Advertisement
E-Paper

‘রাস্তায় অস্ত্র রেখে যান, পুলিশ নিয়ে যাবে’, আমডাঙাকে আহ্বান জ্যোতিপ্রিয়র

সোমবার আমডাঙা থানার সামনে সভা করবে সিপিএম। প্রধান বক্তা সাংসদ দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:০৬
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

দুঃস্বপ্নের রাতটা এসেছিল দিন পাঁচেক আগে। বোমা-গুলি আর ভয়াবহ হিংসায় আমডাঙা রক্তাক্ত হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। বুধবার থেকেই ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা তারাবেড়িয়া, বোদাই আর মরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। রোজ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। তবু অস্ত্রের ভাঁড়ার যেন ফুরোচ্ছে না। তার মধ্যেই সোমবার আমডাঙায় ঢুকছে সিপিএম নেতৃত্ব। তার আগে উত্তর ২৪ জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হুঁশিয়ারি, ‘‘সিপিএম নেতারা ঢুকছেন ঢুকুন, কিন্তু আমডাঙায় গিয়ে শান্তির কথা ছাড়া অন্য কথা যেন বলবেন না।’’

মঙ্গলবার রাতে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ কর দিয়ে যে ভয়াবহ বোমা-গুলির লড়াই চলেছিল আমডাঙায়, তাতে ২ জনের প্রাণ যায়। জখম হন অন্তত ১০ জন। মৃত ২ জনই তৃণমূল সমর্থক, দাবি শাসক দলের। সিপিএমের অভিযোগ, বোর্ড গঠনের আগে এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করতে হামলা করেছিল তৃণমূলই। নিজেদের বোমা-গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে ২ তৃণমূল সমর্থকের। রাজ্য স্তরের সিপিএম নেতারাও বলছেন, ‘প্রাণহানিটা সেমসাইড’। অর্থাৎ তৃণমূলের অস্ত্রেই তৃণমূল সমর্থকদের মৃত্যু হয়েছে।

সিপিএমের এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বললেন, ‘‘সিপিএম নেতারা একটু অন্তত সত্যি কথাটা বলতে শিখুন। তারাবেড়িয়া, বোদাই আর মরিচা— এই তিনটে অঞ্চলে কী পরিমাণ অস্ত্র সিপিএম মজুত করেছে, তা বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিমরা জানেন না? পুলিশ এলাকায় ঢুকলেই অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। সিপিএমের জাকির বল্লুক আর সাহাবুদ্দিন, এই দুজনের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করা হয়েছে। আর সিপিএম এখন বলছে সেমসাইড!’’

আরও পড়ুন: আগাছা সাফ করতে গিয়ে মিলল প্লাস্টিকে মোড়া ১৪ সদ্যোজাতর দেহ, হরিদেবপুর তোলপাড়

সোমবার আমডাঙা থানার সামনে সভা করবে সিপিএম। প্রধান বক্তা সাংসদ দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র রায়গঞ্জ থেকে রবিবার রাতে কলকাতায় ফেরার কথা সেলিমের। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে হিংসা ছড়িয়েছে সেলিমের নির্বাচনী ক্ষেত্রের বিভিন্ন এলাকাতেও। ইসলামপুরের গ্রামে গ্রামে আক্রান্ত সিপিএম কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ফাঁকে ফোনে মহম্মদ সেলিম বললেন, ‘‘সোমবার আমডাঙা যাচ্ছি। পুলিশকে বলব অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের ধরুন, অস্ত্র উদ্ধার করুন এবং এলাকায় শান্তি ফেরান।’’ শুধু আমডাঙায় নয়, গোটা রাজ্যে তৃণমূল সন্ত্রাস করছে বলে সেলিমের দাবি। পুলিশের সাহায্য নিয়েই তৃণমূল এ সব করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আমডাঙার সভা থেকে সোমবার তাই মূলত পুলিশকেই বার্তা দেওয়া হবে বলে সিপিএম সাংসদের ইঙ্গিত।

আমডাঙায় সিপিএমের কর্মসূচি প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গলায় অবশ্য কটাক্ষের সুর। রবিবার তিনি বললেন, ‘‘যান না আমডাঙায়, আমরা তো চাইছি যান। সেলিম একা কেন, বিমানবাবুকেও নিয়ে যান। সবাই মিলে যান। শান্তিতে সভা করুন। নিরাপদে ফিরেও আসুন।’’

এভাবেই ঘরের উঠোনে পড়ে ছিল ফাটা এবং না-ফাটা বোমা। ফাইল চিত্র।

এই ‘নিরাপদে ফিরেও আসুন’ কথাটায় কি কোনও ইঙ্গিত রয়েছে? আমডাঙায় গেলে কি নিরাপদে ফিরতে পারবেন না সিপিএম নেতারা? এমনই কি বোঝানোর চেষ্টা হল? মন্ত্রী আর ভাঙলেন না। বললেন, ‘‘আমরা চাইছি আমডাঙায় অবিলম্বে শান্তি ফিরুক। অশান্তি অবিলম্বে বন্ধ হোক।’’ সে প্রসঙ্গেই মন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি, ‘‘সিপিএম নেতাদের বলছি, আমডাঙায় গিয়ে শান্তির কথা বলুন। এলাকার যে সিপিএম নেতারা অশান্তি ছড়াচ্ছেন, তাঁদের নিরস্ত করুন।’’

আরও পড়ুন: বাম-কংগ্রেসকে কাছে টানতে চাইছেন দিলীপ

সিপিএমের ‘আমডাঙা চলো’র আগের দিন জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলিশকেও বার্তা দিয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি, অবিলম্বে সমস্ত অস্ত্র উদ্ধার করুন। এলাকায় বিপুল পরিমাণ বোমা-গুলি মজুত হয়েছে। সে সব খুঁজে বার করুন। খুনিদের খুঁজে বার করে গ্রেফতার করুন।’’

আমডাঙাকে এ দিন ‘দ্বিতীয় শাসন’ আখ্যা দিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘শাসনে ছিল মজিদ মাস্টার। তিনি এখন সব হারিয়ে বারাসতে বসে রয়েছেন। আমডাঙাকে আর এক শাসন বানানোর পরিকল্পনা করেছে সিপিএম। জাকির বল্লুক আর সাহাবুদ্দিন হল এই শাসনের মজিদ মাস্টার।’’

আরও পড়ুন:তৃণমূল নেতা খুনে উত্তেজনা ইটাহারে

৬ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন আমডাঙা। সঙ্গে থাকবেন ফিরহাদ হাকিম এবং জ্যোতিপ্রিয় নিজে। উত্তর ২৪ পরগনার আরও কয়েক জন তৃণমূল বিধায়কও থাকবেন সে দিন। আমডাঙায় সে দিন ‘মহামিছিল’ করবে তৃণমূল। সিপিএম বিপুল অস্ত্র মজুত করেছে বলে তৃণণূল যে দাবি করছে, তা যদি সত্যি হয়, তা হলে এই সময়ে আমডাঙায় মিছিল করা খুব নিরাপদ হবে তৃণমূলের পক্ষে? জ্যোতিপ্রিয় বললেন, ‘‘পুলিশকে তো বলেছি অস্ত্র উদ্ধার করতে। অস্ত্র উদ্ধার করতেই হবে। রোজই পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। রোজই অস্ত্র পাচ্ছেন। কিন্তু আরও অনেক বোমা-গুলি রয়ে গিয়েছে। সবই খুঁজে বার করা দরকার।’’

পুলিশের পক্ষে সর্বত্র পৌঁছে অস্ত্র খুঁজে বার করা যে এই মুহূর্তে কঠিন, তা অবশ্য মন্ত্রী মানছেন। বললেন, ‘‘যাঁদের কাছে অস্ত্র রয়েছে, তাঁদের বলছি, অস্ত্র জমা দিয়ে দিন। পুলিশের কাছে যেতে হবে না। রাস্তায় অস্ত্র রেখে চলে যান। পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতির এই আহ্বানে কি সাড়া দেবে আমডাঙা? অস্ত্র কি রাস্তায় জমা রেখে যাবেন কেউ? স্থানীয় সিপিএম কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন— ‘‘তৃণমূলের লোকজন রাস্তায় অস্ত্র রেখে যাক দেখি। বুঝব জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শান্তি চাইছেন।’’

সিপিএমের সভার আগের দিনেও আমডাঙা থমথমেই অতএব।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর জানতে পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগ।)

Amdanga Violence Trinamool Congress TMC CPM Jyotipriya Mallick Mohammed Salim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy