রাজধানী দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় দিনের ধর্না কর্মসূচি জারি রয়েছে। সোমবারের পর মঙ্গলবারও রাজধানীর বসন্ত কুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনিতে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন তৃণমূল সাংসদেরা। দলের অভিযোগ, দিল্লি, ওড়িশা, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে ধারাবাহিক ভাবে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। তাঁদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সামাজিক ও পেশাগত ভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এই ঘটনাকে ঘিরেই জাতীয় রাজধানীর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন দুর্গাপুর সফরের আগে দিল্লিতে এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে চাইছেন মমতা।
দলের তরফে জানানো হয়েছে, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে কর্মসূত্রে থাকা বাঙালি শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে নিগৃহীত হচ্ছেন। তাঁদের হাতে সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র, নথিপত্র, আধার ও ভোটার কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ দিয়ে সামাজিক নিপীড়নের শিকার করা হচ্ছে। এই অভিযোগ ঘিরেই মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল থেকে জানানো হয়, “দিল্লির জয় হিন্দ কলোনির বাঙালিদের পাশে রয়েছি আমরা। অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” এই অবস্থান বিক্ষোভে উপস্থিত সাংসদ সাগরিকা ঘোষ, সুখেন্দু শেখর রায়, দোলা সেন ও সাকেত গোখলে। তাঁরা জয় হিন্দ মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স কলোনিতে ২৪ ঘণ্টার ধর্নায় বসে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সরাসরি প্রশ্ন রেখেছেন, “সব নথিপত্র থাকার পরেও কেন বাংলা ভাষাভাষীদের উপর এমন অত্যাচার?”
এদিকে, নবান্ন সূত্রে খবর, সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সাংসদদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, “বাংলাভাষী মানুষের অপমানের বিরুদ্ধে সবার গলা তুলতে হবে। শুধু দিল্লি নয়, সর্বত্র প্রতিবাদে নামতে হবে।” মমতা নিজে ১৬ জুলাই কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন, সেখানে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে জোরালো বার্তা দেওয়া হবে।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে জাতিগত ও ভাষাগত বৈষম্যের প্রশ্ন তুলে বাংলার জনমানসে বিজেপির বিরোধিতা আরও জোরদার করতেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের এই রাজনৈতিক কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তৃণমূলের ধর্না চলবে বলে জানা গিয়েছে। মোদীর বাংলা সফরের আগে এই আন্দোলন রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বৃদ্ধি করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।