E-Paper

পাট্টার জমি রেকর্ডের উদ্যোগ সন্দেশখালিতে, ‘ক্ষত’ মেরামতে দলীয় ভাবে দু’টি তদন্ত কমিটি তৃণমূলের

জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বারাসতে জেলা পরিষদ ভবনে জেলা সভাধিপতির ঘরে সন্দেশখালির এমন গ্রামবাসীদের আসতে বলা হয়েছে, যাঁরা পাট্টা পাওয়া সত্তেও জমির ‘রেকর্ড’ করাতে পারেননি।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৬
tmc

—প্রতীকী ছবি।

অবশেষে ‘সন্দেশখালি ক্ষত’ মেরামতে দলীয় ভাবে দু’টি তদন্ত কমিটি গড়ল জেলা তৃণমূল। একই সঙ্গে ওই এলাকায় যে সব গ্রামবাসী জমির পাট্টা পেলেও এত দিন তা ভূমি দফতরে ‘রেকর্ড’ করা হয়নি, সেই প্রক্রিয়াও শুরু করতে উদ্যোগী হল তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ। সন্দেশখালির ‘বিতর্কিত’ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দাররা ওই সব জমি দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বারাসতে জেলা পরিষদ ভবনে জেলা সভাধিপতির ঘরে সন্দেশখালির এমন গ্রামবাসীদের আসতে বলা হয়েছে, যাঁরা পাট্টা পাওয়া সত্তেও জমির ‘রেকর্ড’ করাতে পারেননি। তাঁদের যাতায়াত ও খাওয়া খরচ জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী নিজেই বহন করবেন বলে জানিয়েছেন।

নারায়ণ বলেন, ‘‘জেলা ভূমি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ওঁদের জমির রেকর্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। জেলাশাসককে নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালির দু’টি ব্লকেই যাব। সেখানে জমি সংক্রান্ত কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। ভূমি দফতর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দফতরের জেলা আধিকারিকেরাও সঙ্গে যাবেন।’’ সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘গত দু’বছর ইজারার টাকা, ভেড়ির টাকা না দেওয়ার অভিযোগ আছে। আমরা বলেছি, ইজারার টাকা ফেরত না পাওয়া মানুষের তালিকা তৈরি করতে। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব দলের।’’

অনেকেই মনে করছেন, সন্দেশখালি-কাণ্ডে মুখ পুড়েছে রাজ্যের শাসক দলের। তাই, ভোটের মুখে ভাবমূর্তি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। উত্তম সর্দার প্রসঙ্গেও নারায়ণ এ দিন জানান, তাঁরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন, উত্তম পাট্টার জমি ইজারা নিয়ে মেছোভেড়ি করে মাছ চাষ করতেন। অনেকেরই সেই জমি ‘রেকর্ড’ হয়নি। অভিযোগ, উত্তম ভূমি দফতরে প্রভাব খাটিয়ে সেই সব জমির ‘রেকর্ড’ করাতে দেননি। ইজারার টাকাও দেননি। নারায়ণের কথায়, ‘‘রেকর্ড করাতে গিয়ে পাট্টাপ্রাপকদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বহু ক্ষেত্রে।’’

সন্দেশখালি-কাণ্ডের তদন্তে তৃণমূল নেতৃত্ব স্থানীয় এবং জেলা পর্যায়ে দু’টি কমিটি গড়েছে। জেলা পর্যায়ের কমিটিতে আছেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। কমিটির এক সদস্য মনে করছেন, ‘‘তদন্তে আরও অনেকের নাম উঠে আসতে পারে।’’

সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গণেশ হালদার, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অষ্টমী সর্দার এবং তৃণমূলের এসসি-এসটি-ওবিসি সেলের নেতা মহেশ্বর সর্দারকে নিয়ে স্থানীয় ভাবে আরও একটি তদন্ত কমিটি গড়েছে দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, উত্তমের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেও টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নারায়ণ বলেন, ‘‘জোর করে জমি দখল করা হয়েছে কি না, ভেড়ির টাকা, ইজারার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে কি না, এ সব শুনে ওঁরা দু’দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর কাছে।’’

বিরোধীরা অবশ্য বিঁধতে ছাড়ছে না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি টিপ্পনী, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা থাকা উচিত। এখন ক্ষতিপূরণ দেবেন!’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কোনও বক্তব্য নেই কেন?’’

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘‘শাহজাহান বাহিনী নারীদের উপর যে অত্যচার করেছে, তা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে তৃণমূল ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sandeshkhali Incident sandeshkhali TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy