Advertisement
E-Paper

নেপথ্যে বালি খাদান, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নিহত ৩

বালি খাদানের দখল নিয়ে এর আগেও খুনোখুনি হয়েছে এই রাজ্যে। এ বার বর্ধমানের খণ্ডঘোষেও খুন হয়ে গেলেন তিন তৃণমূল কর্মী। যদিও শুধু বালি খাদােনর দখল নিয়েই নয়, খাদান সংক্রান্ত আরও নানা তোলাবাজি-দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের ফলেই এই খুন বলে অভিযোগ। রবিবার গভীর রাতে খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে তিন জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, গুলি করে ফেলে রেখে গিয়েছিল আততায়ীরা।

বর্ধমান মেডিক্যালে পড়ে রয়েছে খণ্ডঘোষে নিহত তৃণমূল কর্মী মহম্মদ জামালের দেহ। সোমবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

বর্ধমান মেডিক্যালে পড়ে রয়েছে খণ্ডঘোষে নিহত তৃণমূল কর্মী মহম্মদ জামালের দেহ। সোমবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০৩:২০
Share
Save

বালি খাদানের দখল নিয়ে এর আগেও খুনোখুনি হয়েছে এই রাজ্যে।
এ বার বর্ধমানের খণ্ডঘোষেও খুন হয়ে গেলেন তিন তৃণমূল কর্মী। যদিও শুধু বালি খাদােনর দখল নিয়েই নয়, খাদান সংক্রান্ত আরও নানা তোলাবাজি-দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের ফলেই এই খুন বলে অভিযোগ।
রবিবার গভীর রাতে খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে তিন জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, গুলি করে ফেলে রেখে গিয়েছিল আততায়ীরা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁদের মৃত্যু হয়। নিহতদের অন্যতম মহম্মদ জামালউদ্দিন ওরফে টিপু (৪৪) খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলোক মাজির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বাকি দু’জন শেখ সওকত (৪২) ও শেখ আইনাল লায়েক (৪৪) একই শিবিরের লোক। জামালউদ্দিন ও সওকত, দু’জনেরই বাড়ি ওঁয়ারিতে। আইনালের বাড়ি পাশে উজলপুকুরে।
এই খুনের পিছনে যাঁর হাত আছে বলে নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, তিনি প্রাক্তন ব্লক সভাপতি, বর্তমানে খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন। বছর তিনেক আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁর ডানা ছেঁটে অলোককে ব্লক সভাপতি করা হয়। এখনও সরকারি টাকা নয়ছয় থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে দলীয় কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। অলোক-গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের হাতাহাতি, বোমাবাজিও নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, শুক্রবার মোয়াজ্জেমের ডেরা থেকে বোমা মেলায় পুলিশ তাঁকে আটক করেছিল। মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের হস্তক্ষেপে তিনি ছাড়া পান। শনিবার দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেও মিটমাট করাতে পারেননি স্বপনবাবু। বৈঠকে চেঁচামেচির পরেই জামালউদ্দিনকে খুনের ছক কষা হয় বলে অভিযোগ। অলোকবাবুর দাবি, “মোয়াজ্জেম হোসেনই পরিকল্পনা করে এই খুন করিয়েছে।” যদিও সোমবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। পুলিশ কাউকে ধরেওনি।

অবৈধ বালি খাদানের কর্তৃত্ব নিয়ে রাজনৈতিক খুনোখুনি নতুন কিছু নয়। ২০১০-এর জুনে বীরভূমের লাভপুরে ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক (বর্তমানে তৃণমূলে) মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিন সিপিএম সমর্থক ভাইকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। নেপথ্যে ছিল ময়ূরাক্ষীর বালি খাদান নিয়ে সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের বিবাদ। সে সময়ে দু’পক্ষই বাম শরিক হওয়া সত্ত্বেও যেমন সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি, এ বার একই দলে খুনোখুনি চলছে।

ওঁয়ারি এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, মোয়াজ্জেমের মদতেই স্থানীয় কামালপুর, আওকুল্লা, রূপসা, শশঙ্গা এলাকায় দামোদরের অবৈধ বালি খাদান চলে। কামালপুরের এক বালি মাফিয়ার সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বালি তোলা নিয়ে গোলমালে বছরখানেক আগেও ওই এলাকায় এক জন খুন হয়েছিলেন।

নিহত আইনালের বাড়ি যেখানে, সেই উজলপুকুর গ্রামে প্রায় ছ’মাস ধরে তৃণমূলের একটি কার্যালয় বন্ধ পড়ে ছিল। কারণ সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মোয়াজ্জেম গোষ্ঠীর লোকজন দু’তিন দিন আগে তা খোলেন। তাঁদের দাবি, জামালউদ্দিন দলবল নিয়ে সেখানে গিয়ে বোমাবাজি করে শাসাতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে প্রাণ হারান। বাকি দু’জন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই কার্যালয়ের সামনে দিয়ে বালির ট্রাক যায়। অফিস খুলে রাখা গেলে তার হিসেব রাখা ও ট্রাক ধরে টাকা তোলা সহজ হয়। বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা অমল হালদারের দাবি, ‘‘তৃণমূলের ওই পার্টি অফিস যে গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, তারাই বালি কারবারের টাকা পাবে। তাই সেটির দখল রাখতে এই খুন।’’

নিহতদের বাড়ির লোকজনের দাবি, রাতে মোবাইলে ফোন করে তাঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জামালউদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন বিবির অভিযোগ, “মোয়াজ্জেম প্রায় সময়ই আমার স্বামীকে ফোনে হুমকি দিত। কয়েক দিন আগে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সরাসরি হুমকি দিয়েছিল। রবিবার রাতে ও যখন ভাত খাচ্ছিল, তখনই ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওরা ওকে খুন করে।” একই বক্তব্য সওকতের স্ত্রী এসমতারা বিবি ও আইনাল স্ত্রী হালিমা বিবিরও।

বর্ধমান মেডিক্যালে ময়নাতদন্তের পর শহরের বীরহাটা মোড়ে জেলা তৃণমূল দফতরের কাছে তিন জনের মৃতদেহ জিটি রোডে রেখে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। জেলা সভাপতি স্বপনবাবুর বিরুদ্ধেও স্লোগান ওঠে। তাঁদের ক্ষোভ, স্বপনবাবুর হস্তক্ষেপ না হলে পুলিশ মোয়াজ্জেমকে ছাড়ত না, আর তা হলে এই ঘটনাও ঘটত না। স্বপনবাবু বলেন, “দলের বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক এবং জেলার যুব সভাপতি খোকন দাসকে রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে বলেছি। এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।’’ আধ ঘণ্টা পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।

বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “রাত পর্যন্ত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জেরা করা হচ্ছে।” বারবার চেষ্টা করেও কোনও ভাবে মোয়াজ্জেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

soumen dutta saumen dutta sand pit khandaghosh murder tmc group clash khandaghosh sand pit three murder sand pit occupying abpnewsletters

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।