন না এক শহর থেকে অন্য শহরে উড়ে যাওয়া যাত্রীরাও। মাঝ-আকাশে বিমানে বসেই বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মেনে তাঁরাও যোগ অনুশীলন করেছেন। সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা জওয়ানেরাও যোগাভ্যাস করেছেন। দার্জিলিঙের ভানু ভবনে একই সঙ্গে যোগাভ্যাস করতে দেখা যায় মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গ এবং পাহাড়ের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে।

রবিবার, আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজ্যে এসেছিলেন তিন জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী— তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। মন্ত্রীদের সঙ্গে রাজ্যে বিজেপির একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য এবং লোকসভার ভোটে বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন বিভিন্ন শিবিরে।

রবিশঙ্কর ছিলেন সল্টলেকের সাই (স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া)-এর মাঠে। সকাল ৭টাতেই সেখানে শুরু হয়ে যায় শারীরচর্চা। কর্ডলেস মাইক হাতে যোগ প্রশিক্ষক উৎপল সাহার নির্দেশ অনুযায়ী শিবিরে যোগ দেওয়া বৃদ্ধ থেকে শিশু, ছাত্রী থেকে গৃহবধূ ঘাড় বাঁকিয়ে, এক পা
তুলে যোগাভ্যাস করেন। মাটির উপরে চিত বা উপুড় হয়েও চলে কসরত। তাতে সামিল হন রবিশঙ্কর স্বয়ং। পিছনে ছিলেন বিজেপি বিধায়ক শমীকবাবু এবং বিজেপি নেতা জয়বাবু।

১৯৭৪ সালে, রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বিহারের বাঁকিপুর জেলে থাকাকালীন প্রথম যোগাসন অভ্যাস শুরু করেন রবিশঙ্কর। তার পর থেকে নিয়মিত চর্চার চেষ্টা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অবসাদ কাটাতে, মানসিক শান্তি আনতে যোগাসনের প্রভাব অপরিসীম।’’ প্রসঙ্গ ওঠে পাকিস্তানের। আন্তর্জাতিক যোগাসন দিবস উদ্‌যাপিত হচ্ছে প্রায় ১৮০টি দেশে। তার মধ্যে মুসলিম দেশ ৪০টিরও বেশি। কিন্তু পাকিস্তান পিছিয়ে গিয়েছে শেষ মূহূর্তে। পড়শি দেশের প্রতি রবিশঙ্করের পরামর্শ, ‘‘যোগাসন শুরু করলে সে-দেশে শান্তি ফিরে আসবে। আশা করি, এই সত্য উপলব্ধি করবেন তাঁরা।’’

এ দেশে, এই বাংলায় সাধারণ মানুষও যে যোগের উপযোগিতা উপলব্ধি করছেন, এ দিন তার প্রমাণ মিলেছে ভূরি ভূরি। কাদাপাড়ার একটি আবাসনের বাসিন্দা দিলীপ মুরারকা নিজের আবাসনেই অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাভ্যাস করেন। নিজেদের প্রশিক্ষককে নিয়েই ২২ জন মিলে চলে আসেন সাই-এর মাঠে। ছিলেন মানিকতলার গৃহবধূ মীতা নাগ, বারাসতের ছাত্রী দীপ্তি দেবনাথ, পিকনিক গার্ডেন্সের ছাত্র বুবাই অধিকারীর মতো অনেকেই।

সকাল ৬টা ২০ নাগাদ বার্নপুরের বারি ময়দানে পতঞ্জলি যোগ সংস্থার শিবিরে পৌঁছন বাবুল সুপ্রিয়। প্রদীপ জ্বেলে শিবিরের সূচনা করে যোগ দেন যোগাভ্যাসে। বিকেলে তিনি যান আসানসোলের পোলো মাঠে। বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর চেষ্টায় রাষ্ট্রপুঞ্জ এই দিনটিকে বিশ্ব যোগ দিবসের স্বীকৃতি করেছে। যে-কোনও কাজে অধ্যবসায় আর নিষ্ঠা বজায় রাখতে ভাল ফল দেবে যোগ। মানুষের মধ্যে উৎসাহ দেখে ভাল লাগছে।’’

অন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন ছিলেন খড়্গপুর আইআইটি-র কালিদাস প্রেক্ষাগৃহে। তার আগে যান বেনাপুরের গোশালায় এক যোগ শিবিরে। সেখানে সকলের সঙ্গে যোগাসনও করেন তিনি। সেরসা স্টেডিয়ামেও এক শিবিরে যোগ দেন মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, বাংলার সন্তান ঋষি অরবিন্দ যোগকে তুলে ধরেছিলেন। তবে ভারতের ঘরে ঘরে যোগ পৌঁছে দেন বাবা রামদেবই। হর্ষবর্ধনের কথায়, ‘‘যোগ আমাদের মন ভাল করে তুলতে সাহায্য করে।’’

এ দিন আইআইটি-র জিমখানায় আয়োজিত এক যোগ শিবিরে ৪০০ শিক্ষক ও পড়ুয়া যোগ দেন। শিবিরে যোগদানকারী গবেষক প্রণব মাইতি বলেন, “কয়েক দিন ধরে যোগ
শিবিরে যোগ দিয়ে ফল বুঝতে
পারছি। যোগাসন মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করছে। তাই যোগচর্চা চালিয়ে যাব।”

পিছিয়ে নেই পাহাড়ও। মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপির সঙ্গে মোর্চার রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও জল্পনা রয়েছে। এ দিন
অবশ্য জিটিএ-র যোগ শিবিরে গুরুঙ্গের সঙ্গে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ অহলুওয়ালিয়াকে একসঙ্গে যোগ করতে দেখা গেল। সেখানে রাজনীতি বা রাজনৈতিক আলোচনার কোনও অবকাশ ছিল না। গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘সারা দেশে বিশ্ব যোগ দিবস পালিত হচ্ছে। দার্জিলিঙেও সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জিটিএ।’’ উত্তরবঙ্গের সেনা ছাউনি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সব জায়গাতেই এ দিন শিবির করে যোগাভ্যাসের আয়োজন ছিল।

সেনাবাহিনী জানায়, এ দিন রাজ্যের বিভিন্ন সেনা ছাউনিতে যোগ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রায় দু’হাজার জওয়ান। কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে হাজির ছিলেন এনসিসি-র পাঁচ হাজার সদস্য। রাজ্যের অন্যত্রও এনসিসি ক্যাডেটরা যোগাভ্যাস করেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন অফিসেও যোগ শিবির হয়েছে। বাদ যায়নি বিভিন্ন সীমান্ত চৌকিও।

মাঝ-আকাশে যোগাভ্যাসের আয়োজন করেছিল বিমান সংস্থা স্পাইসজেট। বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মেনে তাদের যাত্রীদের বিমানেই যোগ প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE