E-Paper

বাজেটে চমক কল্যাণীর তিন পুজোর

নদিয়ার এই শহরের তিনটি বড় বাজেটের দুর্গাপুজোয় চোখ ধাঁধানো জেল্লায় তাক লেগেছে অনেকেরই। এবং একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, এই বিপুল খরচের উৎস নিয়ে।

অমিত মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৫৫
কল্যাণী আইটিআই মোড়ে লুমিনাস ক্লাবের পুজো মণ্ডপে ভিড়।

কল্যাণী আইটিআই মোড়ে লুমিনাস ক্লাবের পুজো মণ্ডপে ভিড়। ছবি: অমিত মণ্ডল।

এ যেন অন্য ‘শ্রীভূমি’। তা-ও আবার একটি নয়, তিনটি। সে সব পুজো সেজে উঠেছে দ্বিতীয়ার মধ্যে এবং পুজো দেখতে রাস্তায় জনস্রোতও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে কলকাতা নয়, কল্যাণীতে।

নদিয়ার এই শহরের তিনটি বড় বাজেটের দুর্গাপুজোয় চোখ ধাঁধানো জেল্লায় তাক লেগেছে অনেকেরই। এবং একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, এই বিপুল খরচের উৎস নিয়ে। তিনটির মধ্যে দু’টি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তৃণমূল দুই নেতার নাম। যেমন, কল্যাণীর আইটিআই মোড়ের লুমিনাস ক্লাবের পুজো। এই পুজো কল্যাণী শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কুর পুজো বলেই পরিচিত। রথতলা সর্বজনীনও কল্যাণী শহর তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি বিপ্লব দে ওরফে সজলের পুজো বলে পরিচিত। তবে এ-নাইন স্কোয়ার পার্কের পুজোটি এখনও কোনও বিশেষ নেতার পুজো বলে চিহ্নিত হয়নি। লুমিনাস ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, মণ্ডপ করা হয়েছে চিনের ম্যাকাউ ‘গ্র্যান্ড লিসবোয়া’র আদলে। প্রতিমা সাজানো হয়েছে ৬৫ কেজি সোনা ও হিরের অলঙ্কার দিয়ে। তাঁদের দাবি, সব মিলিয়ে পুজোর বাজেট প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। সেই টাকা কোথা থেকে আসছে?

পুজো কমিটির দাবি, প্রতিমার গয়না দিয়েছে একটি অলঙ্কার সংস্থা। তাদের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হয়েছে। ওই সংস্থাই আবার তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিচ্ছে। অন্য নানা সংস্থাও তাদের পুজোয় ‘স্পনসর’ করেছে। তা ছাড়া লুমিনাসের পুজোর সঙ্গে প্রথম থেকেই আছে আইটিআই মোড়ের ব্যবসায়ী সমিতি। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য তথা তৃণমূল নেতা অরূপ বলছেন, “পুজোর বাজেটের অধিকাংশটা বিভিন্ন সংস্থার ‘স্পনসর’ থেকেই আসে।” এই পুজোর আলোর ঝলকানি এবং ড্রোন ক্যামেরায় তোলা সেই দৃশ্য এর মধ্যেই সমাজমাধ্যমে ‘ভাইরাল’। রথতলার পুজোমণ্ডপ করা হয়েছে বৃন্দাবনের চন্দ্রোদয় মন্দিরের আদলে। উদ্যোক্তাদের দাবি, পুজোর বাজেট প্রায় ৫০ লক্ষ। তাঁদের আরও দাবি, টাকার একটা বড় অংশ আসে পুজো কমিটিকে সহযোগিতা করার জন্য কাউন্টার থেকে সদস্যপদ বা কুপন বিক্রি করে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীও ‘স্পনসর’ করেন। পুজো কমিটিতে প্রায় এক হাজার সদস্য আছেন। তাঁরা কেউ দুই, কেউ পাঁচ, আবার কেউ দশ হাজার টাকা করেও চাঁদা দেন।

কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি ও পুজো কমিটির সভাপতি বিপ্লব দে বলছেন, “আমাদের পুজোর খরচ এই ভাবেই উঠে যায়।” এ-নাইন স্কোয়ার পার্কের পুজোর মণ্ডপ হয়েছে উত্তরাখণ্ডের চারধামের আদলে। উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁদের এই বছরের বাজেট প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। উদ্যোক্তাদের দাবি, কল্যাণী মেন স্টেশন সংলগ্ন হওয়ায় সেখানকার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও নার্সিংহোম এই পুজো ‘স্পনসর’ করে। তা ছাড়া সদস্যের অনেকেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এলাকায় প্রায় ৬০০ পরিবারও পুজোয় চাঁদা দেয়। কল্যাণী পুরসভায় তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি তথা পুজো কমিটির সদস্য শ্রীমন্ত চক্রবর্তী বলেন, “এই সব মিলিয়েই খরচ উঠে যায়।”

তবে পুজোর জাঁক দেখে শহরের বাসিন্দাদের অনেকেরই সন্দেহ, উদ্যোক্তারা যা জানাচ্ছেন প্রকৃত বাজেট তার চেয়ে অনেকটাই বেশি। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতায় যেমন সুরুচি সঙ্ঘ থেকে নাকতলা সর্বজনীনে রাজনৈতিক প্রভাবেই বাজেট বেড়েছে, এখানেও তেমনটা হয়নি তো?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2023 Kalyani

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy