জাতীয় বিরোধী রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিহারের আজকের নির্বাচনী ফলাফল হাত শক্ত করল তৃণমূলের। শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী মাসের গোড়ায়। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ওই অধিবেশনে বিরোধী সমন্বয়ের প্রশ্নে এ বার চালকের আসনে থাকার চেষ্টা করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বিহারে বিপুল পরাজয়ের পরে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের মনোবল তলানিতে থাকবে এটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মধ্যে ও বাইরে ‘জিঞ্জার গোষ্ঠী’-কে (এসপি, আপ, উদ্ধবপন্থী শিবসেনা এমনকি আরজেডি-ও) নেতৃত্ব দিতে তৃণমূল সক্রিয় হবে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক সূত্র।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ বলেন, “২০১১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ছ’বার বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে আমরা বিজেপিকে হারিয়েছি। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, কী ভাবে বিজেপিকে হারাতে হয়। তাঁর তৈরি করা দিশা আমরা বিরোধীদের দেখাব।”
ঘটনা হল, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরযথেষ্ট মধুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, এ বার বিহারের ভোট প্রচারে তাঁর দলের কোনও হেভিওয়েট নেতাকে বিহারে পাঠাননি মমতা।
দলীয় সূত্রের বক্তব্য, তার মূল কারণ ছিল ভোটের মুখে দাঁড়ানো পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল হিসেবে তৃণমূলের শীর্ষ কোনও নেতাকে রাহুলের সঙ্গে এক ফ্রেমে না রাখতে চাওয়া। অথচ গত অগস্ট মাসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তেজস্বী এবং রাহুল অনুরোধ করেন পটনার জনসভায় আসতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যেন আসেন, অভিষেকের মাধ্যমে সেই বার্তা পাঠান তাঁরা। রাহুলের বাংলোয় নৈশাহারও করেন রাহুল, অভিষেক ও অন্যান্য বিরোধী নেতা। তেজস্বীদের প্রস্তাবে অভিষেক প্রাথমিক সম্মতি দিলেও তৃণমূলের এই শীর্ষ দুই নেতা না পাঠিয়ে, ইউসুফ পাঠান এবংললিতেশ ত্রিপাঠীকে পাঠানো হয় পটনায়। দলীয় সূত্রে বলা হয়েছিল, প্রচারের আলো রাহুল গান্ধীই কাড়বেন, সেখানে তৃণমূলের থাকার কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ আর কয়েক মাস পরেই কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলার ভোটে মুখোমুখি হতে হবে তৃণমূলকে।
আজ বিহারের ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরে তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, ‘বিপুল পরাজয় যে ঘটতে চলেছে সেই খবর আগাম পেয়ে গিয়েছিলেন রাহুল। আর সে কারণেই তিনি প্রচারছেড়ে বিদেশে চলে যান, যাতে দায়টা তাঁর নয়, তেজস্বীর ঘাড়ে পড়ে।’
তৃণমূল নেতৃত্ব আরও মনে করেন, ‘কংগ্রেস কার্যত আঞ্চলিক দলই হয়ে গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, কেরলের মতো কয়েকটি রাজ্যের বাইরে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। ফলে অন্যান্য রাজ্যে, যেখানে যে আঞ্চলিক বিরোধী দল শক্তিশালী, তাদের সঙ্গে লড়ার জন্য আসন নিয়ে দরকষাকষি যেন আর না করে কংগ্রেস। বিহারের পরাজয়ের পর এই শিক্ষাটুকু কংগ্রেসের নেওয়া উচিত।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)