চাপে পড়ে পাল্টা চাপ দেওয়ার চেষ্টা। আর তাতে উল্টে বেড়ে গেল আরও অস্বস্তি!
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআই কাজ করছে, এমন অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে ধর্না-অবস্থানে বসল, টানা স্লোগান দিল তৃণমূলের প্রমীলা বাহিনী! যার পুরোভাগে মহিলা তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী এবং রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য! অবস্থানে সামিল ছিলেন বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীও। যাঁর স্বামী সমীর (বুয়া) চক্রবর্তীকে জেরা করছে সিবিআই। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠল, সিবিআই এখনও বড় মাপের কোনও তৃণমূল নেতাকে ধরেইনি! যাদের ধরা হয়েছে, তাদের সঙ্গে দলের যোগাযোগ ‘চিনতে’ পারছেন না তৃণমূল নেতারাই! তা হলে আর কীসের প্রতিবাদ? কীসেরই বা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব?
তৃণমূলের এমন কর্মকাণ্ডে স্বভাবতই প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যেমন বলেছেন, “সিবিআই তো বলেনি তৃণমূল দায়ী! কিন্তু তৃণমূল ভয় পাচ্ছে। তদন্ত যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে যেতে হবে। তাই তাঁরা আতঙ্কিত! চোরেদের নেত্রী, খুনিদের নেত্রী, ধর্ষকদের নেত্রীকে আড়াল করতেই বিক্ষোভ করছে তৃণমূল!” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর মন্তব্য, “সিবিআই তদন্ত করছে বলে তৃণমূল কিছু মহিলা পাঠিয়েছে! রাজ্য জুড়ে যখন ধর্ষণ, নারী নিগ্রহ চলেছে, কোথায় ছিলেন এই মহিলা প্রতিবাদীরা?”
সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় টাটার প্রস্তাবিত কারখানার গেটের বাইরে ধর্না-অবস্থান করেই রতন টাটাকে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল। একই পথে এ বার সিবিআইকে চাপে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে অধুনা শাসক দল। কিন্তু সারদায় সিবিআই তদন্তের দিকে যখন সব মহলের নজর, তখন এমন কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে দলের অন্দরেই। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “এই রকম কর্মসূচিতে গোটা দেশেই ভুল বার্তা যেতে পারে। নিজেরাই বলছি আমরা নির্দোষ। যারা ধরা পড়ছে, তাদের সঙ্গে দলের যোগাযোগ মানছি না। আবার আমরাই যাচ্ছি ধর্না দিতে!”
বিরোধী নেতারা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, সিবিআই তদন্ত করছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সেই সময়ে এমন কর্মসূচি নিয়ে সিবিআইয়ের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা প্রকারান্তরে কি সর্বোচ্চ আদালতের প্রতিই অনাস্থা জ্ঞাপন নয়? চন্দ্রিমাদেবী অবশ্য বলেছেন, “সিবিআই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করছে। তদন্তের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআইকে ব্যবহার করছে।” যা শুনে বিরোধীদের প্রশ্ন, তদন্তের অভিমুখ ঘুরে যাচ্ছে, চন্দ্রিমাদেবী জানলেন কী করে!
সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এ দিন কার্যত সিজিও কমপ্লেক্সের মূল ফটক অবরুদ্ধ করেন তৃণমূল সমর্থকেরা। তার জেরে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসের গাড়িই মূল ফটক দিয়ে ঢুকতে-বেরোতে পারেননি। পিছনের একটি দরজা দিয়ে গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা হয়েছিল। ফটক আটকে দফায় দফায় সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বক্তৃতা, কখনও গান গেয়ে গিয়েছেন মহিলারা। সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী যে কোনও ভাবে জড়িত নন, তা-ও বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল যখন সিবিআইয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে, তখন রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে আজ, শুক্রবার রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাও করবে বিজেপি। থানাগুলির ওসি এবং আইসি-দের মাধ্যমে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে দাবিপত্রও দেওয়া হবে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “এনডিএ জমানায় তহলকা-কাণ্ডের প্রতিবাদে মমতা নৈতিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তা হলে এখন সারদা কাণ্ডে ১৭ লক্ষ মানুষ প্রতারিত হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করবেন না কেন? মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর কি তিনি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছেন?” জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “প্রতি বারই ভোট এলে সারদাকে সামনে রেখে কুৎসা করা হয় তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু বরাবরই মানুষ রায় দিয়ে বুঝিয়ে দেন, ওই অপপ্রচার তাঁরা বিশ্বাস করেননি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy