Advertisement
E-Paper

৩ মেয়র কে কে, গোষ্ঠীর লড়াই চিন্তা তৃণমূলে

ভোটপর্ব মিটল। ফলের নিরিখে প্রশ্নাতীত সাফল্য পেয়েছে দল। এ বার কী! তৃণমূল শিবিরে মূল প্রশ্ন এখন এটাই। কে হবেন বিধাননগর-রাজারহাট ও আসানসোল পুরনিগমের মেয়র? বালির ১৬টি আসনে ১০০% সাফল্য এলেও মেয়র নির্বাচনের প্রশ্নে দলের গোষ্ঠী-রাজনীতি ধামাচাপা দেওয়া যাবে তো?

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৪৩
দলীয় সহকর্মী কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে জয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

দলীয় সহকর্মী কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে জয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ভোটপর্ব মিটল। ফলের নিরিখে প্রশ্নাতীত সাফল্য পেয়েছে দল। এ বার কী! তৃণমূল শিবিরে মূল প্রশ্ন এখন এটাই।

কে হবেন বিধাননগর-রাজারহাট ও আসানসোল পুরনিগমের মেয়র? বালির ১৬টি আসনে ১০০% সাফল্য এলেও মেয়র নির্বাচনের প্রশ্নে দলের গোষ্ঠী-রাজনীতি ধামাচাপা দেওয়া যাবে তো? শনিবারের বারবেলা থেকে এ সব নিয়েই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূল অন্দরে। আসানসোল বা বিধাননগরে মেয়র হওয়ার দৌড়ে কে কতটা এগিয়ে, তা নিয়ে হিসেব কষতে ব্যস্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা। যদিও দলের ছোট-বড় নেতারা প্রকাশ্যে একসুর, ‘‘মেয়র কে হবেন, তা দিদিই ঠিক করবেন।’’

বিধাননগর এত দিন ছিল পুরসভা, রাজারহাট ও নিউটাউন সংযুক্ত হয়ে পুরনিগম হয়েছে। গত বার বিধাননগর পুরসভার প্রধান পদটি মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত ছিল। বিধাননগর জয় করে প্রথমে অনিতা মণ্ডল, পরে তৃণমূল নেত্রীর ঘনিষ্ঠ কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে পুরসভার চেয়ারপার্সন করা হয়। এ বার পুরনিগম হওয়ার পরে মেয়র পদের দৌড়ে কৃষ্ণাদেবী এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন দলের একটি অংশ। তাঁদের মতে, প্রায় চার বছর পুরপ্রধান থাকার সুবাদে এবং কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে মেয়র পদে কৃষ্ণাদেবীর পাল্লাই ভারী।

দলের অন্য একটি অংশ মনে করছেন, বিধাননগরের সঙ্গে এখন রাজারহাট ও নিউটাউনও জুড়েছে। তাই শুধু বিধাননগরকে জানলেই হবে না, রাজারহাট ও নিউটাউনের সমস্যা নিয়ে যিনি ওয়াকিবহাল এমন কাউকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে অবশ্য এগিয়ে রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। বিধাননগরের বাসিন্দা এবং এই নিয়ে একটানা পাঁচ বারের কাউন্সিলর তিনি। এ বারও নিজের ৩১ নম্বর তো বটেই, বিধাননগরের বাকি ১৩টি ওয়ার্ডেই চুটিয়ে প্রচার করেছেন। সেই সঙ্গে রাজারহাটের ১৬টি ও নিউটাউনের ১১টি ওয়ার্ডে দলের প্রচারে ‘সেনাপতি’ ছিলেন সব্যসাচী। তাই তাঁকেই ‘যোগ্য’ বলে মনে করছে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী।

দলে সব্যসাচীর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন অবশ্য মনে করেন, সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া তাপস চট্টোপাধ্যায়কে মেয়র পদে বসানো উচিত। কারণ, তৃণমূলে যোগ

দিয়ে পুরভোটে সাত হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়ে বাজিমাত করেছেন তাপসবাবু। তিনি দীর্ঘদিন রাজারহাট পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। এই সূত্রেই আলোচনায় উঠে আসছে তাপসবাবুর সঙ্গে সব্যসাচীর দীর্ঘদিনের গোষ্ঠীবিরোধের প্রসঙ্গ। সিন্ডিকেট ব্যবসা থেকে শুরু করে এলাকা দখলের রাজনীতিতে সেই গোষ্ঠীবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে বারবার। একাধিক সংঘর্ষও ঘটেছে গত কয়েক বছরে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, পুরভোটের ঠিক আগে বিধানসভায় তাঁর কক্ষে দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে তাপস, সব্যসাচী এবং তাপস-ঘনিষ্ঠ বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুকে নিয়ে বৈঠক করতে হয়েছিল দলের শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কারণ তাঁর আশঙ্কা ছিল, পুরভোটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এলে তা দলের ভাবমূর্তি ম্লান করতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে।

কিন্তু দলেই এখন প্রশ্ন, মেয়র বাছাইয়ের পর্বে বা তার পরে ফের মাথা চাড়া দেবে না তো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?

এই পরিস্থিতিতে বিধাননগরে মেয়র পদ নিয়ে কৃষ্ণা, সব্যসাচী ও তাপস গোষ্ঠীর মধ্যে টানাপড়েন এড়াতে চতুর্থ এক জনের নামও আলোচনায় এসেছে। বিধাননগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতা এ দিন স্পষ্ট বলেন, ‘‘যিনি যা-ই ভাবুন, মেয়র কে হবেন, দলনেত্রীই তা চূড়ান্ত করবেন।’’

জোর জল্পনা আসানসোল নিয়েও। এখানকার প্রাক্তন মেয়র তথা তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় এ বারেও জিতেছেন। তাঁকেই মেয়র করা হতে পারে বলে মনে করছে দলের একটি বড় অংশ। কিন্তু আসানসোলের তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটককে মেয়র করার কথা তুলেছেন দলের অন্য গোষ্ঠী। মলয়বাবু বা তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দু’জনেরই বক্তব্য, এই জয়ের কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলনেত্রীর নির্দেশেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

বিধাননগর, আসানসোলে যেমন মেয়র পদ নিয়ে শিবির রাজনীতি রয়েছে, বালির ছবিটাও খুব আলাদা নয়। বালিতে বিপুল জয়ের মধ্যেও রয়েছে অর্ন্তদ্বন্দ্বের কাঁটা। এখানে তৃণমূল শিবিরে হাওড়ার নেতা তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বা স্থানীয় বিধায়ক সুলতান সিংহের গোষ্ঠী-বিরোধ বহু বার প্রকাশ্যে এসেছে। এ বারের ভোটে বালি বিরোধীশূন্য হলেও, শাসক দলের চিন্তা কাটছে না। কারণ, এখানে মন্ত্রী ও বিধায়কের গোষ্ঠী রাজনৈতিক জমি দখলে রাখতে খুবই তৎপর।

বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন, দলের ‘উজ্জ্বল ভাবমূর্তি’ গড়ে তুলতে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখেন দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সেটাই দেখার।

sanjay singh mayor candidate three mayors tmc group rivalry tmc anxious bidhannagar rajarhat mayor asansole mayor bali howrah mayor mayor clash abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy