Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সুধীন-খুন কি রাজনৈতিক, ধন্দ তৃণমূলে

দলের একাংশ দাবি করছে, এলাকায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে দক্ষ সংগঠক সুধীন সোমকে বিজেপি খুন করিয়েছে। কিন্তু আরেকাংশ এখনই একে সরাসরি তৃণমূল-বিজেপি ক্ষমতার লড়াইয়ের ফল বলছেন না। কারণ, রাজনৈতিক সূত্রের খবর, নিহত সুধীন সোমের সঙ্গে খুনে অভিযুক্ত শুভঙ্কর মজুমদারের ব্যক্তিগত সঙ্ঘাতের কথা অনেকেরই জানা ছিল।

সৌমিত্র সিকদার 
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৫
Share: Save:

খুন হয়েছেন তৃণমূলের ওয়ার্ড স্তরের এক যুব নেতা এবং সেই ঘটনায় অভিযুক্ত এলাকার পরিচিত এক বিজেপি কর্মী। তবু ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও একে জোর গলায় ‘রাজনৈতিক খুন’ বলতে পারছে না তৃণমূল। বরঞ্চ এ ব্যাপারে তাদের দলের মধ্যেই পরস্পরবিরোধী মত উঠে এসেছে।

দলের একাংশ দাবি করছে, এলাকায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে দক্ষ সংগঠক সুধীন সোমকে বিজেপি খুন করিয়েছে। কিন্তু আরেকাংশ এখনই একে সরাসরি তৃণমূল-বিজেপি ক্ষমতার লড়াইয়ের ফল বলছেন না। কারণ, রাজনৈতিক সূত্রের খবর, নিহত সুধীন সোমের সঙ্গে খুনে অভিযুক্ত শুভঙ্কর মজুমদারের ব্যক্তিগত সঙ্ঘাতের কথা অনেকেরই জানা ছিল।

সুধীন ছিলেন চাকদহ ১২ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূলের সভাপতি। গত বৃহস্পতিবার তিনি খুন হন। প্রতিবেশী বিজেপি কর্মী শুভঙ্কর মজুমদার তাঁকে কুপিয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পর থেকেই শুভঙ্কর এলাকাছাড়া। তার বাড়িতে উত্তেজিত জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নদিয়ার তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী রত্না ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে এক গদ্দার এ সব করাচ্ছে। কারণ, সুধীন চারটি ওয়ার্ড দেখভাল করতেন। দক্ষ সংগঠক ছিলেন। শহরাঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে বিজেপি তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে।’’ বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার অভিযোগ উড়িয়েছিলেন। শুক্রবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত নিহত সুধীনের সাংগঠনিক ক্ষমতার কথা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বিজেপি এই খুন করিয়েছে তা সরাসরি বলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যদর্শীরা দেখেছেন বিজেপির এক কর্মী খুন করেছে। কিন্তু কী কারণে খুন করেছে বুঝতে পারছি না।’’ অথচ, এই গৌরীশঙ্করই বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের ঘটনাকে প্রকাশ্যে ‘রাজনৈতিক’ বলতে ইতস্তত করেননি। বলেছেন, ‘‘সত্যজিৎকে বিজেপি টার্গেট করেছিল নদিয়ার মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানতে।’’

দিন পাঁচেক সুধীন বাড়িতে ছিলেন না। তারাপীঠে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সাড়ে ৩টে নাগাদ তিনি বাড়ি ফেরেন, তার পর প্রায় দেড়শো মিটার দূরে শুভঙ্করের বাড়িতে যান। কোনও বিষয় দু’জনের গন্ডগোল শুরু হয়। তখনই শুভঙ্কর হেঁসো দিয়ে সুধীনকে কোপায় বলে অভিযোগ। সুধীন কোনও রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পিছু নেয় শুভঙ্কর। কয়েক পা যাওয়ার পর ঘরের সামনেই সুধীন পড়ে যান। শুভঙ্কর তাঁকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। শুভঙ্কর মজুমদার-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন সুধীনের ছেলে সৌমিক সোম।

শুক্রবার কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পর সুধীনের দেহ তাঁর চাকদহের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে ছিলেন মন্ত্রী রত্না ঘোঘ, চাকদহ শহর যুব তৃণমুলের সভাপতি সাধন বিশ্বাস, মনোজ চক্রবর্তী-সহ অন্যরা। সেখান থেকে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে মৃতদেহ দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

সুধীনবাবুর ছেলে সৌমিক এ দিন দাবি করেন, কয়েক দিন আগে তাঁদের বাড়ির সামনে পতাকা টাঙানো নিয়ে অভিযুক্ত শুভঙ্করের সঙ্গে তাঁর বাবার কথা কাটাকাটি হয়। এলাকার অনেকের আবার অভিযোগ, শুভঙ্কর প্রায় প্রতিদিন বাড়ি ফিরে স্ত্রী-কে মারধর করত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE